ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামের বনে গাছ কাটা কমে এসেছে, ফেরানোর চেষ্টা অতীত ঐতিহ্য

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

চট্টগ্রামের বনে গাছ কাটা কমে এসেছে, ফেরানোর চেষ্টা অতীত ঐতিহ্য

শাহীন রহমান ॥ এক সময়ে এশিয়ান হাতির অবাধ বিচরণ ছিল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অবস্থিত চুনতি, ইনানী ও টেকনাফের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে। এসব অভয়ারণ্যে এখনও হাতির অস্তিত্ব থাকলেও বনভূমি উজাড়ের কারণে তাদের বিচরণ ক্ষেত্র অনেটাই সীমিত। এছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব উপমহাদেশীয় জীববৈচিত্র্যের আঁধার ছিল এসব বনাঞ্চল। এক সময় প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের পরিপূর্ণ হলেও জলাবায়ু পরিবর্তনসহ অবৈধ বসতি স্থাপন, বনভূমি উজাড় করে কৃষি জমিতে রূপান্তর, অপরিকল্পিতভাবে গাছপালা কাটা, বনজসম্পদ আহরণের কারণে বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বনাঞ্চলের দ্রুত অবক্ষয়ের কারণে বনের বিশালাকার গুরুত্বপূর্ণসহ অন্যান্য ছোটবড় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। তবে বনাঞ্চল ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকার ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকার ও জনগণেরসহ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্তমানে এসব এলাকার বনাঞ্চল ধ্বংসের হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পেয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে লোকজনদের। তাদের বিকল্প জীবিকার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, কমিউনিটি ভিত্তিক ঘূর্ণায়মান তহবিল সৃষ্টি করা হয়েছে। বনের ওপর যে কোন ধরনের অপরাধ মোকাবেলার জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধি, বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে সহব্যবস্থাপনা কমিটি। তারা জানান, এসব অঞ্চলের বনের ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় সহব্যবস্থাপনা প্রকল্প কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে স্থানীয় বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকায়নের মাধ্যমে বনের ওপর নির্ভরশীলা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কাজে বন বিভাগ অনেকটাই সফলতা পেয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জীববৈচিত্র্যের একটি বিশাল অংশ নিয়ে গঠিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। চুনতি অভয়ারণ্য বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এটি চুনতি অভয়ারণ্য নামেও পরিচিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে এর অবস্থান। এর আয়তন ৭ হাজার ৭৬৪ হেক্টর। বনের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বিপন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ১৯৮৬ সালে এই অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বন্য এশিয়া হাতির যাতায়াতের একটি করিডোর হিসেবে এই অভয়ারণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে বন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য এই বনের ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় এখানে সহব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বন বিভাগ জানিয়েছে এই অভয়ারণ্য বিশালাকায় শতবর্ষী মাদার, গর্জন গাছের জন্য সুপরিচিত যা এই বনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তবে ক্রমাবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, নির্বিচারে গাছ কাটা, কৃষি জমিতে রূপান্তরের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থান ধ্বংস প্রভৃতি কারণে এ বনের অস্তিত্ব হুমকির আজ হুমকির সম্মুখীন । চুনতি অভয়ারণ্য চট্টগ্রামের বাঁশখালি, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলা এবং কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার জুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জ ও জলদি রেঞ্জ নিয়ে এ অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় চুনতি ও জলদি রেঞ্জের অধীনে সাতটি বিট অফিস স্থাপন করা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে টিলাময় এবং অনেক জায়গায় পাহাড়ী ভূপ্রকৃতি, প্রচুর অগভীর ও গভীর খাদ রয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে প্রচুর খাঁড়ি বা পাহাড়ী ছড়া এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে। এই ছড়াগুলোই বন্যপ্রাণীদের পানির উৎস হিসেবে কাজ করছে। বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে পরিবেশগত প্রভাব ও বনজসম্পদের ওপর মানুষের বর্ধিত চাপের কারণে বনভূমি উজার হয়ে গেছে। এরপরও এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গর্জন, চাপালিশ, বাঁশ, বেত, গুল্ম ও ঘাস জাতীয় প্রজাতি বিদ্যমান রয়েছে। এ বনাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য প্রাণী বন্য হাতি। এছাড়াও বন্য শুকর, বানর, হনুমান, মায়াহরিণ, সাম্বরসহ অন্য প্রাণী লক্ষ্য করা যায়। ২০১২-১৩ সালে জিআইজেডের আর্থিক সহায়তায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগ পরিচালিকত জরিপে দেখা গেছে অভয়ারণ্য এলাকায় ১৬০ প্রজাতির পাখি, ৯৯ প্রকার অমেরুদ-ি প্রাণী ৩৩ প্রকার সরীসৃপ, ২২ প্রকার স্তন্যপায়ী, ২৩ প্রকার উভচর প্রাণী রয়েছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে ৯৭ সালের তুলনায় এ বনে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা জানান, ৮৬ সালে চুনতি বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হলেও অবৈধভাবে গাছ কাটা, জনবসতি স্থাপন, কৃষি ফসলের আবাদ, অভয়ারণ্যের উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদের প্রচ- ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থা রোধ করতে বন বিভাগ বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা, আইপিএসি, জিআইজেড ও ইউএসআইডিকে সঙ্গে নিয়ে গ্রবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এই বনাঞ্চলে। এর ধারাবাহিকতায় চুনতি জলদী রেঞ্জে, সহব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়াও বন রক্ষায় জন্য স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে কমিউনিটি প্রেট্রোলিং গ্রুপ। তারা বন বিভাগ ও সহব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বন রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। চুরতি বনভূমি এলাকার বড়হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমান মোঃ জুনায়েদ বলেন, বন রক্ষায় এ অঞ্চলের লোকজনকে বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকায়িত করা হচ্ছে। ফলে লোকজন আর বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করছে না। তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। জনগণ এখন বন ধ্বংসের বিষয়ে এখন অনেকটাই সচেতন। তিনি জানান, এলাকার ১৬ পরিবারকে বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চুনতি অভয়ারন্যের ন্যায় মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান রক্ষায় নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। ২০০৪ সালে এক গেজেট ৩৯৫.৯৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয় এটি। বর্তমানে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, বৈলাম, চম্পা, গামার, ডুমুর, জাম, ডেওয়া, বট, বাঁশ, বেত, চাতিমসহ অসংখ্য প্রজাতির গাছ রয়েছে এ বনে। উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে ২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩০ প্রজাতির ১৩ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রাণী শিয়াল, বাগডাস, বানর, লালবুক, টিয়া, ময়না, শালিক অন্যতম। বর্তমানে সহব্যবস্থপনা কমিটির মাধ্যমে লোকজনকে বিকল্প জীবিকার জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে স্থানীয়রা বাগান থেকে কাঠ সংগ্রহ কমিয়ে সেলাইসহ নানা ধরনের হাতের কাজের মাধ্যমে জীবিকা সংগ্রহ করছে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অধীনে ফুলছড়ি রেঞ্জে মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। ইনানী সংরক্ষিত বনাঞ্চল ॥ ইনানী সমুদ্র সৈকতের সামন্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল। কক্সবাজারের ইনানী ও আশপাশের বনাঞ্চল এক সময়ে জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ছিল। এশিয়ান হাতির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে ছিল এই বানাঞ্চলে। কিন্তু ৯৫ সাল থেকে ২০০৩ সালে বন বিভাগের এক জরিপে দেখা গেছে ৮ বছরের ইনানীর বনভূমি হতে প্রায় ৪২ শতাংশ প্রাকৃতিক বন উজাড় হয়ে গেছে। অবৈধ বসতি স্থাপন, বন উজাড় করে কৃষি জমিতে রূপান্তর, অপরিকল্পিভাবে গাছপালা কাটা, বনজ সম্পদ আহরণে কারণে বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে বনকে রক্ষার জন্য বনবিভাগ, স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা ও বননির্ভর জনগণকে নিয়ে আরণ্যক ফাউন্ডেশন ইনানী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সহব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির জানান, বর্তমানে সহব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম, বিকল্প জীবিকা সৃষ্টি করে বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে বনজ সম্পদ রক্ষার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে বনের হারানো জীববৈচিত্র্য আবার আসতে শুরু করেছে। তিনি জানান, ইনানী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জরিপে ৩১৬ ধরনের বন্যপ্রাণী, ৩১৭ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে এ বনে। এ বনে এখনও এশিয়ান হাতির দেখা মেলে। বনের ভেতরে তাদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে সকাল সন্ধ্যায় প্রায় হাতির দল বনের বাইরে চলে আসে। ২০০৯ সাল থেকে বন বিভাগ, আরণ্যক ফাউন্ডেশন, স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা শেড ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চলে সহব্যবস্থাপনা প্রকল্প শুরু করে। এর মাধ্যমে ইনানী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চার পাশে বনের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল ২ হাজার পরিবারকে বনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিকল্প জীবিকার জন্য তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, কমিউনিটি ভিত্তিক ঘূর্ণায়মান তহবিল সৃষ্টি করা হয়েছে। বনের ওপর যে কোন ধরনের অপরাধ মোকাবেলার জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধি বননির্ভর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে সহব্যবস্থাপনা কমিটি। তিনি জানান, প্রকল্পের অর্থায়নে বন বিভাগ ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চলে ১ হাজার ৩৫৬ হেক্টর এলাকায় দেশীয় প্রজাতির চারা রোপণ করেছে। বনের সৌন্দর্য উপভোগে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পরিবেশবান্ধব পর্যটন বা ইকোটুরিজমের জন্য সোয়ানখালী বিটে একটি ইকোটুরিজম কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সহব্যবস্থাপনা মাধ্যমে শীলখালী গর্জন বাগান রক্ষায়ও সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। বন বিভাগ জানিয়েছে নানা কারণে এ বাগান ধ্বংস হলেও এখনও দেশের সবচেয়ে বড় গর্জন বাগান এটিই। ’৯১ সালে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এ বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বর্তমানে অসংখ্য বড় বড় গর্জন গাছ সমুদ্র তীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শীলখালী রেঞ্জের সদর বিটের ৭২ একর জমি নিয়ে প্রাকৃতিকভাগে জন্মানো এ গর্জন বাগান বর্তমান গর্জন স্যাম্পল প্লট হিসেবে পরিচিত। ১৯৫৩ সালে এ এলাকাটিকে গর্জন স্যাম্পল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, লাগামহীন জনসংখ্যার চাপ, জবরদখল, মিয়ানমার হতে রোহিঙ্গাদের আগম, অবৈধভাবে গাছ চুরি ইত্যাদি কারণে গর্জন বাগানটি ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের সম্মুখীন। এ বাগানে ২০০৪ সাল থেকে সহব্যবস্থাপনার আওতায় সহব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হয়। উক্ত এলাকায় সহব্যবস্থাপনা কমিটি স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বন রক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ বন রক্ষার জন্য ২০০৮ সালের ২৩ মার্চ সহব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আব্দুর রফিক মৃত্যুবরণ করেন। তার স্মরণে উক্ত এলাকায় ২৩ মার্চ সহব্যবস্থাপনা দিবস পালন করা হয়। টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ॥ টেকনাফ পেনিনসুলায় অবস্থিত জীববৈচিত্র্যের এক অনন্য আধার টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এখানে প্রায় ৫৩৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৬১৩ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ। এছাড়াও উদ্ভিদের মধ্যে ১৪২ প্রজাতির গাছ, ১১২ প্রজাতির গুল্ম ৮৭ প্রজাতির লতা, ১০ প্রজাতির অর্কিড, ১ প্রজাতির পরজীবী রয়েছে। এছাড়াও ২৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৫৪ প্রজাতির সরিসৃপ, ২৪৩ প্রজাতির পাখি, ৪৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। বন বৃক্ষের মধ্যে গর্জন, তেলশুর চাপালিশ, সিভিট, মুস, বন্য প্রাণীর মধ্যে এশিয়ান হাতি, মায়াহরিণ, মেছোবাঘ, গন্ধ গোকুল, সজারু, শিয়াল, বন্য শুকর, বানর হনুমান, ধনেশ পাখি, বড় আকারের ধূসর কাঠ ঠোকরা, অন্যতম। বন বিভাগ জানিয়েছেন আয়তনের দিক দিয়ে এ অভয়ারণ্য দেশের তৃতীয় বৃহত্তম। এখানে আসলে হাতির দেখা মিলবেই। এছাড়াও এলাকার ঝর্ণাধারা ৭শ’ মিটার উঁচু খাড়া পাহাড়, ঐতিহাসিক কদমগুহা, সুউচ্চ উচ্চ টেংগা, নেটং পাহাড়, প্রভৃতি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নেটং হিল এবং বাহার ছড়া হিলে ওপর থেকে একসঙ্গে সাগর নদী ও মিয়ানমার সীমান্ত দেখা যায়। যা পৃথিবীর খুব কম দেশে এ ধরনের সুযোগ উপভোগ করা যায়। বন বিভাগ জানিয়েছে বনভূমি জবরদখল, অবৈধ গাছ কর্তন এ বনের বর্তমানে প্রধান সমস্যা। এটি মোকাবেলার জন্য ২০০৪ সালে এখানে সহব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করা হয়েছে। সহব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে বনজসম্পদ রক্ষা এবং রক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য পুরুদ্ধারে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এ কাজে উক্ত অঞ্চলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির। তিনি জানান, বনজসম্পদ রক্ষায় বন পাহারা দল গঠন করা হয়েছে। বনকর্মীদের নেতৃত্বধীন এই দল নিয়মিত বনে টহল প্রদান করে বনজসম্পদ রক্ষায় অবদান রাখছে। পুরুষ-মহিলারা একসঙ্গে বন পাহারা দিয়ে থাকে। আর এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ টেকনাফ সহব্যবস্থাপনা কমিটি ২০১০ সালে ‘ওয়ানগিরি মাথাই’ পুরস্কার লাভ করেছে। কমিটির সদস্য খুরশিদা বেগম এ পুরুস্কার গ্রহণ করেন।
×