ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ এবারও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে জিএসপি ইস্যুতে

যুক্তরাষ্ট্র টিকফা ফোরাম বৈঠক করতে চায় আগামী মাসে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১০ অক্টোবর ২০১৫

যুক্তরাষ্ট্র টিকফা ফোরাম বৈঠক করতে চায় আগামী মাসে

এম শাহজাহান ॥ আগামী মাসের শেষ সপ্তায় টিকফা ফোরামের বৈঠক করার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ওয়াশিংটনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। চুক্তি করার পর এটি হবে টিকফা ফোরামের (ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এ্যাগ্রিমেন্ট) দ্বিতীয় বৈঠক। তবে চুক্তিটি কার্যকর ও অর্থবহ করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রফতানিতে জিএসপি সুবিধা বহাল থাকা জরুরী বলে মনে করছে সরকার। আর তাই শুধু ইতিবাচক ভাবমূর্তি রক্ষায় এবারও টিকফা ফোরামের বৈঠকে অগ্রাধিকার পাচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। যদিও পোশাক রফতানিতে কখনও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়া যায়নি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সূত্র মতে, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানির বাধা দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে চুক্তিটি গত ২০১৩ সালে করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর অন্তত একবার কিংবা প্রয়োজনে যেকোন সময়ে টিকফার বৈঠক আহ্বান করতে পারবে যে কোন দেশ। তবে গত বছর টিকফা ফোরামের কোন বৈঠক না হতে পারলেও এবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সভা করার তাগিদ রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআর বৈঠক করার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ওই প্রস্তাবের বিষয়টি ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সেলকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগামী ২৩-২৭ নবেম্বরের মধ্যে যে কোন দিন টিকফা ফোরামের বৈঠক হতে পারে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে ইউএসটিআর। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ডব্লিউটিও সেল) অমিতাভ চক্রবর্তী জনকণ্ঠকে বলেন, ২৩-২৭ নবেম্বরের মধ্যে টিকফা ফোরামের বৈঠক করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব রয়েছে। তবে তাদের প্রস্তাবের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, পরবর্তীতে এজেন্ডা ও করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে যাতে ওই সময়ের মধ্যে টিকফার বৈঠক হতে পারে সেটির দিকে সরকারের নজর রয়েছে। তবে এখনও কিছু চূড়ান্ত করা হয়নি। তিনি বলেন, প্রথম বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার কতটুকুন কি হয়েছে সে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। এদিকে, অপর একটি সূত্র দাবি করেছে, টিকফা ফোরামের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবারও পোশাক খাতের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় তৈরি পোশাক। কিন্তু জিএসপি স্থগিতের পর শিল্প খাতটি ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়েছে। একই সঙ্গে রফতানি রয়েছে চাপের মুখে। তাই টিকফা ফোরামের বৈঠকে পোশাক খাতের বিষয়টি আলোচনায় উপস্থাপন করা হবে। জানা গেছে, টিকফা বৈঠকের পর আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কেনিয়ার নাইরোবিতে ডব্লিউটিওর সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া আগামী বছরের শুরুতে জেনেভায় ট্রিপস’স (ট্রেড রিলেটেড ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইটস) বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ডব্লিউটিওর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের মতো এলডিসির সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা। শুধু তাই নয়, ১০০ শতাংশ শুল্ক না দিতে পারলে অন্তত ৯৭ শতাংশ পণ্যে ওই সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বাংলাদেশকে এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৯৯ শতাংশ, কানাডা ৯৮ দশমিক ৬, অস্ট্রেলিয়া ১০০, জাপান ৯৭ দশমিক ৯, নিউজিল্যান্ড ১০০ ও সুইজারল্যান্ড ১০০ শতাংশ সুবিধা দিয়েছে। উন্নত অনেক দেশ এ সুবিধা দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশসহ কিছু এলডিসিকে এ সুবিধা এখনও দেয়নি। উপরন্তু বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে জিএসপি পেত, তা শ্রমিক অধিকার ও কারখানার কাজের পরিবেশ ইস্যুতে স্থগিত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ মূলত উচ্চ প্রযুক্তি, প্রসাধনী, পানীয় এবং হার্ডওয়্যার আমদানি করে থাকে। আর এসব পণ্য নিয়ে দেশটির প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেয়ার দাবি রয়েছে। জানা গেছে, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে আগামী নবেম্বরে টিকফা ফোরামে যোগ দিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারী প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করবে। এদিকে, পণ্য রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দেয়া হলে টিকফা সার্থক হবে বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ইতোমধ্যে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি সম্প্রসারণের জন্য ২০০১ সালে টিকফা নিয়ে আলোচনা শুরুর পর ২০১৩ সালের ২৫ নবেম্বর টিকফা চুক্তি সই হয়। ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হয়েছে।
×