ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুদ্রা পাচার রোধে আসছে অধ্যাদেশ

চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দুটি মেডিক্যাল ভার্সিটির খসড়া আইন অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৬ অক্টোবর ২০১৫

চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দুটি মেডিক্যাল ভার্সিটির খসড়া আইন অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য মন্ত্রিসভার সকল সদস্যকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। এছাড়া মন্ত্রিসভা দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই নগরী চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দুটো মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন এবং অর্থদ-ের পরিমাণ দ্বিগুণ ও একাধিক সংস্থার যৌথ তদন্তের সুযোগ রেখে মুদ্রাপাচার আইনের সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারির প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার পাওয়ায় মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানায়। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, এ সাফল্য আমার একার নয়। এটি দেশবাসীর সাফল্য। সকলে মিলে আমরা এই সাফল্য অর্জন করেছি। এদিকে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সচিবালয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় আধাঘণ্টা সচিবালয়ে অপেক্ষা করতে হয়। এতে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে টেলিফোনে তৎক্ষণিকভাবে মেয়রকে দিকনির্দেশনা দেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। উন্নয়ন কার্যক্রম প্রতিহত করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। একের পর এক ভিন্ন কৌশলে তারা দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। এটি সকলকে মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে। সকলে যার যার মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকা-ের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখবেন। তিনি বলেন, সরকারের এই মেয়াদে আমরা দুই বছর অতিবাহিত করেছি। আগামী তিন বছর উন্নয়নের এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। সংসদ সদস্য লিটনের অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, লিটনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৫’ এবং ‘রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৫’-এর খসড়ার এই অনুমোদন দেয়া হয়। এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে দেশে চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা বিদ্যাপীঠের সংখ্যা হবে তিনটি। ১৯৯৮ সালে ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন এ্যান্ড রিসার্চকে (পিজি হাসপাতাল) বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, এ দুই আইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দুটি নতুন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মেডিক্যাল কলেজগুলো এ দুই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হবে। এটা আগে নীতিগত অনুমোদনের জন্য কেবিনেটে এসেছিল। তখন কেবিনেট কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল। সেই নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খসড়াটি সংশোধন করেছে, এরপর ভেটিং নিয়েছে। তারপর আজ চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। সচিব বলেন, শুরুতে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার প্রস্তাব থাকলেও পরে মস্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আলাদা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। সাধারণভাবে এখানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাঠদান হবে। তবে নার্সিংয়ের বিষয়ে স্নাতক কোর্সও থাকবে। দুই আইন হুবহু একই রকম। গত বছর নবেম্বরে এক অনুষ্ঠানে দেশে আরও দুটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া সেনাবাহিনীর যেসব হাসপাতালে পাঁচ শ’ শয্যা রয়েছে সেগুলোকে মেডিক্যাল কলেজ করার কথা বলেন। দেশে বর্তমানে ২৩টি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ আছে। আরও পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ চালুর প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া অর্থদ-ের পরিমাণ দ্বিগুণ ও একাধিক সংস্থার যৌথ তদন্তের সুযোগ রেখে মুদ্রাপাচার আইনের সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ (সংশোধন) অধ্যাদেশ’ জারির অনুমোদন লাভ করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৭ আগস্ট মন্ত্রিসভা ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ (সংশোধন) আইন-২০১৫’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল। আপাতত সংসদের অধিবেশন না চলায় এবং বিষয়টি জরুরী বিবেচিত হওয়ায় তা অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। সংসদ বসার অপেক্ষা না করে এখনই কেন অধ্যাদেশ আকারে জারি করতে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতেই মুদ্রাপাচার একটি বড় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। মুদ্রা পাচার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সরকারের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা হয়। এ ধরনের একটি মিশন ১১-১২ অক্টোবর বাংলাদেশে আসছে। আমরা যদি এর আগেই আইনের রূপ দিতে পারি, তাহলে তাদের কাছে আমাদের অগ্রগতি ভিজিবল হয়। মূল্যায়নে আমরা ভাল করব। বিদ্যমান আইনে মুদ্রাপাচারের ঘটনা তদন্তের সার্বিক দায়িত্ব দেয়া ছিল দুদকের ওপর। কোন ক্ষেত্রে দুদক অন্য কোন সংস্থাকে দায়িত্ব দিলে তারপর তারা এ তদন্তে যুক্তি হতে পারত। অনুমোদিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ঘুষ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত মুদ্রা পাচারের ঘটনা ঘটলে তা তদন্তের দায়িত্ব দুদকের হাতে থাকবে। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থা (পুলিশ, এনবিআর বা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর) তদন্তের দায়িত্ব নেবে। মুদ্রাপাচার আইনে দুদকের ভার লাঘব করতে দুদক আইন সংশোধনের প্রস্তাবেও গত ১৭ আগস্ট অনুমোদন দিয়ে রেখেছে মন্ত্রিসভা। বিদ্যমান মুদ্রাপাচার আইনে যৌথ তদন্তের বিধান না থাকলেও অধ্যাদেশে তা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রয়োজনে একাধিক সংস্থা যৌথভাবে এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত করতে পারবে। ২০১২ সালের মুদ্রাপাচার আইনে ৪ থেকে ১২ বছর কারাদ-ের যে বিধান ছিল, অধ্যাদেশে তা বহাল রাখা হলেও বাড়ানো হয়েছে অর্থদ-ে। বিদ্যমান আইনে পাচার হওয়া অর্থের কমপক্ষে দ্বিগুণ অথবা ১০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি হবে- সেই পরিমাণ জরিমানার কথা বলা আছে। এই অঙ্ক বাড়িয়ে ১০ লাখের জায়গায় ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে। মুদ্রা পাচার আইন সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে বলে গত ১৭ আগস্ট জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বিজয়া দশমীর ছুটি ২২ অক্টোবর ॥ শারদীয় দুর্গোৎসবের নবমী ও দশমীর তিথি এবার একই দিনে পড়ায় বিজয়া দশমীর সরকারী ছুটি একদিন এগিয়ে আনা হয়েছে। ২৩ অক্টোবরের পরিবর্তে এবার ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিজয়া দশমীর ছুটি থাকবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা জানিয়েছেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ছুটির তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার দুর্গাপুজোর ছুটি ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার করার প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “ক্যাবিনেট মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত জানানোর আগে আমি আপনাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানাতে চাই। এটা ঠিক ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত না, সরকারের সিদ্ধান্ত। বিষয়টা ক্যাবিনেটে এসেছিল, প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের করা আমাদের ছুটির তালিকায় ২৩ অক্টোবর হচ্ছে বিজয়া দশমী। এই দিন সরকারী ছুটি। সরকারের গোচরে এসেছে, আসলে বিজয়া দশমী হবে ২২ অক্টোবর। এটা অনেক সময় হয়। তিথির বিষয় আছে। চলতি বছরের সরকারী ছুটির তালিকায় বিজয়া দশমীর সরকারী ছুটির দিন ঠিক রাখা হয়েছিল ২৩ অক্টোবর। কিন্তু পঞ্জিকার তিথি অনুযায়ী ২২ তারিখই দশমীর তিথি হওয়ায় ছুটির তারিখ বদলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতারা। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিজয়া দশমীর দিনে মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যান দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা, যার মর্ত্যে আগমন উদযাপনে প্রতি শরতে দুর্গোৎসব পালন করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। পুজোর আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিজয়া দশমীতে দেবী প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবের সমাপ্তি হয়।
×