ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী কলেজ শিক্ষকরা বর্তমান কাঠামোতে বৈষম্য দূর চান

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৮ অক্টোবর ২০১৫

সরকারী কলেজ শিক্ষকরা বর্তমান কাঠামোতে বৈষম্য দূর চান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পে স্কেল ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পর এবার বৈষম্যের অভিযোগ এনে সঙ্কট নিরসনের দাবি জানালেন সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। আলাদা বেতন স্কেল নয়, বর্তমান বেতন কাঠামোতেই সকল স্তরে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবি করে আন্দোলনে থাকা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এ সদস্যরা বলেছেন, এটা শিক্ষকদের মর্যাদার প্রশ্ন। বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ ছাড়া আন্দোলন থেকে সরে আসার কোন পথ নেই। বুধবার সচিবালয়ে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় সম্ভব সব রকমের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটির কাছে শিক্ষকদের সমস্যা তুলে ধরা হবে। এছাড়া সমস্যা নিরসনে শিক্ষকদের সঙ্গে আরও আলোচনা চলবে। এদিকে বৈঠকে মন্ত্রীর ইতিবাচক অবস্থানের কারণে পূর্ণ ঘোষিত কর্মসূচীতে পরিবর্তন এনেছে সরকারী কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচী ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। কর্মসূচীর মধ্যে আছে ১৩ ও ১৪ অক্টোবর সারাদেশে সরকারী কলেজ, বাণিজ্যিক কলেজ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ও সরকারী আলিয়া মাদ্রাসায় পূর্ণদিবস ক্লাস বর্জনের পরিবর্তে ১৯ ও ২০ অক্টোবর কর্মবিরতি। এছাড়া ১৮ অক্টোবর শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পিছিয়ে আগামী ১ নবেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ে দাবি পূরণ না হলে ওইদিন পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হেবে। পূর্বঘোষণা অনুসারে বুধবার বেলা তিনটায় সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা। সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি সভাপতি অধ্যাপক নাসরীন বেগম, মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার, সাবেক মহসচিব মাসুমে রব্বানী খান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব সাহেদুুল খবীর চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য কুদ্দুস সিকদার, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলে রাব্বী প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সমস্যা তুলে ধরে শিক্ষকরা বলেন, আলাদা বেতন স্কেল নয়, বর্তমান বেতন কাঠামোতেই সকল স্তরে বেতন বৈষম্য নিরসন চান দেশের সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। অবিলম্বে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল পুনর্বহাল করে বৈষম্য নিরসন ছাড়া শিক্ষকদের অসন্তোষ কমবে না। শিক্ষক নেতারা দাবি পূরণে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, বর্তমান সরকার সম্প্রতি ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করেছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। পে-স্কেলের অনেক ইতিবাচক দিক আছে। কিন্তু র্শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিকে বিবেচনায় না এনে অধ্যাপক পদের বেতন স্কেল ও গ্রেড অবনমন করা হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকসহ র্শিক্ষা ক্যাডারের সকল স্তরের বেতন বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজার সদস্য এটি উপভোগ করতে পারছে না। শিক্ষকরা তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে বলেছেন, এখনও বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড হতে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হন। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের সহযোগী অধ্যাপকরা পঞ্চম গ্রেড হতে চতুর্থ গ্রেডে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান, যা বৈষম্যমূলক। ৫০ শতাংশ অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হন। এ বৈষম্য নিরসনের দীর্ঘদিনের চেষ্টা, ১৯৮৪ সালের এনাম কমিশন, ১৯৮৭ সালের সচিব কমিটির সুপারিশ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের চাকরি ও বেতন কমিশনের নিকট আবেদন সত্ত্বেও অধ্যাপকদের বেতন গ্রেড চতুর্থ গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হয়নি। উল্টো সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বন্ধ করে দেয়ায় শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেড হতে অবসরে যাবেন। অন্যদিকে পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় শিক্ষা ক্যাডারের অনেকেই সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল না থাকায় এখন সহযোগী অধ্যাপকদের পঞ্চম গ্রেড হতে অবসরে যেতে হবে। প্রাপ্য মর্যাদায় উন্নীত না করে স্কেল ও পদ অবনমনে শিক্ষকরা মর্মাহত। অন্যদিকে দুটি সুপার গ্রেডের ফলে বৈষম্য আরও তীব্রতর হয়েছে। শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, পদ ও স্কেল অবনমনের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেডে নির্দিষ্ট করে, শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন অধিদফতর ও শিক্ষা প্রকল্পের তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম গ্রেডে অন্য ক্যাডার হতে পদায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিক্ষকরা আরও বলেছেন, ২৫ থেকে ৩০ বছর পূর্বে কলেজ জাতীয়করণ হলেও এখনও ১৯৮৪ সালের এনাম কমিটির প্যাটার্ন অনুযায়ী অনার্স/ মাস্টার্সের জন্য পদ সৃষ্টি হয়নি। ৩ থেকে ৪ জন শিক্ষক নিয়ে ৪ বছরের অনার্স পড়ানো হচ্ছে। ২ বছরের ডিগ্রী কোর্স এখন ৩ বছরের। রয়েছে ইন্টারমিডিয়েট ও মাস্টার্স কোর্স। পদ সৃষ্টির সমীক্ষার নামে গত এক বছরের অধিক সময় পদ সৃষ্টির চলমান প্রক্রিয়া সুকৌশলে বন্ধ রাখা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষকরা। ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতির দাবি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করলেও দুই বছর সেটিও ফাইলবন্দী। পদ না থাকায় এবং বিষয় বৈষম্যের কারণে প্রতিদিনই শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যাচ্ছেন। এছাড়া শিক্ষা ক্যাডারের ২৪তম বিসিএস-এর এক হাজার ৯৬০ জন সহকারী অধ্যাপক এবারই ১ জুলাই পঞ্চম গ্রেডে সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্য ছিল। একদিনের জন্য তারা পঞ্চম গ্রেড প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই কথা প্রযোজ্য প্রভাষক পর্যায়ে। শিক্ষকরা বছরে শনিবারসহ ৫২ দিন অতিরিক্ত ক্লাস নেন। জাতীয় দিবসসমূহে সবাই ছুটি ভোগ করলেও শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। পদ ও স্কেল অবনমনের ফলে শিক্ষকরা অবসরের সময় পেনশনের ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হবেন। শিক্ষামন্ত্রী সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের কথা তুলে ধরে বলেছেন, বেতনস্কেল নিয়ে সরকারী কলেজ ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। সরকার শিক্ষক সমাজের মর্যাদার বিষয়টিকে সব সময়েই প্রধান্য দেয়। এখনও দিচ্ছে। শিক্ষকদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে আমরা আন্তরিক। কিভাবে বিষয়টির সুন্দর সমাধান হয় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এদিকে বিভিন্ন সরকারী কলেজে বুধবার মানববন্ধন, প্রদিবাদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন শিক্ষকরা। বেতন বৈষম্য নিরসন ও মর্যাদা ফিরে আনার দাবিতে বরিশালে মানববন্ধন করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির শিক্ষকরা। অশ্বিনী কুমার হলের সামনে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি বরিশাল অঞ্চলের ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। এ সময় তারা ঘোষিত ৮ম জাতীয় বেতন স্কেলে বৈষম্য নিরসনের দাবিকে অগ্রাহ্য করে অধ্যাপকদের ও সহযোগী অধ্যাপকদের বেতন স্কেল অবনমনের প্রতিবাদ এবং সিলেকশন গ্রেড-টাইমস্কেল পুনর্বহাল ও স্কেল আপগ্রেডের দাবি জানান। সমিতির সহ-সভাপতি মাসুদ রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম মহাসিচব ওমর ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান ফেরদৌসসহ বরিশালের সব সরকারী কলেজ, কমার্শিয়াল ইনিস্টিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট ও কলেজ, সরকারী আলিয়া মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। বিদ্যমান বৈষম্য ও পদ অবনমনের প্রতিবাদে নেত্রকোনায় মানববন্ধন করেছেন সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। দুপুর ১টার দিকে নেত্রকোনা সরকারী কলেজ প্রাঙ্গণে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির আয়োজনে এ কর্মসূচী পালিত হয়। শিক্ষকরা বলেন, ১০ অক্টোবরের মধ্যে দাবি আদায়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নেয়া হলে সব সরকারী কলেজ, বাণিজ্যিক কলেজ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ও সরকারী আলিয়া মাদ্রাসায় পূর্ণদিবস ক্লাস বর্জন করা হবে। ধর্মঘট চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ॥ ঘোষিত স্কেলে একাদশ গ্রেডে বেতন প্রাপ্তিসহ ছয় দফা দাবিতে সারাদেশে চার ঘণ্টার কর্মবিরতি কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। শিক্ষকদের চারটি সংগঠনের জোট প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফেডারেশনের আহ্বানে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মসূচী চলছে। আজ কর্মবিরতি পালনের পর দুুদিন বিরতি দিয়ে ১০ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচীও রয়েছে এই শিক্ষকদের।
×