ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন আলমাস আলী

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১২ অক্টোবর ২০১৫

চলে গেলেন আলমাস আলী

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ দেশের গুণী বেহালাবাদক, সঙ্গীত পরিচালক আলমাস আলী আর নেই। পৃথিবীর মায়া ছেড়ে, সুরের মায়া ছেড়ে অবশেষে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। গতকাল রবিবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এর ফলে দীর্ঘ ১১ মাস ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ে অবশেষে হেরে গেলেন। তিনি এক ছেলে তিন মেয়েসহ অস্যংখ্যগুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ছেলে আনোয়ার জানান রবিবার বাদ জোহর জানাযা শেষে মুন্সিগঞ্জের কুসুমপুরে আলমাস আলীর দাফন সম্পন্ন হয়। আলমাস আলীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে- দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এক দু’মাস আগেও বেহালা বাজিয়েছেন আলমাস। এমনকি কেমোথেরাপি আর রেডিওথেরাপি নেয়ার পরও সঙ্গীতের টানকে উপেক্ষা করতে পারেননি। যখন যেখানে ডাক পেয়েছেন, বাজাতে ছুটে গেছেন! আলমাস আলীর অসুস্থতার শুরু গত বছরের ডিসেম্বরে। আলমাস আলীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে- গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বেতারের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেহালা বাজাতে উঠেছিলেন তিনি। মঞ্চেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এরপর নেয়া হয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ এ্যান্ড হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, তার ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী রেডিওথেরাপি ও কোমোথেরাপি দেয়ার পর অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। মৃত্যুর আগে কথা বলার শক্তি হারিয়েছিলেন আলমাস আলী। দাঁড়াতে-বসতে পারতেন না। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কেরানীগঞ্জের নিজের বাড়িতেই ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১১ মাস ধরে তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ে অবশেষে হেড়ে গেলেন। পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা দেশের বাইরে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। পরিবারের পক্ষে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব ছিল না। অনেকটা নীরবের চলে গেলেন আলমাস আলী। প্রসঙ্গত, সারাজীবন বিভিন্ন শিল্পীর গানের জন্য বেহালা বাজিয়েছেন আলমাস আলী। তার বেহালার সুর রয়েছে বাংলাদেশের হাজার হাজার গানে। বাংলাদেশের রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীতে নিপুণভাবে বেহালা বাজাতেন। তিনি বাংলাদেশ বেতারের নিজস্ব বেহালাবাদক এবং সঙ্গীত প্রযোজক। একাধারে তিনি একজন সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। বাবা রজব আলী দেওয়ানও দেশের একজন প্রখ্যাত বাউল ছিলেন। বাবার কাছে ছিল তার সঙ্গীতের শুরু। চাকরি জীবনের প্রায় শুরু থেকেই তিনি বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রায় সব জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে দেশে ও দেশের বাইরে প্রোগাম করেছেন। বাংলাদেশের প্রায় সব সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীতানুষ্ঠান কিংবা এ্যালবামের গানে তিনি বেহালা বাজিয়েছেন। অবশেষে থেমে গেল এই শিল্পীর জীবন চাকা।
×