ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসবের পর মৃত ঘোষণা!

দাফনের আগে নড়েচড়ে উঠল সদ্যোজাত শিশুটি

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

দাফনের আগে নড়েচড়ে উঠল সদ্যোজাত শিশুটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২৮ সেপ্টেম্বর ॥ কুমিল্লায় গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেলিভারির পর মৃত ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টা পর দাফনের আগে কান্নাকাটি করে নড়েচড়ে ওঠে এক শিশু। ডাক্তারের অবহেলায় জন্মের পর মৃত ঘোষণা করায় ৫০ কিলোমিটার দূরে দাফনের জন্য নেয়া ও ফের হাসপাতালে আনার পথে ৬ ঘণ্টা ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে মারা যায় নবজাতক শিশুটি। ওই নবজাতক জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি (কেচকিমুড়া) এলাকার মাহবুবুর রহমানের ছেলে। এ ঘটনায় কুমিল্লা নগর ও চৌদ্দগ্রামজুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও তোলপাড় চলছে। সোমবার নগরীর লাকসাম রোডের কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি (কেচকিমুড়া) এলাকার মোঃ মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী রুবিনা আক্তারের (২৫) প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে গত ২১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা নগরীর লাকসাম রোডের কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে (কক্ষ নং- ৪৮-বি) এনে ভর্তি করা হয়। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সে স্বাভাবিকভাবে (নরমাল ডেলিভারি) একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে। নবজাতকের পিতা মোঃ মাহবুবুর রহমান ও রুবিনার ভাই ওমর ফারুক জানান, প্রসূতি রুবিনা আক্তার কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালে ভর্তির পর গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ মলিনা রানী কু-ুর অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সোমবার বেলা ১২টার দিকে রুবিনার নরমাল ডেলিভারি হয় এবং এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। এ সময় ডাঃ মলিনা রানী কু-ু হাসপাতালে ছিলেন না। কিন্তু ডেলিভারির পর কর্মরত ডিউটি ডাঃ ফারজানা আক্তার ডেইজিসহ সংশ্লিষ্ট নার্স শিশুটির দেহ কালো বর্ণ ধারণ করেছে ও শিশুটি মারা গেছে বলে জানায় এবং হাসপাতালের ময়লা ফেলার বালতিতে শিশুর মরদেহ ফেলে দেয়ার কথা বলে। এতে শিশুর বাবা অনীহা প্রকাশ করলে তারা (নার্স) তাৎক্ষণিকভাবে পেকিং করে একটি বিস্কুটের কার্টনে ভর্তি করে তার মায়ের সিটের নিচে প্রায় এক ঘণ্টা রেখে দেয় এবং পেকিং বাবদ ২শ টাকা নেয়। নবজাতকের পিতা মোঃ মাহবুবুর রহমান আরও জানান, যেহেতু শিশুটি জন্মের পর কান্নাকাটি করেছে তাই জানাজার জন্য আমার শ্বশুর ইব্রাহিমের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠাই এবং আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমার স্ত্রীর পাশে থাকি। শিশুর নানা ইব্রাহিমসহ এলাকার লোকজন জানান, শিশুকে বাড়িতে নেয়ার পর বিকেল ৪টার দিকে দাফনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় শিশুটি কান্নাকাটিসহ নড়াচড়া ও চোখ এদিক-ওদিক করতে থাকে। এ খবর পেয়ে জানাজায় আগত লোকজন ছাড়াও এলাকাবাসী জড়ো হয়। পরে ওই শিশুকে তাৎক্ষণিকভাবে ওই হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে সন্ধ্যা ৬টার দিকে (জন্মের প্রায় ৬ ঘণ্টা পর) শিশুটি মারা যায়। ওই হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শামীম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে দেখব। এদিকে প্রসূতি রুবিনা আক্তার এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ বিষয়ে ডাঃ মলিনা রানী কু-ু রাতে সাংবাদিকদের জানান, শিশুর নরমাল ডেলিভারির সময় আমি হাসপাতালে ছিলাম না, তবে ডিউটি ডাক্তার ফারজানা আক্তার ডেইজি আমাকে জানিয়েছিল শিশুটি মৃত হয়েছে। তবে শিশুর এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা অমানবিক। ওই হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ ফজলুর রহমান জানান, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে ওই শিশুকে দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে আনার পর থেকে সংশ্লিষ্ট ডিউটি ডাক্তার ও শিশু পেকেটকারী ব্রাদারকে হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অমানবিক এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রামসহ কুমিল্লা নগরীতে বেশ তোলপাড় চলছে।
×