স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামালপুরের মোঃ আশরাফ হোসেনসহ আট রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের তারিখ ২৬ অক্টোবর নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক নোয়াখালী জেলার সুধারাম এলাকার মোঃ আব্দুল কুদ্দুসকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনে হাসপাতালে নেয়ার জন্য বলেছে আদালত। এই মামলার শুনানির জন্য আগামী ১৪ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুধবার এই আদেশ দেয়। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকার সৈয়দ মোহাম্মদ হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ ও নির্যাতনের ছয়টি অভিযোগ আনা হচ্ছে। দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আজ-কালের মধ্যেই এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয়া হবে বলে বুধবার সংস্থার এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
জামালপুরের মোঃ আশরাফ হোসেনসহ আট রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের তারিখ ২৬ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে। অভিযোগ গঠনের পক্ষে বুধবার শুনানি করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। অপরদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট মশিউজ্জামান। মামলার আট আসামির মধ্যে দু’জন এ্যাডভোকেট শামসুল আলম এবং এসএম ইউসুফ আলী কারাগারে আছেন। পলাতক অন্য ছয়জন হলেন- আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা মোঃ আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মোঃ আব্দুল হান্নান, মোঃ আব্দুল বারী, মোঃ হারুন ও মোঃ আবুল কাসেম।
কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকার ॥ কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকার সৈয়দ মোহাম্মদ হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ ও নির্যাতনের ছয়টি অভিযোগ আনা হচ্ছে। দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। কয়েকদিনের মধ্যেই এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয়া হবে বলে বুধবার সংস্থার এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ধানম-িতে তদন্ত সংস্থার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এর দুই সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও এম সানাউল হক।
প্রথম অভিযোগ ॥ নিকলীর দামপাড়া গ্রাম ও নিকলী থানা ভবন, সদরের মহাশ্মশান এলাকায় ’৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হুসাইনের বিরুদ্ধে ছয় মহিলাকে ধর্ষণ, সুধীর সূত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মণসহ চারজনকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
দ্বিতীয় অভিযোগ ॥ নিকলীবাজার ও নিকলী থানা কম্পাউন্ড এলকায় হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে ’৭১ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত কাশেম আলীসহ চারজনকে আটক ও নির্যাতন।
তৃতীয় অভিযোগ ॥ নিকলীর গুরুই গ্রামের পূর্বপাড়া ’৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফুল মিয়াসহ ২৬ জনকে হত্যা এবং দু’শ’ ৫০টি বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
চতুর্থ অভিযোগ ॥ নিকলীর নানশ্রী গ্রামে ’৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তোফাজ্জল খান জিতুসহ সাতজনকে অপহরণসহ নির্যাতনের অভিযোগ হুসাইনের বিরুদ্ধে।
পঞ্চম অভিযোগ ॥ হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে ’৭১ সালের ১০ অক্টোবর নিকলী সদরের পূর্বগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল মালেকের নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ।
ষষ্ঠ অভিযোগ ॥ ’৭১ সালের ২৬ নবেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান ও মোঃ সেলিমকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ রাজাকার হুসাইন কিশোরগঞ্জ পৌরসদর, প্যারাভাঙ্গা ও শোলাকিয়ার রিক্সা দিয়ে ঘুরিয়েছিল এবং মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহানের মাকে তার ছেলের রক্ত দেখিয়ে বীভৎসতা প্রদর্শন করেছিল।
কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ॥ একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক নোয়াখালী জেলার সুধারাম এলাকার মোঃ আব্দুল কুদ্দুসকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনে হাসপাতালে নেয়ার জন্য বলেছে আদালত। এই মামলার শুনানির জন্য আগামী ১৪ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।