ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

ইউরোপের সমকালীন শরণার্থী সমস্যা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ইউরোপের সমকালীন শরণার্থী সমস্যা

সাম্প্রতিককালে ইউরোপের শরণার্থীদের সমস্যা ও প্রত্যাশা পৃথিবীব্যাপী দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিশেষত ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ গ্রীসের উপকূলে ৪ বছরের সিরীয় শিশু আয়লানের মৃতদেহ পরে থাকার ছবি বিপন্ন মানবতার বিপরীতে বিত্তবান ও দৃশ্যত মানবাধিকার সচেতন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্ষেত্রে ভূমিকাকে বিদ্রƒপ ও ভর্ৎসনা করেছে। ফটোগ্রাফার নিলুফার দিমির তার সুতীক্ষè ও চৌকস লেন্স দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন নিরাশ্রয়ের আর্তি ও মানবতার কাছে এখনও অপূরিত প্রত্যাশা। ইউরোপের এই সাম্প্রতিক শরণার্থী সমস্যার উৎস দ্বিমাত্রিক। এক, সাম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির প্রান্ত এলাকা, বিশেষত লিবিয়ার রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিরাপত্তার অনুপস্থিতি ও সন্ত্রাস সাধারণ মানুষকে ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে। বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ- নারী ও পুরুষ এ সব এলাকা থেকে যুদ্ধ, অত্যাচার ও ভীতির পরিবেশ থেকে ইউরোপের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জানা গেছে, এসব দেশ ও এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪২ হাজার শরণার্থী ইউরোপের পথে পাড়ি দিতে চেষ্টা করছেন। এসব শরণার্থীর মধ্যে ৪০ লক্ষাধিক এসেছেন সিরিয়া থেকে। এই ৪০ লাখ শরণার্থী সিরিয়ার লোকসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। ১১ লাখ শরণার্থী এসেছেন গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সোমালিয়া থেকে এবং ২৬ লাখ আশ্রয় খুঁজছেন নিরাপত্তাহীন আফগানিস্তান থেকে। দুই, ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্ব যারা এসব শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে সক্ষম, তারা এলাকা বিশেষে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এসব দেশের বিপুলসংখ্যক জনগণ মনে করেন, শরণার্থীদের এই অন্তঃপ্রবাহ তাদের দেশে কেবল বেকারত্ব ও অন্তর্কলহ সৃষ্টি করবে না, উপরন্তু তাদের জাতীয় বা ধর্মীয় পরিচয় ম্রিয়মাণ করে তুলবে, জনমিতিক ভারসাম্য বিপন্ন করবে। ফলত যখন শরণার্থীদের সংখ্যা ও প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন এসব বিত্তশালী দেশ তাদের আশ্রয় দিতে খুব একটা ইচ্ছুক অবস্থানে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ক্রোয়েশিয়ার প্রশিক্ষিত পুলিশ বাহিনী সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টায় হামাগুঁড়ি দেয়া সিরীয় এক শিশুকে তার ঈপ্সিত আশ্রয়ের প্রতিকূলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থেকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বলয় ও প্রযুক্তিকে মানবতার বিপরীতে প্রতিভাত করে ন্যায়নীতিকে বিশ্ববিবেক থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে বলে বিবিসি বিদিত করেছে। সিরিয়া থেকে শরণার্থীরা আসছেন গৃহযুদ্ধের দাবানল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে। তারা সাধারণত সিরিয়া থেকে তুরস্কে যান এবং সেখান থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করেন। আফগানিস্তান থেকে শরণার্থীদের ইউরোপ যাওয়ার কারণ দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার বিদ্যমানতা ও নিরাপত্তার অভাব এবং ইউরোপের বিত্তশালী জীবনের আকর্ষণ। এসব আফগানী পাকিস্তান হয়ে ইরানে প্রবেশ করেন। তারপর ইরান থেকে তুরস্ক এসে এজিয়ান সাগর পার হয়ে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা করেন। ইরিত্রীয়া থেকে শরণার্থীরা আসেন সে দেশের সহিংসতা, জঙ্গীবাদ ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে। এরা ইথিওপিয়া বা সুদান হয়ে সাহারা মরুভূমির প্রান্তসীমা ধরে লিবিয়ায় পৌঁছান। লিবিয়া থেকে আদম কারবারিদের খায়েস মেটাতে সমর্থ হলে তারা ভাঙ্গাচোরা নৌকা নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেন। নাইজিরীয়া থেকে শরণার্থীরা আসেন মূলত উপজাতীয় বিভেদ ও উগ্রপন্থী ধর্মান্ধদের সহিংসতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। অপব্যবস্থাপনা ও সম্পদের অপব্যবহার নাইজিরিয়ার সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কষ্টকর মাত্রায় বিনষ্ট করেছে। উগ্রপন্থী ধর্মান্ধ প্রতিষ্ঠান বোকো হারামের কুখ্যাতি এখন বিশ্বব্যাপী ছড়ানো। সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্যের কশাঘাত সহ্য না করতে পেরে নাইজিরীয়দের অনেকেই ইউরোপে পাড়ি দিতে চান। আফ্রিকার উত্তর উপকূলীয় দেশ থেকে ইউরোপ অভিমুখে তাদের সমুদ্র পার হওয়ার যাত্রা শুরু হয়। সোমালিয়া থেকে ইউরোপ অভিমুখে শরণার্থীদের বের হওয়ার মূল কারণ, ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের সঙ্গে সরকারের সংঘর্ষ উৎসারিত জননিরাপত্তার অভাব। সোমালিয়ানরা সাধারণত কেনিয়া, উগান্ডা ও দক্ষিণ সুদান হয়ে ইরিত্রীয়দের মতো ইউরোপে যেতে চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক বিত্তবান কেনিয়া হয়ে ইরানে বিমানে আসেন এবং তারপর ইরান ও তুরস্কের সীমান্ত হয়ে সমুদ্র পার হয়ে ইউরোপ অভিমুখে গ্রীসের বিভিন্ন দ্বীপে আশ্রয় নেন। এ ক্ষেত্রে স্বাগতিক আশ্রয় স্থান হিসেবে গ্রীসের লেসবস ও লেরস দ্বীপ সচেতন এবং সহৃদয় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছে। পাকিস্তানীরা হেঁটে ইরানে যান, তারপর বাসে করে ইরান-তুরস্কের সীমান্তে পৌঁছে সীমান্ত পার হয়ে বলকানের উপত্যকা ধরে তুরস্কের উপকূলে পৌঁছান। সেখান থেকে তারা পূর্ব ইউরোপ কিংবা ইতালি হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্য দেশে পৌঁছার চেষ্টা করেন। ইরাক থেকে শরণার্থীরা তুরস্ক হয়ে ইউরোপে যেতে চেষ্টা করেন। কয়েক যুগ ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধের তা-ব থেকে মুক্তি পেয়ে সুদানীরা ইউরোপের পথ ধরেন। তারা সাধারণত লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছতে চেষ্টা করেন। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রারম্ভে, সময়ে ও পরে। জার্মানিতে এবং জার্মানি কর্তৃক দখলকৃত দেশসমূহে নাজিবাদের আধিপত্যে প্রধানত ইহুদিরা তাদের বহু পুরুষ ধরে বাস করা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। এসব বাস্তুত্যাগীর এক বৃহৎ অংশ যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পান। আর এক অংশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পরোক্ষ সমর্থন ও কারসাজিতে আজকের প্যালেস্টাইন ও ইসরাইলকে তাদের বাসভূমি হিসেবে বেছে নিয়ে সেখানে বসতিস্থাপন করেন। জার্মানরা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে প্রায় ৬০ লাখ সোভিয়েতবাসীর বাস্তুচ্যুত করে অপরাধী হিসেবে মানুষের বাসের অনুপযুক্ত বন্দী শিবিরে রাখে। এদের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত ৩৫ লাখ মারা যান। যারা বেঁচে ছিলেন তাদের তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠানোর পর বিশ্বাসঘাতক হিসেবে বিবেচনা করে সোভিয়েতরা তাদের বন্দী জীবনযাপন করতে বাধ্য করে। মহাযুদ্ধে বিজয়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন যুগোশ্লাভিয়া ও রোমানিয়া থেকে লক্ষাধিক জার্মানকে শ্রমদাস হিসেবে রাশিয়ার অভ্যন্তরে এবং আজকের অস্ট্রিয়া ও জার্মানির পূর্বাংশে প্রেরণ করে। প্রায় ১.৫ কোটি জার্মান এই প্রক্রিয়ার বাস্তুহারা হন এবং ২০ লাখ মারা যান। ১৯৪৪ সালে পোল্যান্ড ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউক্রাইন কর্তৃক তাদের সীমান্ত নতুনভাবে নির্ধারণ করার ফলে ২১ লাখ পোল এবং ৪.৫ লাখ ইউক্রেনিয়ান তাদের বাস্তুভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এছাড়া প্রায় ২ লাখ ইউক্রেনিয়ান দক্ষিণ-পূর্ব পোল্যান্ড স্বেচ্ছায় ত্যাগ করে ইউক্রেনে ফিরে আসেন ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যক তৃতীয় দেশে আশ্রয় পান। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে পাকিস্তান ও ভারত রাষ্ট্রের সৃজন প্রক্রিয়ায় প্রায় ১.৫ কোটি লোক তখনকার ভারত ও পাকিস্তান থেকে যথাক্রমে এখনকার পাকিস্তান ও ভারতে আশ্রয় নেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এত বিশাল আকারের বাস্তুচ্যুতি আর কোথাও এমনিভাবে ঘটেনি। এই বাস্তুত্যাগের প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০ লাখ শরণার্থী প্রাণ হারান। এর পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এখনকার বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১ কোটি লোক বাস্তুত্যাগ করে চলে যেতে বাধ্য হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর তারা আবার নিজ দেশে ফিরে আসেন। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপর্ণ সম্পর্ক এবং উভয় সরকার কর্তৃক যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করার কারণে এই শরণার্থীদের দুদিকে যাওয়া ও আসা মোটা দাগে সফল হয়। ১৯৭৯-৮০ সালে ভিয়েতনামের যুদ্ধের সময় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় খুঁজে পান। একই সময়ে কয়েক হাজার ভিয়েতনামী উদ্বাস্তু কানাডাতেও আশ্রয় নিতে সমর্থ হন। ১৯৭৫ থেকে ‘৯৫ সালে লাওসে গৃহযৃদ্ধের কালে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার লাও জনগণ দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এদের মধ্যে ১ লাখ ৮৪ হাজার পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আশ্রয় পেতে সমর্থ হন। ১৯৭৮ সালে ভিয়েতনাম থেকে প্রায় ৭ লাখ ভিয়েতনামী শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও পার্শ্ববর্তী থাইল্যান্ডে আশ্রয় পান। কম্বোডিয়া থেকে ১৯৮০-৯০ দশকের দিকে ২ লাখ ৬০ হাজার শরণার্থী থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় আশ্রয় খুঁজে নিতে সক্ষম হন। পৃথিবীব্যাপী প্রায় ২৫ লাখ ভিয়েতনামী, লাও এবং কম্বোডিয়ান ১৯৮০ থেকে ৯০ দশকে তাদের দেশের বাইরে আশ্রয় খুঁজে পান । এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পান প্রায় ১৩ লাখ। এর বাইরে চীনে ২ লাখ ৬৩ হাজার, কানাডায় ২ লাখ, অস্ট্রেলিয়ায় ১ লাখ ৮৫ হাজার, ফ্রান্সে ১ লাখ ২০ হাজার, জার্মানিতে ৩১ হাজার, যুক্তরাজ্যে ২৫ হাজার, মালয়েশিয়ায় ১০ হাজার, জাপানে ১০ হাজার, নিউজিল্যান্ডে ১৩ হাজার বাস্তুত্যাগী আশ্রয় লাভ করেন বলে জানা গেছে। ১৯৪৭ সালে এই উপমহাদেশের বিশাল আকারের শরণার্থী সমস্যা অনেকাংশে ব্রিটিশ সাম্র্রাজ্যবাদের কারসাজি হিসেবে বিবেচ্য। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা পাকিস্তানী স্বৈরশাসন কর্তৃক সৃষ্ট। এর বাইরে আন্তঃদেশ যুদ্ধ বিগ্রহের ফলে সৃষ্ট শরণার্থী সমস্যার ফলশ্রুতি ছাড়া ওপরে উল্লেখিত সকল ক্ষেত্রেই শরণার্থী সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের কায়েমি স্বার্থ রক্ষাকরণে হীন প্রচেষ্টা প্রযুক্ত করে উপনিবেশ-উত্তর সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের মধ্যে জাতি বা গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিদ্বন্দি¦তা ও এর বলয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপপুষ্ট গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করণে। আজকের ইউরোপে যেসব শরণার্থী আসছেন তাদের অধিকাংশ এককালে ইউরোপীয় দেশ বা জাতিসমূহের উপনিবেশবাদী বা অনৈতিকভাবে দখলকৃত দেশ থেকেই ফিরতি-উত্তর প্রজন্মের যাত্রী। অন্য কথায় ইউরোপীয় দেশসমূহ থেকে ইউরোপীয় দখলদাররা যখন এশিয়া ও আফ্রিকার এসব দেশ উপনিবেশনে দখল নিয়েছিল বা করায়ত্ত করেছিল, তখন তারা তাদের দেশ থেকে আরেক দেশে বিপুলসংখ্যক লোকত্যাগ উৎসারিত জনমিতিক অসমতা বা বৈসাদৃশ্য সৃষ্টির কথা বিবেচনায় স্থান দেয়নি। সে জন্যই এশিয়া ও আফ্রিকার দেশ থেকে ইউরোপে আগত অভিবাসীরা প্রকাশ্যে প্ল্যাকার্ড নিয়ে নির্দ্বিধায় এখন ঘোষণা করছেন-‘তোমরা ওখানে ছিলে বলেই আজ আমরা এখানে’ (ডব ধৎব যবৎব নবপধঁংব ুড়ঁ বিৎব ঃযবৎব )। সমকালে শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানে সকল ইউরোপীয় দেশ স্বাগতিক কিংবা সহায়ক সমাজ হিসেবে নিজেদের প্রতিভাত করতে পারে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসার সময়ে হাজার হাজার শরণার্থীর বেদনাদায়ক মৃত্যুর পটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে বলে সদস্য দেশসমূহের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অকিঞ্চিৎকর এবং তাও সকল দেশ কর্তৃক গৃহীত হয়নি। জার্মানি যতটুকু উদারপন্থী হয়েছে, হাঙ্গেরী কিংবা ডেনমার্ক ততটুকু হতে পারেনি। বাংলাদেশ সংবাদপত্রে লাল কালির বিজ্ঞাপনে হাঙ্গেরিয়ান সরকার কোন অবৈধ শরণার্থী গ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এককালের ইমরে নাগির হাঙ্গেরী থেকে লক্ষাধিক হাঙ্গেরিয়ানকে সোভিয়েতের যাঁতাকল থেকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব কর্তৃক মুক্তি দেয়ার ইতিহাস এখনকার হাঙ্গেরিয়ানরা ভুলে গেছেন বলে মনে হয়। ক্রোয়েশিয়া শরণার্থীদের জন্য তার সীমান্ত বন্ধ করে দূরাত্মার নজির স্থাপন করেছে। চলবে...
×