ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশে মিশনগুলোতে লোক নিয়োগে দুই মন্ত্রণালয়ের রশি টানাটানি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২ অক্টোবর ২০১৫

বিদেশে মিশনগুলোতে লোক নিয়োগে দুই মন্ত্রণালয়ের রশি টানাটানি

এম শাহজাহান ॥ দুই মন্ত্রণালয়ের রশি টানাটানিতে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে পাসপোর্ট-ভিসাসংক্রান্ত কন্স্যুলার সেবার জন্য জনবল নিয়োগ হতে পারছে না। এতে বিপুলসংখ্যক দেশী-বিদেশী নাগরিকের পাসপোর্ট ভিসা সেবা প্রদান কার্যক্রমের গতি শ্লথ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জনবল নিয়োগে ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ নীতিমালা-১৪’ প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই নীতিমালার আলোকে সচিব কমিটির সুপারিশে প্রথম ও দ্বিতীয় সচিব পদসহ মোট ৬৯টি পদ সৃষ্টির মঞ্জুরি আদেশ জারি করা হয়। বিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদানে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ পদগুলো নিজেদের পদ হিসেবে দাবি করায় নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, নীতিমালা অনুযায়ী জনবল নিয়োগের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে জনপ্রশাসন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী গত ২০ ও ২২ সেপ্টেম্বর কর্মকর্তা নির্বাচনের জন্য সাক্ষাতকার গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে জনপ্রশাসন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি প্রেরণের জন্য অনুরোধ করে পত্র দেয়া হয়। পত্র প্রেরণের পর সাক্ষাতকার গ্রহণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোন প্রতিনিধি পাঠানো হয়নি। তবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাক্ষাতকার গ্রহণের দিন ফ্যাক্স মারফত একটি পত্র প্রেরণ করে প্রতিনিধি না দেয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়। ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে- বাংলাদেশ মিশনসমূহে প্রথম ও দ্বিতীয় সচিব পদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক কর্মকর্তা নিয়োগের নিমিত্ত অনুষ্ঠিতব্য কর্মকর্তাদের সাক্ষাতকারে কোন প্রতিনিধি প্রেরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে এ পদ্ধতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত সংশোধন আনয়ন না অবধি সাক্ষাতকার গ্রহণ কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ সংবলিত চিঠিটি পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ অধিশাখার উপসচিব সুরাইয়া পারভীন শেলী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি পত্র পররাষ্ট্র সচিবকে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, সিনিয়র সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সিনিয়র সচিব অর্থমন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ বরাবর পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি প্রেরণ না করায় গত ২০ সেপ্টেম্বর সাক্ষাতকার গ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত ৫৩ জন কর্মকর্তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে সকাল ৯টায় উপস্থিত হলেও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মনোনীত কর্মকর্তা যথাসময়ে উপস্থিত হোন। চিঠিতে বলা হয়, প্রচলিত সকল বিধি-বিধান অনুসরণে সৃজিত এ সকল পদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত। এ সকল পদ অন্য মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করার সুযোগ নেই। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত পদে কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনুরূপ এ মন্ত্রণালয়ের সৃজিত পদে নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ নীতিমালা-১৪ অনুযায়ী এ সকল পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগসহ অন্যান্য কাজে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট দূতাবাসসমূহে এমআরপি ও এমআরভি সেবা বৃদ্ধিকল্পে এ সকল পদ সৃজন করা হয়েছে এবং তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে প্রচলিত বিধি-বিধান প্রতিপালন করে সৃজিত এসব পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন জরুরী হয়ে পড়ছে। সে লক্ষ্যেই প্রথম সচিব ও দ্বিতীয় সচিবের ১৫টি, প্রশাসনিক কর্মকর্তার ১০টি এবং অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকের ৪৪টি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাক্সিক্ষত সহযোগিতা না করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ পদসমূহকে নিজেদের পদ হিসেবে দাবি করে আসছে, যা ‘এ্যালোকেশন অব বিজনেস’ অনুযায়ী পাসপোর্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিধায় যুক্তিযুক্ত নয়। শুধু তাই নয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ না করার কারণে এ ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে এমআরপি কার্যক্রম সময়সীমার মধ্যে হতে পারছে না। আর তাই আগামী ৯ এবং ১০ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় সচিব পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাদের সাক্ষাতকার গ্রহণের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, নিয়োগের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাই এবার সাক্ষাতকার গ্রহণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি। তিনি বলেন, বিষয়টি ঝুলে গেলে বিপুলসংখ্যক দেশী-বিদেশী নাগরিকের পাসপোর্ট-ভিসা সেবা কার্যক্রমে জটিলতা বাড়বে। এতে জনশক্তি রফতানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
×