ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ১৭ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ;###;মূল লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দরিদ্রতা পুরোপুরি নির্মূল

জাতিসংঘে চূড়ান্ত অনুমোদন পেল এসডিজি

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জাতিসংঘে চূড়ান্ত অনুমোদন পেল এসডিজি

নাজনীন আখতার ॥ অসমতা ও দারিদ্র্য নির্মূলসহ ১৭টি উদ্দেশ্য নিয়ে গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিজ নিজ দেশের পক্ষে লক্ষ্য পূরণে কাজ করার অঙ্গীকার করে মতামত দিয়েছে। জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এসডিজির ওপর আলোচনায় মতামত গ্রহণের মাধ্যমে তা অনুমোদন দেয়া হয়। অধিবেশনে ২০১৬ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এসডিজির নতুন লক্ষ্যমাত্রার সময় নির্ধারণ করে এর উদ্দেশ্য পূরণে দেশগুলো ঐকমত্যে পৌঁছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসডিজি বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য নতুন দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে। যেখানেই অসমতা ও দারিদ্র্য চিহ্নিত হবে সেখানেই তা নির্মূলের উদ্যোগ নেয়া হবে। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এমডিজির আলোকে এসডিজিতে যেসব এজেন্ডায় পরিবর্তন আনা হয়েছে তা শক্তিশালী বিশ্ব থিমে পরিণত হয়েছে। এর মূল অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক দেশকে তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। কোন দেশকেই পেছনে পড়ে থাকা যাবে না। বাংলাদেশ এসডিজির কিছু কিছু লক্ষ্য পূরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেছেন, এমডিজি-২০১৫ আমরা সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশ শেষ করতে পেরেছে। সব লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই এ লক্ষ্যমাত্রা শেষ হচ্ছে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে এসডিজি। তিনি বলেন, অনেক দেশ এমডিজি ২০১৫ অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে অর্জন করতে পেরেছে। এখন এইসব অর্জন বাস্তবায়নে সূচক ঠিক করা হবে। তিনি বলেন, এসডিজি (২০১৬-২০৩০) মোট ১৭টি লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য পুরোপুরি নির্মূল করা। এছাড়া অন্যান্য লক্ষ্যের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়ন, অভিবাসন, স্নায়ুতাত্ত্বিক প্রতিবন্ধিতা (অটিজম), পানিসম্পদ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নেতৃত্বে রয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশের মতামত ও পদক্ষেপকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম অর্জন। উল্লেখ্য, এসডিজি (২০১৬-২০৩০) এ ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে, যেকোন রূপে অবস্থান নেয়া দারিদ্র্য নির্মূল, ক্ষুধা দূর করতে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও পুষ্টিবৃদ্ধি এবং টেকসই কৃষি, সব বয়সের মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রদান, লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা, আধুনিক, নির্ভরযোগ্য ও বহনযোগ্য এনার্জি নিশ্চিত করা, সবার জন্য পূর্ণ সময়ের উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে অসমতা কমিয়ে আনা, নিরাপদ বসবাস, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা, সমুদ্রসম্পদ ব্যবহার, ইকো বাস্তুসংস্থান সুরক্ষা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত, টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করা ইত্যাদি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সরকারী ও বেসরকারীভাবে প্রতিনিধিরা এসডিজি নিয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। শেষ দিন রবিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কার্যালয়ে এসডিজির আওতায় নারীর সমতা ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্যানেল আলোচক হিসাবে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পীকার তার বক্তব্যে বলেন, যে কোন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজন নারী-পুরুষের সমতা। অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পিছনে রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। নারীর কাজের স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিতকল্পে উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক সকল প্রকার উন্নয়ন অগ্রগতিতে নারীরা অবদান রাখছে। নারীকে বাদ দিয়ে কোন উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশ আজ সহস্রাব্দের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সকল সূচকে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। সমগ্র পৃথিবী আজ সহস্রাব্দের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শেষে তথা এমডিজি থেকে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি অর্জনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। স্পীকার বলেন, যে কোন উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হলে নারীকে পিছিয়ে রেখে সে অর্জন সম্ভব নয়। তাই উন্নয়নকে টেকসই রূপ দিতে হলে নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিতে হবে। সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের মধ্যমে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক সকল প্রকার উন্নয়নকে টেকসই রূপদান করতে হবে । যে কোন নীতিমালা প্রণয়নে জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণকে প্রাধান্য দিতে হবে। সমতাভিত্তিক উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে হবে।
×