ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর ক্ষমতায়ন

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২ অক্টোবর ২০১৫

নারীর ক্ষমতায়ন

বাংলাদেশের সংবিধানে সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ থাকলেও নানাবিধ কারণে দীর্ঘদিন এ দেশের নারীরা নানান বৈষম্যের শিকার। এ বৈষম্যমূলক আচরণের মূলে পুরুষদের ওপর তাদের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা। বর্তমানে দেশে নারীর ক্ষমতায়ন দৃশ্যমান হয়েছে। নারীদের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নানান বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অনেক এগিয়েছে। সরকারের নেয়া পদক্ষেপ ও দীর্ঘদিন নারী প্রধানমন্ত্রী থাকার কারণে বাংলাদেশে নারী শিক্ষার হার বেড়েছে, হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ের মতে, বিগত ছয় বছরের পরিসংখ্যানে নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তাদের দাবি, নারী উন্নয়নে গত ছয় বছরে বাংলাদেশ ২৫ ধাপ এগিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারপ্রধান, বিরোধীদলীয় প্রধান ও জাতীয় সংসদের স্পীকার নারী। বর্তমানে জাতীয় সংসদে নারী সংসদ সদস্যের হার ২০ শতাংশ। রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসন ৫ থেকে ৫০-এ উন্নীত করেছে। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সারাদেশে প্রায় ১২ হাজার মহিলা প্রতিনিধি কাজ করছেন। স্থানীয় সরকার পরিচালনাকারীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই মহিলা। কর্মক্ষেত্রে প্রতিরক্ষাসহ নানান ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এখন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্য কমানোর সূচকে বাংলাদেশ এখন ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। গত দুই দশকে বাংলাদেশ মাতৃ মৃত্যুহার ৬৬ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে। সে লক্ষ্যে সারাদেশে ১৩ হাজার ৫শ’ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাস থেকে ছয় মাস করা হয়েছে। নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর আওতায় প্রায় ছয়টি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ছিন্নমূল ও প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা। জাতীয় বাজেটে নারীদের উন্নয়নে ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। বর্তমানে আরএমজিতে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণের পরিমাণ ৩৬ শতাংশ। নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার সাতটি বিভাগে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপনের পাশাপাশি সহিংসতা রোধে নারীদের পরামর্শ দেয়ার জন্য হেল্পলাইন চালু করেছে। বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়নে এসব ক্ষেত্রে অবস্থান এক অভূতপূর্ব সাফল্য। এসব উপলক্ষ যে লিঙ্গ বৈষম্যহীন দেশ গড়ে তোলার আয়োজনে অনেকটা পথ পাড়ি দিচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এতে যে নারীর ক্ষমতায়ন ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হবে তা হয়তো বলা যাবে না। নারীকে তার কর্মস্থলে অবস্থান এবং নিজ দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা ভোগ করতে দিতে হবে। সামাজিক কর্মকা-ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজে নারীর অবদান গুরুত্বহীন হলে প্রকৃত অর্থে নারীর ক্ষমতায়ন হবে না। নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক- এই প্রত্যাশা সবার।
×