ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পে স্কেল ইস্যুতে মাঠে নামছে সব শ্রেণীর শিক্ষক সমাজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পে স্কেল ইস্যুতে মাঠে নামছে সব শ্রেণীর শিক্ষক সমাজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদের ছুটি শেষে এবার পে স্কেল ইস্যুতে নতুন করে আন্দোলনে নামছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আন্দোলন ও আলোচনা দুটোই এক সঙ্গে চালানোর কৌশল নিয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে কর্মবিরতি, শিক্ষা অফিদফতরে অবস্থানসহ বৃহত্তর কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামছেন সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে শিক্ষকরা পে স্কেলে মর্যাদা রক্ষায় লাগাতার কর্মসূচীর প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এদিকে আগামী বুধবারের মধ্যে দাবি না মানলে ৬ অক্টোবর থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। একই সঙ্গে তারা হুমকি দিয়েছেন, বেতন বৈষম্য না কমালে আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার কোন দায়িত্বই পালন করবেন না। জানা গেছে, অন্যান্য স্তরের শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে ভেবে-চিন্তে আলোচনার মাধ্যমে এগোতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকার। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়টিতে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে সমাধান চান সরকারের সংশ্লিষ্টরা। রবিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বেতন বৈষম্য দূরীকরণে গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির ওপর আস্থা রাখার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষকদের সকল সমস্যার সমাধানের উদ্দেশে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এ কমিটি সকল উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে। এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। স্কেল প্রস্তাবের পর থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন ও পদমর্যাদা নিশ্চিতকরণের জন্য এবং পৃথক বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন। ১৬ সেপ্টেম্বর ‘বেতন বৈষম্য দূরীকরণ-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’ গঠন করে সরকার। এ কমিটির প্রধান করা হয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। অন্য সদস্যরা হলেনÑ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। খোঁজা হচ্ছে সঙ্কট সমাধানের বিকল্প পথ ॥ অবশেষে সঙ্কট সমাধানের আশা জেগেছে আন্দোলনরত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নতুন বেতন কাঠামোয় বিলুপ্ত টাইম স্কেলের একটি বিকল্প পদ্ধতি আসতে যাচ্ছে। একই পথে সমাধান আসতে পারে সরকারী কলেজের শিক্ষকদের সমস্যার বিষয়েও। অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যার অংশ হিসেবেই ঈদের আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠক করেছেন। কর্মকর্তারা নিশ্চিত করছেন, শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে নতুন বেতন কাঠামোয় বিলুপ্ত হওয়া টাইম স্কেলের পরিবর্তে একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি আনতে দুই মন্ত্রণালয় সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে শিক্ষকদের বেতন ভাতা ও মর্যাদা দুটিই নির্ধারিত হবে। শিক্ষকরা যাতে টাইম স্কেলের পরিবর্তে একটি বিকল্প পদ্ধতিতেও একই সুযোগ-সুবিধা পান সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিকল্প পথ কেন? এ প্রশ্নে কর্মকর্তারা বলছেন, টাইম স্কেল বাদ দেয়া হয়েছে। এখন শুধু শিক্ষকদের জন্য বহাল রাখতে হলে অন্যদের সমস্যা হবে। শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে অন্য বিকল্প পদ্ধতির ব্যবস্থা করা হবে। তবে সেই পদ্ধতি এখনও খুঁজে বের করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি পরিষ্কার করে না বললেও জানিয়েছেন, সরকার শিক্ষক সমাজের মর্যাদার বিষয়টিকে সব সময়েই প্রধান্য দেয়। এখনও দিচ্ছে। শিক্ষকদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে আমরা আন্তররিক। কিভাবে বিষয়টির সুন্দর সমাধান হয় তা নিয়েই কথা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই আমি শিক্ষক সমাজের বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছি। মাননীয় অর্থমন্ত্রীও সমাধানের জন্য আন্তরিক। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি দেখবেন। আসলে কিভাবে শিক্ষকদের বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান করা যায় সেজন্যইতো কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দু’একদিনের মধ্যেই পরবর্তী কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামবেন শিক্ষকরা। এবার সরকারের সঙ্গে আলোচনা চললেও একই সঙ্গে আন্দোলন কর্মসূচীও অব্যাহত রাখতে চান শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন জানিয়ে দিয়েছেন, গত চার মাস ধরে বেতন কাঠামোর বিষয়টি নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ আমরা দেখি নাই। আমাদের প্রথম ও প্রধান দাবি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো। এ দাবিতে আন্দোলনও চলবে, আলোচনাও চলবে। ফলে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি এখনও ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে। সাত অক্টোবর থেকে সরকারী কলেজে নতুন করে আন্দোলন ॥ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় ১৫ হাজার সদস্যের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে ঈদের আগে দু’দিনের কর্মসূচী শেষে এবার নতুন কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতির ডাকে আগামী ৭ অক্টোবর জেলা-উপজেলায় মানববন্ধন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। ১০ অক্টোবরের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাস বা সরকার কোন পদক্ষেপ না নিলে ১৪ ও ১৫ অক্টোবর তারা সব সরকারী কলেজে ক্লাস বর্জন করবেন। এছাড়া আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলেছেন, ‘আমরা চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছি। আগের পদমর্যাদা থেকে আমাদের অবনমন করা হয়েছে। এটা কেউ মানতে পারবে না। পারে না। শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলছিলেন, ২৭০টি সরকারী কলেজ, তিনটি আলিয়া মাদ্রসা, ১৪টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ও ১৬টি কমার্শিয়াল কলেজে আমাদের কর্মসূচী চলবে। বর্তমানে কলেজের অধ্যাপকেরা (সর্বোচ্চ পদ) চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা। সিলেকশন গ্রেড থাকায় এতদিন আংশিক অধ্যাপক গ্রেড-৩-এ যেতে পারতেন। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়ায় এখন এই পথ বন্ধ হয়ে গেল। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা গ্রেড-৫ থেকে পদোন্নতি পেয়ে সরাসরি গ্রেড-৩ এ উন্নীত হন। অথচ শিক্ষকদের বেলায় গ্রেড-৫ থেকে পদোন্নতি হওয়ার পর গ্রেড-৪ এ উন্নীত করা হয়। এই বৈষম্য নিরসনেরও দাবি করে আসছেন তাঁরা। কিন্তু সেটা নিরসন না করে উল্টো সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় শিক্ষকেরা আরও বৈষম্যের শিকার হবেন। মাধ্যমিকে আন্দোলন প্রাথমিকে লাগাতার কর্মবিরতির হুমকি ॥ ৭ দফা দাবিতে এবার সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে বেতন গ্রেড ১১ তম ধাপে পুনঃনির্ধারণসহ ১১ দফা দাবিতে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরাও। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের (বুধবার) মধ্যে দাবি না মানলে ৬ অক্টোবর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি হুমকি দিয়েছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। বেতন কাঠামো পুর্নর্নিধারণ করে বৈষম্য কমিয়ে না আনলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার হুমকিও দিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি নাসরিন সুলতানা বলেন, বেতন বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যদি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বেতন স্কেল পুর্নর্নিধারণ করে বৈষম্য কমিয়ে না আনা হয় তাহলে আমরা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সকল দায়িত্ব পালন বর্জন ও কর্মবিরতির মতো কর্মসূচী দিতে বাধ্য হব। ১১ দফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, অষ্টম বেতন স্কেল পুর্নর্নিধারণ করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে পদায়ন করতে হবে। এ ছাড়া সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বন্ধ এবং সহকারী শিক্ষক পদকে ‘এন্ট্রি পদ’ ধরে যোগ্যতার ভিত্তিতে মহাপরিচালক পদ পর্যন্ত শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি দিতে হবে। তিনি বলেন, নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তন করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রী নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেছেন, আমরা সহকারী শিক্ষকরা ক্রমাগত বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৮ম জাতীয় পে স্কেল ঘোষণার পূর্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় বলেছিলেন, বেতনের বৈষম্য কমানো হবে। কিন্তু তার কথা অমান্য করে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করা হলো।
×