ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিমলা খাদ্য কর্মকর্তার দম্ভোক্তি

‘ভেজাল চাল নেয়ার ক্ষমতা আছে বলেই নিয়েছি’

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

‘ভেজাল চাল নেয়ার ক্ষমতা আছে বলেই নিয়েছি’

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ দাম্ভিকের সঙ্গে দু’চারজন মন্ত্রীকে পকেটে রাখার কথা উচ্চারণ করে ডিমলা উপজেলায় চাল সংগ্রহ অভিযানে খাদ্য কর্মকর্তা বিলকিস বেগম একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ডিমলা উপজেলায় চলতি বছরে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ১৩২ টন। প্রথম দফায় ৬ জুন থেকে সংগ্রহ অভিযানের সময়সীমা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। গুদামে স্থান সঙ্কুলান ও নানাবিধ জটিলতায় সংগ্রহ অভিযান পরিপূর্ণ না হওয়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগ্রহ অভিযানের সময় বৃদ্ধি করে দ্বিতীয় দফায় ২৮ সেপ্টেম্বর করা হয়। খাদ্য গুদামে চাল প্রবেশের সময় প্রতিটনে খাদ্য কর্মকর্তা ২ হাজার টাকা হিসেবে ৫৮ লাখ ৩০ হাজার ও লেবার বাবদ ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। লেবারদের কাছে এ কমিশনের টাকা আদায়ে তাকে এ কাজে সহায়তা করছেন বিলকিস বেগমের স্বামী ইদ্রিস আলী। উপজেলায় চাল সংগ্রহ অভিযানে ১২৭ মিল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়। শুরু থেকে নি¤œমানের পুরাতন ও রেশিও বহির্ভূত চাল মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করা হয়। দু’একজন হাতেগোনা মিল মালিক উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বিলকিস বেগমের সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন অটো চালের মিল থেকে সর্টার করা পুরাতন ও পচা চাল নতুন চাল হিসেবে বস্তাপ্রতি একশ’ টাকা করে ঘুষের বিনিময়ে তা গুদামে প্রবেশ করায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিক অভিযোগ করে বলেন, শতভাগ নিয়ম মাফিক চাল প্রসেস করলেও খাদ্য কর্মকর্তা বিলকিস বেগমকে ঘুষ না দেয়ার কারণে তাদের চালের ত্রুটি বের করে তা গুদামে ঢোকার অযোগ্য ঘোষণা করেন। খাদ্য কর্মকর্তা একক সিদ্ধান্তে চাল ব্যবসায়ী আহসানুল কবীর লেলিন ও সামছুল হকের পার্টনার নুর আলম পুরাতন চাল নতুন হিসেবে রাতের আধারে, এমনকি ছুটির দিনে গুদাম চাল প্রবেশ করিয়ে বিল উত্তোলন করেন। অযোগ্য ৩শ’ টন চাল প্রোগ্রামের নামে জেলার বিভিন্ন উপজেলার খাদ্য গুদামে পাঠিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রাক ভাড়া ও লেবার বিল দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। চুক্তিবদ্ধ মিল মালিক ইসাহাক বলেন, আমার মিলের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয় ৩৫ টন চাল। খাদ্য কর্মকর্তা বিলকিস প্রতিবস্তায় ১শ’ টাকা করে দাবি করেন। তার দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলে লাইসেন্সে উল্লিখিত নিয়ম অনুযায়ী হাসকিং মিলের চাল গুদামজাত করার জন্য নিয়ে গেলেও তিনি সেই চাল অযোগ্য ঘোষণা করে ফেরত দেন। পরবর্তীতে চাল ব্যবসায়ী আহসান কবীর লেনিনের দ্বারা চালগুলো পাঠালে তিনি তা ঘুষের মাধ্যমে খাদ্যগুদামে প্রবেশ করান। চাল ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম, জাহিদ হাসানসহ অনেকেই একই অভিযোগ করেন। মিল মালিক আহসান কবীর লেলিনের একটি মাত্র মিল থাকলেও খাদ্য কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে বেশকিছু মিলের বরাদ্দ ক্রয় করে সে একাই ১ হাজার ১৪০ টন ও সামছুল হক ৮১০ টন চাল সরবরাহ করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর এসডি-২ খাদ্য গুদামে রাতের অন্ধকারে সামছুল হকের ৫শ’ বস্তা ও একই রাতে এসডি-৩ খাদ্য গুদামে আহসানুল কবীর লেনিনের ৬শ’ বস্তা চাল প্রবেশ করানো হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৯শ’ ১৫ টন চাল প্রবেশ করানো হয়েছে মর্মে খাদ্য কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ডিমলা খাদ্য গুদামে পচা পুরাতন চাল সংগ্রহকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বিলকিস বেগম উপস্থিত সাংবাদিকসহ গুদামের লেবারদের সামনেই বলেন, আমি নীলফামারী জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। দু’চারজন মন্ত্রী আমার পকেটে থাকে। ভেজাল চাল নেয়ার ক্ষমতা আছে বলেই নিয়েছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় খাদ্য বিভাগের লোকজন তদন্তে এলে তাদের খুশি করতে বকশিশ দিতে হয়। আমি কী বাড়ির জমি বিক্রির টাকা এনে উর্ধতন কর্মকর্তাকে বকশিশ দেব?
×