ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনিতে উৎপাদন বন্ধ যে কারণে-

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৪ অক্টোবর ২০১৫

মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনিতে উৎপাদন বন্ধ যে কারণে-

শ.আ.ম হায়দার ॥ মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনিতে উৎপাদন এখন বন্ধ। খনি কর্তৃপক্ষ জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি (জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোটিয়াম) ২৩ সেপ্টেম্বর/১৫ তারিখ থেকে খনির উৎপাদন সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে মধ্যপাড়ায় গেলে চোখে পড়ে খনিতে সুনসান নীরবতা। শিলা উত্তোলনের লিফট বন্ধ। শুধু খনির প্রশাসনিক দফতরে কাজকর্ম চলছে। সূত্রমতে, এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি খনির দায়িত্বভার গ্রহণ করে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে উৎপাদন শুরু করেন। ৬ মাসের মধ্যে তারা ৩ শিফটে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন শিলা উত্তোলন করে আসছিল। খনি উন্নয়নের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে উৎপাদনশীল স্টোপে উত্তোলনযোগ্য শিলার মজুদ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এ অবস্থায় প্রতিদিন তিন শিফটের জায়গায় দুই শিফট, এরপর উৎপাদন নেমে আসে এক শিফটে। শেষ পর্যন্ত তারা (জিটিসি) খনি সাময়িকভাবে বন্ধ করে। জিটিসির অভিযোগ, খনি কর্তৃপক্ষ সময়মতো মালামাল ক্রয়ের এলসি না খোলাায় স্টোপ উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হয়। অপরপক্ষে খনি কর্তৃপক্ষ জানান, জিটিসি এলসি খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দাখিল ও চুক্তি মোতাবেক সহযোগিতা না করায় এলসি খোলার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ ও নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, শুরু থেকেই জিটিসি খনির মালিকানা দাবিদার মনে করে। এতে খনি ব্যবস্থাপনা ও ঠিকাদারের মধ্যে কাজের সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হয়ে আসছিল। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মালামাল ক্রয় অথবা খনি উন্নয়নের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবছর কর্ম-পরিকল্পনা দাখিল করার নিয়ম থাকলেও জিটিসি তা যথাযথ অনুসরণ করেনি। ফলে মালামাল ক্রয়ে খনি কর্তৃপক্ষকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তবে খনির উন্নয়ন ও উৎপাদন কাজে ৩৩টি আইটেমের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই এলসি স্থাপন করেছে। জিটিসি যে সকল বৈদেশিক মালামাল ক্রয় করতে যাচ্ছে, সে সকল মালামাল কাস্টমাইজড এবং এর সঙ্গে দুই বছরের খুচরা যন্ত্রাংশ থাকায় তার মূল্য বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি। তাছাড়া এগুলো কোন দেশের ও কোন কোম্পানির বারংবার বলার পরও তারা খনি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেনি। তবে জিটিসি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য প্রোফরমা ইনভয়েস দাখিলের সময় পত্রে অবহিত করেছে যে, মালামাল জাহাজীকরণের পূর্বে বিস্তারিত তথ্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে জানাবে। এছাড়াও তারা স্থানীয় মুদ্রায় যে সকল মালামাল ক্রয় করেছে সেগুলোও বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। জানা যায়, ওই মালামালগুলো দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ক্রয় এবং পরিবহন করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার মূল্য পর্যালোচনা মিটিংয়ে তাদের অতিরিক্ত দাখিলকৃত বিল থেকে ৩ কোটি টাকা কর্তন করা হয়। জিটিসির ভাষ্য, এ ব্যাপারে গঠিত অভ্যন্তরীণ কমিটিতে বিষয়টি রিভিউ হয় এবং দু’পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে তা নিষ্পত্তি হয়। জিটিসি পূর্বের ৫টি স্টোপ থেকে শিলা উৎপাদন করেছে। নতুন ২টি স্টোপের অধিকাংশ উন্নয়ন কাজ শেষ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী ৫টি স্টোপ থেকে শিলা উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে ৫টি স্টোপের উন্নয়ন করতে হবে। তা না করে ২টি স্টোপের উন্নয়ন করা হয়। আগের স্টোপ হতে ৩ শিফটে শিলা উত্তোলন করা হলে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত উত্তোলন সম্ভব ছিল। তাই যন্ত্রপাতি আমদানি করা হলেও তাদের পূর্ণ উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব ছিল না। সমস্যা বুঝতে পেরে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য তারা উৎপাদন কমিয়ে এক শিফটে নেমে আসে। অবশ্য জিটিসি বলেছে যন্ত্রপাতির অভাবে তাদের স্টোপের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। জিটিসি কর্তৃক উৎপাদিত ৫-২০ সাইজের ১ লাখ মেট্রিক টন শিলায় প্রচুর ডাস্ট থাকায় এগুলো বিক্রি করা যাচ্ছে না। সমস্যা নিরসনের জন্য খনি কর্তৃপক্ষ ও জিটিসি সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ক্রেতার চাহিদা, স্পেশিফিকেশন ইত্যাদি সংগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানা যায়। চুক্তি উপেক্ষা করে ৬০-৮০ সাইজের শিলা উত্তোলন করে। যার বিক্রয় মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। শর্তে রয়েছে ডাস্ট উৎপাদন করতে হবে ৭ শতাংশ। এ ব্যাপারে জিটিসি ১৩% বল্লেও খনি কর্তৃপক্ষ বলছে ২০ শতাংশ। ডাস্টের মূল্য অন্যান্য ক্রাশ শিলার চেয়ে ১৮ ডলার কম। ডাস্টের পরিমাণ যৌত্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার জন্য চিঠি দিলেও যন্ত্রপাতির অভাবে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে জানায়। জিটিসির মুখপাত্র মোঃ জামিল জানান, খনির দায়িত্বভার নেয়ার পর কোরিয়ানদের পুরাতন ভারি যন্ত্রপাতি দিয়ে তারা এতদিন কাজ চালিয়ে আসছিল। এগুলোর আয়ুষ্কাল শেষ হলে নতুন যন্ত্রপাতি আনার ব্যাপারে মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানি তথা পেট্রোবাংলার সহযোগিতা দরকার। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অথবা যেকোন কারণে হোক মালামাল আনার ব্যাপারে এলসি খোলার ব্যাপারে তারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি। বর্তমান কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুততার সঙ্গে এলসি ওপেন করেছে। যোগাযোগ করলে মধ্যপাড়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুজ্জামান জানান, কোম্পানির কিছু আর্থিক সমস্যার কারণে আমরা যথাসময়ে যন্ত্রপাতি কিনতে পারিনি। এখন পেট্রোবাংলা ও সরকারের সহযোগিতায় এ সমস্যার সমাধান হয়েছে। যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এলসি খোলা হয়েছে। এগুলো শীঘ্রই আসলে খনি আবার আগের মতো পুরোমাত্রায় চালু হবে। ভূগর্ভের ১২শ’ ফুট নিচে থেকে শিলা তুলতে হয়। তারপরও ট্যাক্স, ভ্যাট, রিয়েলিটি ইত্যাদি দিয়ে শিলার উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে যায়। সরকার এগুলো ছাড় দিলে মধ্যপাড়ার শিলা সহজেই বাজারজাত করা যাবে।
×