ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনুপ্রবেশ বন্ধে সতর্ক থাকার নির্দেশ ॥ ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশী জঙ্গী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১১ অক্টোবর ২০১৫

অনুপ্রবেশ বন্ধে সতর্ক থাকার নির্দেশ ॥ ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশী জঙ্গী

শংকর কুমার দে ॥ ব্রিটেনে জন্ম নেয়া ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গীরা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্রিটেনে জন্মসূত্রে নাগরিক ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমন ৭শ’ জঙ্গী আইএসের যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে ইরাক ও সিরিয়ায়। এর মধ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গীর সংখ্যা ৫০। দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়ে যাতে বাংলাদেশেও প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, ব্রিটেনের জন্মগত সূত্রে নাগরিক এমন ধরনের ৭শ’ মুসলিম জঙ্গী আইএসের হয়ে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে ইরাক ও সিরিয়ায় এবং এর মধ্যে ৫০ জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রয়েছে বলে মতপ্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা। ব্রিটেনে বড় হওয়া জিহাদীরা তার দেশের জন্য বড় হুমকি- এ তথ্য ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থার। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যানুযায়ী ব্রিটেনেই জন্ম নিচ্ছে আইএস মুসলিম জঙ্গী, আছে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। যুদ্ধ করতে ইরাক ও সিরিয়া যাওয়ার কারণে আইএস জঙ্গী হুমকির মুখে খোদ ব্রিটেনই। গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ব্রিটেনের শীর্ষ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ দেয়া এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশে জঙ্গী দমনে সহায়তা চেয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের। ব্রিটেনে বেড়ে ওঠা জঙ্গীরা বাংলাদেশের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ-বাংলাদেশী আইএস জঙ্গী দমনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন। যে সব ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত জঙ্গী ব্রিটেন থেকে সিরিয়া যাচ্ছে তারা বাংলাদেশকে তাদের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বলে জানানো হয়েছে। ব্রিটেন থেকে যারা বাংলাদেশে আসছে কিন্তু তারা ব্রিটেনে ফিরে না গিয়ে সিরিয়া কিংবা ইরাকে যাচ্ছে। যেহেতু ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এসব জঙ্গীর ব্রিটেনে ফেরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই এসব জঙ্গী ব্রিটেনে ফিরতে না পেরে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কোন কোন জঙ্গী দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে এসে গোপনে স্থানীয় জঙ্গীদের প্রশিক্ষিত করে নতুন সদস্যও তৈরির চেষ্টা করছে। ২০১৪ সালে সামিয়ূন রহমান নামে ২৪ বছর বয়সী এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশকে আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়। সামিয়ূন গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছে, সে আইএসের কর্মী সংগ্রহের কাজে বাংলাদেশে এসেছিল। চলতি বছর বাংলাদেশ সরকার সামিয়ূনকে ব্রিটিশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। চলতি বছর আগস্টে পাঁচ বাংলাদেশী যুবক আইএসে বাংলা ভাষায় শপথ নেয়ার ভিডিও প্রকাশের পর বাংলাদেশে আইএস জঙ্গী খোঁজার অভিযানে নেমেছিল গোয়েন্দারা। তারপর মাইরুনা ফারহিন নামে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীকে তুরস্ক পুলিশের সহায়তায় টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফিরতি ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। চলতি বছরের জুন মাসে আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে ৩৫ বছর বয়সী আমিনুল ইসলাম ও ৩০ বছর বয়সী সাকিব বিন কামালকে আটক করে বাংলাদেশের পুলিশ। গত এক বছরে প্রায় ২০ জনের বেশি সদস্যকে আইএস জঙ্গী সন্দেহে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইএস সন্দেহে গ্রেফতার করা হলেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কাউকেই আইএস জঙ্গী বলে নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সোয়া দুই লাখ বিদেশী নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়ার কথা কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে বিদেশীদের নিরাপত্তা সন্তুষ্ট বলেছেন ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত। তারপরও ব্রিটিশ ফরেন এ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ সম্পর্কে সর্বশেষ সতর্কবার্তায় দেশটিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার উচ্চ ঝুঁকি থাকার প্রেক্ষিতে ভ্রমণে সতর্কতা করার ঘটনায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যেখানে ব্রিটেনে জন্মগত নাগরিক আইএস জঙ্গী হয়ে যুদ্ধ করতে সিরিয়ায় যাচ্ছে, সেখানে তো বাংলাদেশে কোন আইএস জঙ্গী নেই, তা সরকারীভাবেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাহলে ব্রিটেনের চেয়েও বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা বা ভ্রমণে সতর্কতা বেশি অবলম্বন করা কি বাংলাদেশকে বিপজ্জনকভাবে তুলে ধরার জন্য জঙ্গীরাষ্ট্র বানানো নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে? প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল, ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক, রংপুরে জাপানী নাগরিক হত্যাকা-ের ঘটনা, পশ্চিমা কয়েকটি দেশের ভ্রমণে সতর্কতার নির্দেশের পর আবার যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ ফরেন এ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ সম্পর্কে সর্বশেষ সতর্কবার্তার ঘটনায় ব্রিটেনে জন্মগত নাগরিক ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গী হয়ে ইরাকে ও সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে প্রসঙ্গটি সামনে এনেছে গোয়েন্দারা।
×