ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাউল করিম খোকন

গয়নার গল্প

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৫ অক্টোবর ২০১৫

গয়নার গল্প

নারী মানেই নিজেকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে সচেষ্ট থাকা। নারীর সৌন্দর্য কিছুটা নিজের জন্মগত আর বাকিটা নানা আবরণের উপকরণে ফুটিয়ে তুলতে হয়। নারীর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার উপকরণ হিসেবে অলঙ্কার বা গয়না সব সময়ই তার সঙ্গ দেয়। সাধারণত সোনা-রূপার গয়নার প্রচলন থাকলেও সময়ের বিবর্তনে কাঠ, মাটি এমনকি কাপড়ের তৈরি অলঙ্কার এখন নারীর সাজসজ্জার বিশেষ আকর্ষণীয় উপাদান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের সব ধরনের গয়নার প্রতি সমপরিমাণ আগ্রহ আছে। সোনা-রূপা, বাঁশ, বেত ও কড়িমাটি সাধারণত এমন উপকরণের গয়না বেছে নেন মেয়েরা। এর বাইরে যারা একটু বৈচিত্র্যময় সাজ পছন্দ করেন, সাজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন, তারা চাইলে পরতে পারেন কাপড়ের গয়না। একজন ডিজাইনারের সব সময় আগ্রহ থাকে ভিন্ন ধারার ডিজাইনের গয়নার দিকে, যা ম্যাটেরিয়ালের দিক থেকেও বাজার চলতি হতে হবে এমন কোন কথা নেই। ডিজাইনার হোন কিংবা সাধারণ একজন গৃহবধূ অথবা অবিবাহিতা তরুণী হোন বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের অলঙ্কারের প্রতি উৎসাহী থাকেন সব সময়। আর যারা ফ্যাশন শোতে অংশ নেন, মডেলিং করেন কিংবা অভিনয়ে অথবা নাচের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারা সব সময় গয়নার ডিজাইনে চমক ধরে রাখতে চান। যে কেউ ইচ্ছা করলে ভিন্ন স্টাইলের গয়না বেছে নিতে পারেন নিজের জন্য। সব সময় ম্যাচিং করে গয়না পরতে হবে তেমন ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই। কনট্রাস্ট করেও গয়না পরা যেতে পারে। তাতে বরং অসাধারণত্বের প্রকাশ থাকে। আবার পোশাকের কাটিং কিংবা ধরন বুঝেও গয়নার আদল পরিবর্তন হতে পারে। যেমন হাল্কা রঙের পোশাকের সঙ্গে বড় সাইজের গয়না পরা যেতে পারে। অন্যদিকে উজ্জ্বল রঙের পোশাকের ক্ষেত্রে গয়না হাল্কা হলেও মানানসই মনে হবে। অনেকে গহনা পরার সময় ফ্যাশন ফটোগ্রাফি অনুসরণ করেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে ফ্যাশন ফটোগ্রাফির সময় পুরো কম্পোজিশনটিকে সুন্দর করে তুলতে কেউ কেউ বাড়তি গহনার প্রয়োগ ঘটান। ঐ পোশাকের সঙ্গে বাস্তবেও যে তেমনি করতে হবে, তা কিন্তু নয়। তখন অনেক কিছুই পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ব্যবহার করতে হয়। তবে ব্যক্তিগতভাবে গয়নার ক্ষেত্রে অনেকেই উগ্রতার প্রকাশ ঘটাতে চান। সব সময় যে কমন কিছু পরতে হবে তাও কিন্তু নয়। গয়নার সাইজে, রঙে, উপাদানে কিংবা পরার স্টাইলে পরিচিত ব্যাপারটি মাঝে মাঝে না রাখলেও চলে। গরম কিংবা ঠা-াÑ এই পরিবেশের ওপর নির্ভর করে কিন্তু গয়না পরা হয় না। বরং কেমন জুয়েলারি ব্যবহৃত হবে, তা অনেকটা মুডের ওপর নির্ভর করে। তবে গরমের দিনগুলোতে ন্যাচারাল কালারও ম্যাটেরিয়েলের গয়না পরাই ভাল। বিশেষ করে যে গয়নাগুলো কুল লুক দেয় সেগুলো পরলেই মানানসহই মনে হবে। যেমন মাটির বা কাঠের গয়না পরা যেতে পারে। আবার ড্রাই ফ্লাওয়ার কিংবা মিডের গয়নাও একটা ঠা-া অনুভূতি দেবে। আর এই ঋতুতে হাল্কা ধরনের গয়না পরাই ভাল। বিদেশে সামার মানেই কিন্তু হলিডে আর ফান। তাই ওদের ওখানকার জুয়েলারি একটু আলাদা ধরনেরই হয়। আমাদের দেশে মেয়েদের গয়না বলতে সোনার দিকেই ঝোঁক। তবে এখন উপমহাদেশজুড়ে রূপার গয়নার ট্রেন্ডটাই চোখে পড়ে। এতে লুকটা অনেক এথনিক হয়। গয়না মানেই ভারি হতে হবে, তা কিন্তু নয়। রূপার গয়নার দাম অপেক্ষাকৃত কম বলেই তার ভ্যারাইটিও সংগ্রহ করা যায়। আজকাল অক্সিডাইজ গয়নার প্রতি অনেক নারী বিশেষ আকর্ষণ বোধ করেন। আমাদের দেশে রিভাইবেল অব জুয়েলারি চলছে। আগামী দিনগুলোতে সোনার গয়নার প্রচল কমবে ধারণা করা যায়। তখন সোনার চেয়ে অন্য কিছুকে বেশি গুরুত্ব দেবে নারী। এখন যেমন ডায়মন্ডের তুমুল জনপ্রিয়তা চলছে। তবে এটি ব্যয়বহুল বলে অনেকের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। গয়না পরার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেনÑ ০ গরমে ন্যাচারাল কালারের গয়না পরা উচিত। ০ গয়নার ডিজাইন আর ধরণ দুটোই যেমন কমন না নয়। ০ নিজের সন্তুষ্টি বড় বিষয়, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেই সত্যটি উপলব্ধি করুন। ০ গয়না যেন চেহারার চেয়ে বেশি হাইলাইটেড না হয়। ০ আপনার সৌন্দর্যের চেয়ে বাড়তি কিছু যেন না হয় গয়না। ০ লোকে যেন না বলে, বাহ! তোমার গয়নাটা সুন্দর তো। সেই গয়নাটিই সুন্দর ও মানানসই যা দেখে লোকে বলে গয়নাটাতে তোমাকে বেশ মানিয়েছে তো। গয়না তা দামী বা কম দামী যাই হোক না কেন খানিকটা যতœ নিলে ব্যবহার করা যায় দিনের পর দিন। আর এই পরিষ্কারের ঝামেলাটা কিংবা যতœ নেয়াও কঠিন কিছু নয়। ০ সোনার গয়না সব সময় সাদা কাগজে মুড়ে রাখতে হয়। একই সঙ্গে সোনা-রূপার গয়না রাখাটা ঠিক নয়। প্রয়োজনে দু’তিন বছর অন্তর জুয়েলারি থেকে আপনার গয়নাগুলো পলিশ করিয়ে নিন। তবে মনে রাখবেন, গলাভরা সোনা কিংবা পাথর বসানো গয়না কখনও জুয়েলারি শপে দিতে নেই। ০ বাসায় চার-পাঁচ মাস পর পর সাবানপানি ভিজিয়ে নরম ব্রাশ দিয়ে গয়না পরিষ্কার করতে পারেন। পরবর্তীতে এগুলো হলুদ দেয়া পানিতে ডুবিয়ে নিতে পারেন। তাতে গয়নাতে সোনালিভাব বাড়াবে। পার্টিতে কিংবা বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসার পর সোনার গয়না খুলে তা বাতাসে শুকিয়ে নিন। তারপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে তুলে রাখুন। ০ সোনার গয়নার উজ্বলতা ফিরিয়ে আনতে পানি গরম করে তাতে গুঁড়া সাবান ও অ্যামোনিয়া দিন। তারপর সেই মিশ্রণে আপনার সোনার গয়না ভিজিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। নরম ব্রাশ দিয়ে গয়না ঘষে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিলে দেখবেন তা নতুন কেনা গয়নার মতোই ঝকঝকে লাগছে। ০ আর্টিফিশিয়াল জুয়েলারি সামান্য গরম পানিতে সাবান গুলে চুবিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠা-া পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন। এবার তা দেখাবে একেবারে নতুনের মতো। ০ কখনই গয়না পরে গায়ে সুগন্ধি বা পারফিউম মাখবেন না। এতে গয়নার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। সব সময় পারফিউম লাগানোর পর সোনার গয়না পরুন। ০ রূপার গয়না কিছুদিন গেলেই কেমন যেন কালচে বিবর্ণ হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে দু’তিন মাস পর পর সামান্য পানিতে টুথ পাউডার মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে তা গয়নায় মাখিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঘষে মুছে নিলে নতুনভাব ফিরে আসবে খুব সহজেই।
×