ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিনায় পদদলিত ৪১ বাংলাদেশী হাজী শনাক্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২ অক্টোবর ২০১৫

মিনায় পদদলিত ৪১ বাংলাদেশী হাজী শনাক্ত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ সৌদি আরবের মিনায় হজ অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে নিহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪১ বাংলাদেশীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৬১ বাংলাদেশী মক্কা ও জেদ্দার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট এ পর্যন্ত যে ৪১ জনের তথ্য দিয়েছে, তার মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় জানা গেছে। আরও ১২ জনের নাম জানা গেলেও বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া ১১ জনের নাম পরিচয় এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বাকিদের পরিচয় জানতে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও মক্কার বাংলাদেশ হজ মিশনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। বাংলাদেশী হজযাত্রীদের মধ্যে এখনও যাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি, তাদের আত্মীয়-স্বজন, সহগামী হজযাত্রী ও হজ এজেন্টদের মক্কায় হজ মিশনের সঙ্গে (কক্ষ-১০৭, ফোন : ০০৯৬৬-(০)১২৫৪১৩৯৮০, ই মেইল : সরংংরড়হযধলল@মসধরষ.পড়স) যোগাযোগ রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল শহীদুল করিম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মিনায় পদদলিত হওয়ার ঘটনায় ৪১ বাংলাদেশী হাজী মারা গেছেন। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন ১৪৮ জন। নিখোঁজ হাজীদের বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ও স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এই তালিকা প্রস্তুত করেছি। এটা ‘ভেরিফাইড’ না। আহত হাজীদের বিষয়ে শহীদুল করিম জানান, মক্কার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬১ জন বাংলাদেশী হাজী এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া অনেকেই আমাদের না জানিয়ে নিহত স্বজনের মরদেহ দাফন করে ফেলেছেন। এ কারণে সঠিক তথ্যটা আমাদের কাছে নেই। হজের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে গত ২৪ সেপ্টেম্বর মিনায় ‘শয়তানের স্তম্ভে’ পাথর ছুড়তে যাওয়ার পথে পদদলনের ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৯৩৪। সৌদি কর্তৃপক্ষ লাশ উদ্ধারের পর ছবি ও আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে এবং তাদের শনাক্ত করার জন্য ছবি প্রকাশ করেছে। ওই ছবির সঙ্গে মিলিয়েই বাংলাদেশীদের শনাক্ত করার কাজ করছেন হজ কর্মকর্তা ও এজেন্সিগুলো। এই প্রক্রিয়ায় এর আগে গত মঙ্গলবার ২৬ বাংলাদেশীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পদদলনের ঘটনার দুই দিন পর সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ ৭৬৯ জনের মৃত্যুর খবর দেন। এরপর হতাহতের তথ্য আর হালনাগাদ করা হয়নি। তবে ইরানের দাবি, নিহতের সংখ্যা চার হাজারের বেশি। সৌদি আরবে অবস্থানরতরাও একই ধরনের কথা বলেছেন। মক্কায় উপস্থিত হাজীরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, নিহতের সংখ্যা সরকারী তথ্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। শনাক্ত না হওয়া বহু লাশ এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে পড়ে আছে। কোথাও কোথাও বিকৃত ক্ষত-বিক্ষত লাশে পচন ধরেছে, গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে রাস্তা থেকে। মক্কায় দুদিন ইন্টারনেট পাওয়া যায়নি। সৌদি কর্তৃপক্ষ যেসব ছবি শনাক্ত করার জন্য দিয়েছে তার মধ্যে বহু কৃষ্ণাঙ্গও রয়েছেন। এদিকে নাইজেরিয়ার এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, জেদ্দার মর্গে ১ হাজার ৭৫ জনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংখ্যাটি সৌদি কর্তৃপক্ষের ঘোষিত নিহতের সংখ্যা ৭৬৯ জন থেকে অনেক বেশি। অন্যান্য দেশগুলোও তাদের কাছে ১ হাজার ৯০ লাশের ছবি পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছে। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, যাদের ছবি পাঠানো হয়েছে তাদের সবার মৃত্যু পদদলনের ঘটনায় হয়নি, অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়েছে কিন্তু পরিচয় শনাক্ত হয়নি, এমন লাশেরও ছবি পাঠানো হয়েছে। সৌদি মুখপাত্র মেজর জেনারেল মনসুর আল তুর্কি জানিয়েছেন, সৌদি আরবে বসবাস করা অনেক বিদেশী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই হজ পালন করেছেন। এছাড়া ১১ সেপ্টেম্বর মক্কার মসজিদুল হারামে ক্রেন ছিঁড়ে পড়ে নিহত ১০৯ জনের ছবিও পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। রবিবার ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইটারে জানিয়েছেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ মৃত ১ হাজার ৯০ হাজীর ছবি প্রকাশ করেছে। সুষমার এই টুইটের সূত্র ধরে মিনার পদদলনে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা বেড়ে যায়। পাকিস্তান ও ইন্দোনেশীয় কর্মকর্তারাও ইঙ্গিত দেন, তাদের কাছেও এক হাজারেরও বেশি এ ধরনের ছবি পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার পরের বিষয়গুলো সৌদি কর্তৃপক্ষ যেভাবে সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছে তার কঠোর সমালোচনা করেছে বেশ কয়েকটি দেশ। ওসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাগরিক হারানো সৌদির প্রতিবেশী দেশ ইরান সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা করেছে।
×