ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি নেতার বাড়িতে আগুন বিক্ষুব্ধ জনতার

কুড়িগ্রামে হাত-পায়ের রগ কেটে জাপা নেতা খুন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৯ অক্টোবর ২০১৫

কুড়িগ্রামে হাত-পায়ের রগ কেটে জাপা নেতা খুন

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ জেলার কচাকাটা পুলিশ থানার বলভেরখাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি আতিকুর রহমান রাজাকে (৪০) হাত-পায়ের রগ কেটে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের বাবার নাম আজিজার রহমান। নিহত আতিকুর রহমান রাজা কুড়িগ্রাম-১ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাকের খালাত ভাই। রাজার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থকরা একত্রিত হয়ে প্রতিপক্ষের বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাশর্^বর্তী নাগেশ^রী ও ভুরুঙ্গামারী থানা এবং কুড়িগ্রাম থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। পুলিশ খুনের রহস্য ভেদ করতে ঘটনাস্থল থেকে ২ মহিলাসহ ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বিক্ষুব্ধদের দেয়া আগুনে বিএনপি নেতা আব্দুল জলিলের বাড়িসহ ৬টি বাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। নিহতের স্ত্রী সাহিদা বেগম এ খুনের পেছনে খোদ পুলিশের ইন্ধন আছে বলে অভিযোগ করেন। নিহতের ছোট ভাই প্রভাষক আজিজুল ইসলাম রানা জানান, বুধবার রাত ১২টার দিকে মাদারগঞ্জ বকুলতলা নামক স্থানে দুর্বৃত্তরা এ হত্যাকা- ঘটায়। আতিকুর রহমান রাজা বুধবার সন্ধ্যায় হাজীপুর এলাকায় ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ওয়াজ মাহফিল শেষে রাতে মোটর সাইকেলযোগে বন্ধু আলতাফ হোসেনসহ বাড়ি ফিরছিলেন। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন তার বন্ধু আলতাফ হোসেন আর রাজা পেছনে বসা ছিলেন। রাত ১২টার দিকে মাদারগঞ্জ বকুলতলা হাজীপাড়া গ্রামের জোড়াদীঘির পাড়ে পৌঁছলে কয়েকজন মুখ ঢাকা দুর্বৃত্ত তার পথরোধ করে এবং ধারালো চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার হাত-পায়ের রগ কেটে ও শ^াসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। এ সময় মোটরসাইকেলসহ বন্ধু আলতাফ হোসেন পালিয়ে যায়। প্রভাষক রানা দাবি করেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, পুত্র রবিন, লাভলু ও লাবিন এ হত্যাকা-ের নেতৃত্ব দেন। এদিকে খবরটি এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ কচাকাটা থানার সামনে জড়ো হয়ে খুনীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। নিহতের স্ত্রী সাহিদা বেগম একমাত্র কন্যা নিহাকে (৪) নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। তিনি মৃত্যুর খবর পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ঢাকা থেকে বলভেরখাস এলাকায় স্বামীর বাড়িতে আসেন। তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। শত শত মানুষ কিন্তু সান্ত¡না জানানোর ভাষা নেই কারও। ছোট নিহা এঘর-ওঘর করে খুঁজছে প্রিয় বাবাকে। বাবা গেছে না ফেরার দেশে। এ কথা কেউ মুখ ফুটে বলতে পারছে না ফুটফুটে মেয়ে নিহাকে। এর মাঝেই বিলাপ করতে করতে সাহিদা অভিযোগ করেন, তার স্বামী রাজা মানুষের সেবা করতেই ভাল চাকরি ছেড়ে এলাকায় পড়ে থাকেন। এ জন্য শত্রু হন সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের। আব্দুল জলিলের সঙ্গে কচাকাটা থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমানের সখ্যতা ছিল। ওসি মোস্তাফিজুর রহমান সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ঘুষ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম করায় তার প্রতিবাদ জানায় রাজা। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় পুলিশের রোষানলে পড়েন রাজা। এ কারণে এ হত্যাকা-ে ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের ইন্ধন আছে বলে তিনি মনে করেন। মাদারগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন জানান, রাজা এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। যেকোন অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি সোচ্চার থাকতেন। গত ইউপি নির্বাচনে বলভেরখাস ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অল্প ভোটে হেরে যান। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এখন থেকে গণসংযোগ করে আসছিলেন। তার প্রতিপক্ষরাই এ হত্যাকা- ঘটাতে পারে বলে সবার ধারণা। নিহত রাজার স্ত্রী ঢাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কচাকাটা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। ভোরে বকুলতলা হাজীপাড়া গ্রামের জোড়াদীঘির পানি থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম মর্গে লাশ পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দুই মহিলাসহ মোটরসাইকেল চালক আলতাফ হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার মোটিভসহ আসামি ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিপক্ষ বলভেরখাস ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল জলিলের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ওই বাড়িসহ পাশর্^বর্তী ৩টি বাড়ি পুড়ে ভস্মীভূত হয়। পরে নাগেশ^রী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
×