ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশীদের মনে ভীতি সঞ্চারের নীলনক্সা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২ অক্টোবর ২০১৫

বিদেশীদের মনে ভীতি সঞ্চারের নীলনক্সা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রণীত নীলনক্সার স্বরূপ উন্মোচিত হতে চলেছে। হঠাৎ করে বাংলাদেশে উগ্র জঙ্গীপনার অনাকাক্সিক্ষত ভীতি বিশ্বজুড়ে চাউর হয়েছে। ঘটনা যাই হোক এটা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রকারী মহল করতে সক্ষম হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। গোয়েন্দা সূত্রসহ বিশেষজ্ঞ মহল সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ ঘটনার জের হিসেবে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর শেষ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। জঙ্গীপনার বিষয়টিকে ধর্তব্যে আনতে রাজধানী ঢাকায় ইতালীয় এনজিও কর্মীকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিদেশী নাগরিকের হত্যাকা-কে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে এ ঘটনা যে বাংলাদেশকে নিয়ে বিদেশীদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেয় সে লক্ষ্যে করা হয়েছে এবং এতে তারা সফলও হয়েছে। এ ঘটনার পর ইতোমধ্যে দেশের প্রধান প্রধান শহরে বিদেশী নাগরিকদের অবস্থান, কর্মক্ষেত্র ও চলাচলের উপর সরকার কড়া নজরদারি আরোপ করেছে। নজরদারি আরোপের ঘটনা সচেতন মহলে উদ্বেগ কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে বৈকি। এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলতে দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বীজ বপন হয়েছে বহু আগেই। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে না পারা, বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগ করেও সুফল না আসার প্রেক্ষাপটে ষড়যন্ত্রের ডালপালায় কৌশল বদলেছে বলে প্রতীয়মাণ। বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারম্যান বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। সেখানে পলাতক জীবনে থাকা তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে মিলিত হয়ে নতুন কি কূটচাল চালাচ্ছেন তা নিয়েও নতুন জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, গত বুধবার যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সাকাচৌ ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। বুধবার তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারবিরোধী দল বিএনপি তাদের মিত্র যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে নিয়ে নতুন কি ছক কষছে তা নিয়ে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছে। তারা মনে করছে, এ দুটি দল বর্তমান পরিস্থিতিতে সুবোধ বালকের মতো বসে নাও থাকতে পারে। একদিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক আন্দোলন করেও কোন সফলতা আসেনি, এর পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রমও ঠেকানো যায়নি। ফলে তাদের কৌশল ভিন্নমুখী যে হচ্ছে তা গোয়েন্দাদের কাছে নানা ধরনের তথ্য এসে পৌঁছেছে। ঢাকায় ইতালীয় নাগরিককে হত্যার ঘটনাকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির প্রয়াস হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রে জানা গেছে, তাদের কাছে নাশকতা সৃষ্টির আরও খবর রয়েছে। যে কারণে দ্রুত বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, ইউরোপ-আমেরিকা জুড়ে জঙ্গী তৎপরতা এক ধরনের মহামারী রূপ নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সে তুলনায় অবস্থা একেবারে নস্যি। তবে বিভিন্ন নামে জঙ্গী গ্রুপগুলোর কিছু অপকর্ম ঘটে চলেছে। সম্প্রতিক ঘটনা ঘটানোর পর বিভিন্ন মাধ্যমে তা স্বীকার করার প্রবণতাও লক্ষণীয়। এমনকি আইএস নামেও ঘটনার দায়ভার স্বীকার করা হচ্ছে। মূলত এ দায়ভার স্বীকার করার ঘটনা কতটুকু সত্য তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। কিন্তু দেশের বাইরে বিদেশে এসব ঘটনা ফলাও করে চাউর করার অপতৎপরতা চলছে। সর্বশেষ দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দ- কার্যকর না করা পর্যন্ত অজানা নাশকতা ঘটার শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না গোয়েন্দারা। এর পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের নীলনকশার গোপন তৎপরতার তো এখনও অবসান ঘটেনি। গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট অংশ নেয়নি। নির্বাচনের আগে পরে এ জোটের সশস্ত্র ক্যাডাররা সারাদেশে যে নাশকতা চালিয়েছে তা এদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। জ্বালাও পোড়াও হত্যা, দিনের পর দিন হরতাল অবরোধ ডেকে দেশকে অচল করা ও অর্থনীতিকে পর্যদস্তু করাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু সরকার কঠোর অবস্থানে থাকায় এতেও কোন সফলতা আসেনি। ফলে একপর্যায়ে তারা রণেভঙ্গ দিয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেকে সরে যায়নি। এখন বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কিভাবে এবং কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায় তা নিয়ে কূটচালে লিপ্ত বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। বিদেশীদের মনে নেতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে পারলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে বলে মনে করছে। এ বিষয়টি সরকারের উঁচু মহলকে জানান দেয়া হয়েছে। আর এ নিয়ে সরকার দ্রুত পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। কিন্তু এর শেষ দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন-এ ধারণা গোয়েন্দাসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর। চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ॥ বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ট্রিপল মার্ডার, ডাবল মার্ডার ও অস্ত্র উদ্ধারের বিচ্ছিন্ন ঘটনার সঙ্গে উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর ইন্ধন রয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। বিশেষ করে নগরীর সদরঘাটে ট্রিপল মার্ডার, বায়েজিদ বোস্তামীতে ডাবল মার্ডার-এ দুই ঘটনাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা ব্যবহারের আলামত মিলেছে। এ সূত্র ধরেই এ দুই মামলার তদন্ত এগুচ্ছে। এসব বোমার ব্যবহার ধরন এবং ক্ষতির মাত্রাও ছিল একই ধরনের। এ ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ- জেএমবির দিকে সন্দেহের তীর তদন্ত সংস্থার। মূলত সংগঠনের তহবিল যোগাড়ই হত্যাকা-ের নেপথ্যে অর্থ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার ঘটনা নিহিত ছিল। এদিকে, নগরীর অপরাধ জগতে সম্প্রতি একে-৪৭, এসএমজির মতো ভারি অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর সদরঘাট এলাকায় একটি বিদেশী কোম্পানির ডিলার প্রতিষ্ঠানের অর্থ ছিনতাই হয়েছে ভারি অস্ত্র সজ্জিত সন্ত্রাসীদের দ্বারা। গত ৪ সেপ্টেম্বর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় একটি মাজারে ঢুকে মাজারের পীর ও তার খাদেমকে জবাই করার ঘটনা ঘটে। ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা উচ্চক্ষমতার বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এসব হত্যাকা- নিয়ে মামলা হলেও পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে পুলিশ নিশ্চিত করেছে এসব সন্ত্রাসীর জঙ্গীসংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বটে, তবে অপকর্মগুলো ঘটাচ্ছে নিজেদের স্বার্থে। এদের সঙ্গে বড় ধরনের কোন নেটওয়ার্কের তথ্য এখনও মেলেনি। তবে জঙ্গী তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের কাছ থেকে জিহাদী বইসহ নানা ধরনের প্রচারপত্র, ভিডিও, লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে। সর্বশেষ হামজা ব্রিগেড নামে যে একটি জঙ্গী গ্রুপের জন্ম হয়েছিল এটির মৃত্যু হয়েছে আঁতুড়ঘরে। ২৯ সদস্যের মধ্যে ২৮ জন গ্রেফতার হয়েছে। শুধু তাই নয়, এদের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে সুপ্রীমকোর্টের তিন আইনজীবী ও এক গার্মেন্টস মালিক গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে।
×