ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

সুধারামের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৬ অক্টোবর ২০১৫

সুধারামের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালী জেলার সুধারামের পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তারা হলেন, আমীর আহম্মেদ ওরফে আমীর আলী, আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুর, মোঃ ইউসুফ, মোঃ জয়নাল আবদীন ও মোঃ আব্দুল কুদ্দুস। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পুলিশ আমীর আলীকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে নেত্রকোনা জেলার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননি ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৯তম সাক্ষী মোঃ মিজানুর রহমানের জবানবন্দী শেষ হয়েছে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেছেন। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী। এর আগে ময়মনসিংহের পাঁচ আসামির বিুরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম ও ব্যারিস্টার তাপস কুমার বল। আসামিদের বিরুদ্ধে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন নোয়াখালীর সুধারাম থানায় একশত ১১ জনকে গণহত্যাসহ তিনটি অভিযোগ আনা হয়। জাহিদ ইমাম বলেন, গত বছরের ১৬ নবেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়ে গত ৩১ আগস্ট শেষ হয়। ওই দিনই তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ॥ প্রথম অভিযোগ : একাত্তরের ১৫ জুন নোয়াখালীর সুধারামে ৪১ জনসহ শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা-গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন পাঁচ আসামি। দ্বিতীয় অভিযোগ : একাত্তরের ১৩ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত হত্যা-গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন আমীর আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমীর আলী, আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুর ও মোঃ জয়নাল আবদিন। তৃতীয় অভিযোগ : একাত্তরের ১৩ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ছয়টা থেকে বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ৯ জনকে হত্যা-গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন আমীর আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমীর আলী, আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুর ও মোঃ ইউসুফ। তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় আমীর আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমীর আলী ও আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুর সকল অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে ফর্মাল চার্জে বলা হয়। মোঃ ইউসুফ ও মোঃ জয়নাল আবদিন দুটি এবং মোঃ আব্দুল কুদ্দুস একটি ঘটনায় জড়িত ছিলেন। আমির আলী গ্রেফতার ॥ ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জরির পর পরই নোয়াখালীর আমীর আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমীর আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহর মাইজদীর উত্তর ফকিরপুরের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আমীর আলী মৃত মুজাফ্ফর আলীর ছেলে। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ৩১ মার্চ থেকে আমীর আহম্মেদ নিজ বাড়িতে গৃহবন্দী ছিলেন। ননী -তাহের ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেত্রকোনা জেলার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৯তম সাক্ষী মোঃ মিজানুর রহমানের জবানবন্দী শেষ হয়েছে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেছেন। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফতার তাকে জেরা করেন। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ মিজানুর রহমান, পিতা মৃত আব্দুল ওয়াহেদ, ঠিকানা - গ্রাম : বিরামপুর, থানা : নেত্রকোনা, জেলা : নেত্রকোনা। আমার বয়স আনুমানিক ৭৪ বছর। বর্তমান ঠিকানা গ্রাম ও পোঃ গোপালপুর, থানা : কেন্দুয়া, জেলা নেত্রকোনা। ১৯৭১ সালের ১৫ নবেম্বর আমি আমার বিবারমপুরের গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। ঐ তারিখে বেলা ১১টার সময় ১৫-২০ জন রাজাকার নেত্রকোনা থেকে বিরামপুর বাজারে এসে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। আমার বাড়ি ঐ বাজার সংলগ্ন। আমাকে ২ জন রাজাকার ধরে বাজারে আনে। সেখানে একজন রাজাকার বেয়নেট দিয়ে আমার ডান চোখের উপরে আঘাত করলে সেখানে রক্তাক্ত জখম হয়। ঐ সময় রাজাকাররা বদিউজ্জামান মুক্তাসহ আরও ৬ জনকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে আমাকে ছেড়ে দেয়।
×