ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী

বিশ্বব্যাংক ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ অক্টোবর ২০১৫

বিশ্বব্যাংক ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিতে পারে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাজেট সহায়তা বাবদ বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার দিতে পারে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অন্যান্য ঋণ-সহায়তার পাশাপাশি এই সহায়তা দেবে উন্নয়ন সংস্থাটি। সংস্থাটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আর কাইল পিটার্সের সঙ্গে শনিবার এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে বৈঠক সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী গণমাধ্যমে এ কথা জানান। বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তার জন্য ৫০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। পেরুর রাজধানী লিমায় চলমান দাতাসংস্থা বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত করার কথা ছিল। বিশ্বব্যাংক শেষ পর্যন্ত বাজেট সহায়তা বাবদ বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার দিতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসির ১ বিলিয়ন ডলারের ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিলাম। তারা অতো দিতে পারবে না। ম্যাক্সিমাম ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিতে পারে।’ গত বছর অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। সে সময় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের কয়েক দফা বৈঠকও হয়। গত মাসে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ্যানেট ডিক্সনের ঢাকা সফরের সময়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। শনিবারের বৈঠকে ডিক্সনও উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক দীর্ঘদিন পর আমাদের বাজেট সহায়তা দিতে চাচ্ছে; আমরাও আগ্রহ দেখিয়েছি। আশা করছি সেটা পাব এবং চলতি অর্থবছরেই তা ব্যবহার করতে পারব।’ উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করলেও ২০০৮ সালের পর থেকে কোন বাজেট সহায়তা দেয়নি। বাজেট সহায়তার সুবিধা সম্পর্কে মুহিত বলেন, ‘এই সাপোর্টের তেমন কোন শর্ত থাকে না। সরকার বাজেটের মাধ্যমে যে কোন খাতে এই অর্থ খরচ করতে পারে।’ তিনি জানান, আইএফসি বাংলাদেশে এক বিলিয়ন ডলারের ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তিন বছর মেয়াদী এই বন্ডের অর্থ বিনিয়োগ হবে অবকাঠামো খাতে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় এ বাজেট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ কোটি ডলার নমনীয় ঋণ হিসেবে দেবে সংস্থাটি। পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ২৫ বছরে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। সুদ দিতে হবে ২ শতাংশ হারে। বৈঠকে মুহিত ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আছে’ এমন কাউকে এ দেশে বিশ্বব্যাংকের নতুন ‘কান্ট্রি ডিরেক্টর’ হিসেবে নিয়োগ দিতে শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেন। বাংলাদেশে এই পদে দায়িত্ব পালন করে আসা ইউহানেস জাটের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। নবেম্বরে নতুন কাউকে নিয়োগ দেবে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বের আর্থিক খাতের দুই মোড়লের এই বার্ষিক সম্মেলনে ১৮৮টি সদস্য দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ছাড়াও বেসরকারী খাতের নির্বাহী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) এর আগে বলছিল বাংলাদেশকে এবার ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, আজ আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের শেষ দিনে এডিবির বাজেট সহায়তার বিষয়টিও চূড়ান্ত হতে পারে। এডিবি এই ২৫ কোটি ডলার দেবে দুই কিস্তিতে। প্রথম দফায় আটটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ৮ কোটি ডলার ছাড় করবে সংস্থাটি। ঋণ চুক্তির ১৮ মাসের মধ্যে ওই শর্তগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে সরকারকে ১৮টি শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি করতে হবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। তারপরই দাতা সংস্থাটি বাকি ১৭ কোটি ডলার ছাড় দেবে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ সম্মেলনে বাংলাদেশের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুহিত। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর আতিউর রহমান, ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ তারেক, অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দীন এবং সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি।
×