ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাপড়ি মেলেছে, সচরাচর দেখা মেলে না-গন্ধ গোলাপের

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ অক্টোবর ২০১৫

পাপড়ি মেলেছে, সচরাচর দেখা মেলে না-গন্ধ গোলাপের

মামুন-অর-রশিদ ॥ গাছটি কে, কবে লাগিয়েছিলেন তা সবার অজানা। অন্তত ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী গাছ। এটি যে ফুলের গাছ তাও জানত না কেউ। তবে হঠাৎ করেই গাছটির মাঝের কাণ্ড ভেদ করে অসংখ্য লতা বেরিয়ে তাতে পাপড়ি মেলেছে অসংখ্য ফুল। পুরো ফোটা ফুলের আকৃতি দেখতে অনেকটাই শিমুলের মতো, তবে সাইজে ছোট। পাঁচটি পাপড়িসমৃদ্ধ এ ফুলের ভেতরে অসংখ্য মঞ্জরি। লতার মতো লম্বা কুশিতে থোকায় থোকায় হাজারও কুঁড়ি। সেই কুঁড়ি ক্রমেই ফুটে লাল শিমুল ফুলের আকার ধারণ করে। শিমুলের পাপড়িগুলো সোজাসাপটা হলেও এ ফুলের পাপড়ির মাথা সাপের মতো ফণা তোলা আকৃতির। স্থানীয়ভাবে এ ফুলকে ‘নাগরাজ’ নাম দেয়া হয়েছে। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলেন, এর নাম ‘নাগলিঙ্গম’। এটি বিরল প্রজাতির। সচরাচর দেখা মেলে না। ঈষৎ গোলাপের মিষ্টি গন্ধসমৃদ্ধ এ ফুলটি ফুটেছে রাজশাহী নগরীর একটি গাছে। এর আগে কেউ জানত না এটি কোন ফুলের গাছ। এখন বিরল প্রজাতির গাছে ফোটা ফুল দৃষ্টি কাড়ছে সবার। গাছটির প্রকৃত নাম জানা না থকলেও দৃষ্টিনন্দন ফুল মুগ্ধ করছে সবাইকে। ফুলের মিষ্টি গন্ধে বিমোহিত হয়েছেন অনেকেই। নগরীর সিপাইপাড়া এলাকায় মহিলা শিল্প প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় এ গাছটির অবস্থান। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, এটি লিগুসিমেনি গোত্র অথবা উপগোত্র সিসিল প্রিনয়েডি হতে পারে। তবে এটি আমাদের এলাকায় বিরল প্রকৃতির গাছ। খুব অচেনা ও বিরল প্রজাতির এ গাছটি সাধারণত থাইল্যান্ড ও ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে দেখা মেলে। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বছর আগের এ গাছটি রাজশাহীতে কে লাগিয়েছেন, তা জানা নেই কারও। তবে ৪০ বছর পর গাছের কা- ভেদ করে বের হওয়া লতায় হাজারও ফুলের পাপড়ি আর কুঁড়ির সমাহারে অবাক সবাই। বুধবার সিপাইপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গাছটির আকৃতি মেহগনির মতো। উচ্চতায় অন্তত ৫০ ফুট। ব্যাস অন্তত ৬ ফুট। এ গাছের পাতা সবুজ রঙের ফলা আকৃতির। গাছের নিচের বাসায় বসবাসকারী আদরি বেগম বলেন, তারা এখানে ১৮ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। কখনও ফুল ফুটতে দেখেননি। এবারই অসংখ্য ফুল ফুটেছে। প্রায় মাসখানেক আগে থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়েছে। দেখতে শিমুল ফুলের মতো অনেকটাই। তবে অনেক লাজুক। ফোটা ফুলের পাপড়ি সামান্য বাতাসেই ঝরে পড়ে। আদরি বেগম জানান, খুব সকালে অসংখ্য ফুল ফোটে। রোদ উঠার পর থেকে পাপড়ি ঝরা শুরু হয়। প্রতিদিন সকালে আবারও কুঁড়ি ভেদ করে পাপড়ি মেলে সোন্দর্যে বিকশিত হয়ে উঠে। ফুলের সুবাসিত মিষ্টি গোলাপ গন্ধে ছুটে আসে মৌমাছি। এ গাছটিকে ঘিরে এখন মৌমাছিদের আনাগোনা বেশ শুরু হয়েছে। রাজশাহী নগরীর ফায়ার সার্ভিস থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রাচীর শেষের অপরপ্রান্তে এ গাছটির ফুল ফোটা শুরু হয় মাসখানেক আগে থেকে। তবে এতদিন কারও নজরে আসেনি। গাছের পাতা সামান্য সাপের ফনা আকৃতির, তাই স্থানীয়রা আগে থেকেই বলত এ গাছের নাম নাগরাজ। তবে স্থানীয়দের অনেকে এ গাছটিকে জয়তুন গাছ বলেও অভিহিত করেন। এ গাছের শাখা-প্রশাখা কিংবা ডালে কোন ফুল বা কুঁড়ির অস্তিত্ব নেই। গোড়া থেকে অন্তত ১০ ফুট উপরে মূল গাছের গা থেকে বটগাছের ‘ব’ এর মতো কিছু লতা বেরিয়ে সেখানেই বিকশিত হয়েছে ছোট ছোট বল আকৃতির হলদেটে-সবুজ রঙের অসংখ্য কুঁড়ি। সেই কুঁড়ি ভেদ করে পাপড়ি মেলছে অসংখ্য ফুল। সুবাস ছড়ানো এ ফুল দেখলে যে কারোরই ভাল লাগবে। অনেকে বিমোহিত হচ্ছেন বিরল প্রজাতির এ ফুল দেখে। অনেকে এ ফুলের অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা করছেন। মোবাইল ফোনে ধারণ করেও রাখছেন অনেকে। রাজশাহী কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুন্নাহার যুথি বলেন, আগে এ ফুলটি তিনি দেখেননি। জানার আগ্রহ থেকে ফুলের ছবি তুলে কলেজের স্যারদের দেখিয়েছেন। তারাও এ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি। জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুর দিকে এ গাছে ডগায় কুশি বের হয়। এরপর আস্তে আস্তে পরগাছার মতো হয়ে কুশিতে বিকশিত হয় থোকায় থোকায় কুঁড়ি। সেই কুঁড়ি আস্তে আস্তে ফুলে রূপান্তরিত হয়। তবে ফুল ফুটে গেলে এর স্থায়িত্ব প্রায় শেষ হয়ে যায়। সামান্য বাতাসেই ঝরে পড়ে পাপড়ি। বর্ষা ও শরতে এ ফুল ফুটে থাকে বলে জানা গেছে। এ ফুল থেকে কোন বীজ হয় না। কারণ এ গাছের শুধু ফুল ফুটলেও কোন ফল হয় না। ফলের কোন লক্ষণও দেখা মেলেনি। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়ো টেকনোলজিক্যাল সায়েন্সের পরিচালক ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুর হোসেন জানান, ‘নাগলিঙ্গম’ দেশে খুবই বিরল। সচরাচর দেখা মেলে না। ঢাকার বলধা গার্ডেনে কয়েকটি গাছ রয়েছে। এটির ওষুুধি গুণ না থাকলেও সৌন্দর্যবর্ধণ করে। সাধারণত আফ্রিকা, থাইল্যান্ড ও ভারতের বিভিন্ন উপাসনালয়ে দেখা যায়। এটি শ্রীবৃদ্ধি করে। এর ফুলের অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটিকে ভেন্যু ট্রিও বলা হয়।
×