ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহযুদ্ধের আগুনে পেট্রোল ঢালছে মস্কো ॥ যুক্তরাষ্ট্র

সিরিয়ায় রুশ বিমান হামলা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২ অক্টোবর ২০১৫

সিরিয়ায় রুশ বিমান হামলা শুরু

রাশিয়া বুধবার সিরিয়ায় বিমান হামলা শুরু করেছে। কয়েক দশকের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির সবচেয়ে বড় এ হস্তক্ষেপে সিরিয়ার চার বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধ এক নতুন অনিশ্চিত পর্যায়ে প্রবেশ করল, যখন প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন অস্থির অঞ্চলটিতে রুশ প্রভাব প্রতিষ্ঠায় প্রবল শক্তিতে এগিয়ে এসেছেন। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে মস্কো জোরের সঙ্গে যে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভূমিতে অবস্থানকারী বিদ্রোহীরা তাৎক্ষণিকভাবে ওই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ হামলা কোন সমন্বয়সাধন ছাড়া একই সময়ে এবং একই অঞ্চলে ওয়াশিংটন ও মস্কোর বিমান হামলা চালানোর বিপজ্জনক আশঙ্কাকেও তুলে ধরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, বাগদাদে একজন রুশ কূটনীতিক পরিকল্পিত হামলার এক ঘণ্টা আগেই এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, আইএসের অবস্থানসমূহের ওপর প্রাত্যহিক বোমা হামলা পরিচালনাকারী মার্কিন বিমান যেন সিরীয় আকাশসীমা পরিহার করে চলে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়ার এই সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং বুধবারও মার্কিন বিমান হামলা অব্যাহত থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যাশ কার্টার বলেছেন, দু’টি দেশের বিমানের মধ্যে যেন সংঘর্ষ না হয় তার উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি ‘যথাশীঘ্র সম্ভব’ রুশ প্রতিপক্ষদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। পুতিন বলেন, তিনি আইএসের ওপর হামলা চালিয়ে ওই অঞ্চলে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতম মিত্র সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সাহায্য করছেন। তবে ওয়াশিংটন এটা ভেবে উদ্বিগ্ন যে, মস্কো আইএসকে পরাজিত করার চেয়ে আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, তার (আসাদ) ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া উচিত। রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে আসাদের প্রতিপক্ষদের মধ্যে এমন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোও আছে যারা আসাদ ও আইএস উভয়েরই বিরোধী এবং তাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমী দেশগুলোর সমর্থন রয়েছে। এদিকে ওয়াশিংটন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় আইএস সন্ত্রাসবাদীদের বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বলে রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে মস্কোকে দোষারোপ করে বলেছে, তারা সিরীয় গৃহযুদ্ধের ‘আগুনে পেট্রোল ঢালছে।’ স্থলভাগের বিভিন্ন সূত্রের খবরে আভাস পাওয়া যায় যে, আসাদের প্রধান বিরোধী পক্ষ ফ্রি-সিরিয়ায় আর্মির সঙ্গে সংযুক্ত গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে বুধবার রুশ বিমান হামলা চালানো হয়। হোমস-এর তালবিসেহর একজন বাসিন্দা বলেন, দু’টি বিমান হামলা প্রধানত শহরটির আবাসিক এলাকাগুলোতে আঘাত হানলে ২০ জন নিহত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাড়াহুড়া করে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, রাশিয়া একদিকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে, অন্যদিকে দেশটি বাশার আল আসাদ সরকারকে সমর্থন দান করছে। একটি সমান্তরাল রাজনৈতিক উত্তরণের পদ্ধতি ছাড়া আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো হলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিই বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, ‘সে কারণে এ দৃষ্টিভঙ্গি ‘পেট্রোলে আগুন ঢালার’ শামিল। কাটার বিমান হামলা বন্ধের দাবি না জানালেও আভাস দেন যে, অবস্থান পরিবর্তনের জন্য রাশিয়ার এখনও সময় আছে। বুধবার মস্কোর বাইরে ভাষণদানকালে পুতিন বলেন, রাশিয়া আগুঞ্জিনা ভেবে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে না, বরং সিরীয় সেনা অভিযানে সাময়িকভাবে বিমান শক্তি যোগাবে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিমান হামলা চালানোর বিষয় নিশ্চিত করে দাবি করেছে যে, হামলায় আইএস সন্ত্রাসবাদীদের সামরিক অস্ত্রশস্ত্র এবং যোগাযোগ সাজ-সরঞ্জামকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, হামলার সংঘর্ষ পরিহার করে চলার জন্য রাশিয়ার গঠনমূলক ভূমিকাকে আমরা স্বাগত জানাব। তবে আজকের (বুধবার) এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ এ ধরনের ভূমিকা পালনের তেমন কোন আভাস দেয় না এবং এতে আমাদের তৎপরতার কোন পরিবর্তন হবে না। বুধবার পরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এবং তার রুশ প্রতিপক্ষ সের্গেই লাভরভ বৈঠক করে ঘোষণা করেন যে, তারা সিরিয়ায় একটি রাজনৈতিক সমাধানের অন্বেষায় একটি নতুন কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করতে যাচ্ছেন। সম্ভবত বৃহস্পতিবারই সংঘাত এড়ানোর এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সিরীয় বিদ্রোহী এবং বিরোধীদের গণমাধ্যম সূত্রগুলো দাবি করেছে যে, রুশ বিমানগুলো সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ হোম্স ও হামায় হামলা চালিয়েছে এবং এতে অন্তত ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। -ইয়াহু নিউজ ও গার্ডিয়ান
×