ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৯ অক্টোবর ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ কিছু গান শুধু গান নয়। কালের সাক্ষী। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। দেশমাতার প্রতি অগাধ ভালবাসা থেকে লেখা। না, বলে বোঝানোর চেয়ে গানের কথাগুলো স্মরণ করা যাক। এই যেমন- জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো,/ এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাকো...। কে শোনেনি এই গান? কার ভেতরে বাজেনি সুরটি? একই রকম বিস্ময় জাগায় পরের গান- নোঙ্গর তোলো তোলো সময় যে হলো হলো/ নোঙ্গর তোলো তোলো...। বাকি কথাগুলোও যে কেউ বলে দিতে পারবেন। ষাটের দশকের প্রতিবাদী সঙ্গীত ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। বিস্ময়কর যে, আজকের বাংলাদেশেও গানটি গীত হচ্ছে একই রকম আবেগ নিয়ে। একই গীতিকারের আরও গান আছে। এসব গানে দেশের কথা সংগ্রামের কথা। শুনলে মন ভাল হয়ে যায়। প্রাণ জেগে ওঠে। কিন্তু গীতিকারের নামটি কি? ক’দিন আগেও কেউ তেমন জানতেন না। আজ কেউ কেউ বলে ফেলবেন। হ্যাঁ, নয়ীম গহর। দীর্ঘকাল একলাটি হয়ে পরিত্যক্ত হয়ে থাকার পর সম্প্রতি শিরোনাম হয়েছেন তিনি। প্রথমে অসুস্থতার সংবাদ এসেছে। ‘টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না’ ধরনের সংবাদ শিরোনাম। আর মঙ্গলবার চিরতরে চলে যাওয়ার খবরটি! বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন কিংবদন্তি গীতিকবি। এই শহরেই কেটেছে তাঁর শেষ দিনগুলো। অথচ কেউ তেমন জানতেন না। কেন এমন নিভৃতে কাটাতে হলো তাঁকে? কেন একলাটি হয়ে পরে থেকে মরা? কিছু প্রশ্ন এখন উঠছে বৈকি। তবে কে দেবে উত্তর? আমাদের ব্যাড প্র্যাকটিস, আমাদের নকল নিয়ে পরে থাকার মানসিকতা যে প্রকৃত সব পথ ভুলিয়ে দিয়েছে! নয়ীম গহররা আর ফিরে আসবেন না। তবে আরও যারা এই শহরে বেঁচে আছেন, ধুঁকে ধুঁকে মরছেন, তাঁদের খুঁজে নেয়ার সময় হয়েছে। সেই বার্তাটি দিয়ে গেলেন নয়ীম গহর। এবার ঢাকার বৃষ্টির কথা। ভাল বৃষ্টি হলো বুধবার রাতে। শরতের শেষ হয়ে এলো, বর্ষা থেকে তবু বের হলো না প্রকৃতি। বৃহস্পতিবার সকালেও বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টিতে শীত শীত অনুভব। দিনভর সূর্য দেখা যায়নি। কিছুটা অন্ধকার মতো ছিল। প্রকৃতিকে মনে হয়েছে বিষণœœ। তবে সব মিলিয়ে যথার্থই নাতিশীতোষ্ণ একটি দিন কাটিয়েছে রাজধানীবাসী। এবার দুর্গোৎসবের কথা। বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ। এক উৎসব শেষ হতে না হতেই আরেকটি শুরু হয়ে যায়। এখন যেমন চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ১৯ অক্টোবর মহা ষষ্ঠী। এদিন দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গা পুজোর আনুষ্ঠানিকতা। ২০ অক্টোবর মহা সপ্তমী। ২১ অক্টোবর মহা অষ্টমী। নবমী এবং দশমী একই দিনে। ২২ অক্টোবর। এদিন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব। এখন চলছে জোর প্রস্তুতি। সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকার ম-পগুলোতে চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ। বৃহস্পতিবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, পুজো ম-পের সামনে খোলা শেডের নিচে প্রতিমা গড়ার কাজ হচ্ছে। কাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ। বাকি কাজ চলছে। এদিকে, মন্দিরের পুজো ম-পে এখনও আছে গত বছরের প্রতিমা। মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথা অনুযায়ী আগের বছরের প্রতিমা বিসর্জন করে ষষ্ঠীর দিন নতুন প্রতিমা ওঠানো হবে। সেভাবেই এগিয়ে চলেছে কাজ। রামকৃষ্ণ মিশনের প্রস্তুতিটা আরও বড়। এখানে তাই ব্যস্ততার চিত্রটা একটু ভিন্ন। রাজধানীর অন্য সব মন্দিরেও চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার ও শাঁখারীবাজারে এখন উৎসবের আমেজ। মহানহগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি জানান, এবার ঢাকায় ২২২টির মতো ম-পে পুজো অনুষ্ঠিত হবে। সঙ্গত কারণেই উৎসবের নগরী হবে রাজধানী ঢাকা। নির্বিঘেœ হোক উৎসব। সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক আনন্দ- আমাদের তা-ই প্রত্যাশা।
×