ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাকারিয়া স্বপন

গুড জব, তারানা হালিম

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

গুড জব, তারানা হালিম

তারানা হালিম মন্ত্রী হওয়ার পর টেলিযোগাযোগ খাতে একটা নতুন রক্তপ্রবাহ শুরু হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে রক্তশূন্যতায় ভুগছিল বলেই মনে হয়। এটা দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী একটি খাত। কিন্তু কার্যক্রম ছিল স্থবির এবং সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খল খাত বললেও হয়ত বেশি বলা হবে না। তিনি এসে অন্তত বেসিক কিছু বিষয়ে হাত দিতে শুরু করেছেন। এর ফলও তিনি পেতে শুরু করেছেন। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, তাকে মৃত্যু হুমকি দেয়া হয়েছে! একটি স্বাধীন দেশে একজন মন্ত্রীকে জীবননাশের হুমকি দেয়া যেতে পারে, এটা ভাবতেই কেমন জানি লাগে। একজন টেলিকম মন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে যদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা যায়, সেখানে আমি-আপনি কোন্ ছাড়! তবে এটা থেকে একটি বিষয় অনুমান করা যায়, এই খাতটি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং তিনি কিছু কঠিন বিষয়ে হাত দিয়ে ফেলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাঁর যে স্ট্র্যাটেজি দেখছি তাতে বোঝা যাচ্ছে, তিনি সফল হয়ে যাবেন। তিনি যে একটা মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন, সেটা কিছুটা অনুমান করা গেছে। তাকে থামিয়ে দেয়া সহজ হবে না এবং আশা করা যায়, সেটা বাংলাদেশের টেলিকম খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সঠিক পথ চলা হবে। টেলিকম খাতের সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটা হচ্ছে, কোটি কোটি সিমকার্ড বেনামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। আজকে আমি সেটা নিয়েই লিখতে যাচ্ছি। তবে এছাড়াও অনেক কঠিন বিষয় রয়েছে, যেগুলো এই খাতকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়নি। যেমন, এতদিনে সিঙ্গেল নাম্বার পোর্টাবিলিটি হয়ে যাওয়ার কথা। অর্থাৎ আপনি আপনার পুরনো নম্বর রেখেই অন্য অপারেটরে সুইচ করতে পারবেন। দীর্ঘদিন ধরে এটা নিয়ে টালবাহানা চলছে। বড় অপারেটর বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে এটাকে এখন পর্যন্ত হতে দেয়নি। মোবাইল অপারেটরদের ট্রান্সমিশন সেবা, ফিক্সড টেলিফোন সেবা, ফিক্সড ইন্টারনেট সেবা ইত্যাদি দেয়ার কথা নয়। কিন্তু তারা ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে এগুলো করে আসছে এবং এগুলো দেখার কেউ নেই। তাতে স্থানীয় অন্য সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মারা গেছে এবং যাচ্ছে। পাশাপাশি আইজিডব্লিও, আইসিএক্স, আইআইজি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের এলোমেলো অবস্থা ঠিক করা, জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ নানা কাজে দীর্ঘসূত্রতা দেখা গেছে। এমন উদাহরণও আছে যে, গ্রাহকের বিশাল অঙ্কের টাকা মেরে দিয়েছে এক মোবাইল অপারেটর। বিটিআরসি তাকে সেই টাকা ফেরত দেয়ার জন্য মাসের পর মাস চিঠি দিয়ে আসছে। তারা থোরাই পাত্তা দিচ্ছে বিটিআরসিকে। গ্রাহক এখনও সেই টাকা ফেরত পাননি। আমি নিশ্চিত, তা আর কখনই পাবেন না। আবার দেশে ওয়াইম্যাক্স অপারেটরগুলো মৃত্যুমুখে। আমরা ধরেই নিয়েছি, একটি অপারেটর মারা যেতেই পারে! কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে রেখে মানুষকে সেবা দেয়া যায় কিনা, সেটা আমরা ভাবী না। কিন্তু টেলিকম নীতিমালার একটি বড় দিক হলো, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি নিয়মের ভেতর আনা, যেন সবাই তার তার জায়গায় টিকে থাকতে পারে। এমন অসংখ্য অনিয়মের কথা লিখে পত্রিকার পাতা ভরে ফেলা যাবে। কিন্তু লিখে লাভ কী! কাজ তো কিছু হবে না। আশা করছি, নতুন মন্ত্রী তারানা হালিম তার এই গতিকে ধরে রাখতে পারবেন এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করে শিল্পটিকে একটি নিয়মের ভেতর নিয়ে আসবেন। দুই. সিমকার্ড রেজিস্ট্রেশন নিয়ে আগেও অনেকবার লিখেছি। বিগত ১৫ বছরে অন্তত ৪/৫ বার লিখেছি। বিভিন্ন সময়ের জাতীয় দৈনিক খোঁজ করলে সেগুলো পাওয়া যাবে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এর গুরুত্বটা যে কেউ বুঝতে পারেন না, তা নয়। সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী, মন্ত্রণালয়, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, প্রযুক্তিবিদ থেকে শুরু করে ব্যাংকার এবং সাধারণ মানুষও বুঝতে পারেন এর গুরুত্ব। কিন্তু কোন এক কঠিন আঁধারের জন্য এটা বিগত ১৫ বছরেও হয়ে ওঠেনি। এটাই বাস্তবতা। দিন যত যাচ্ছে, এর জটিলতা তত বাড়ছে। এই কারণে, যখনই সিম রেজিস্ট্রেশনের কথা বলা হয়, তখনই অনেক মানুষ এর সমালোচনা করেন। বিশেষ করে যারা ইতোমধ্যেই সঠিক কাগজপত্র দিয়ে সিমকার্ড নিয়েছেন। তারা কেন বার বার একই কষ্টের শিকার হবেন! কিছু মানুষ অন্যায় করেছে, তার শাস্তি কেন অন্যকে পেতে হবে। এবারও যখন এই রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কথা হয়েছে, তখনও মানুষকে রিএ্যাক্ট করতে দেখা গেছে। কিন্তু এর একটি চিরস্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেন বার বার একই প্যাঁচাল মানুষকে শুনতে না হয়। এটা তো সবাই স্বীকার করছেন যে, পুরো প্রক্রিয়াটাকে কলুষিত করেছে মোবাইল অপারেটররা। এই দোষ আর অন্য কাউকে দেয়া যাবে না। একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের অধীনে ১৪ হাজারের বেশি সিমকার্ড রেজিস্ট্র্রেশন হয়েছে এবং সেটা মাত্র একটি উদাহরণ নয়; বিশাল বড় একটি সংখ্যা এভাবে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এই তথ্য মোবাইল কোম্পানিগুলো জানে না কিংবা জানত নাÑ এটা বিশ্বাস করবে কেউ? যে মোবাইল কোম্পানিগুলো ভুয়া প্যাকেজে অটো-সাইন-আপ করিয়ে আপনার পকেট থেকে টাকা নিয়ে নিতে পারে, তারা জানে না কত সিমের মালিক একই ব্যক্তি- এটা হতে পারে না। তারা যদি আমাকে টেকনিক্যালি জিজ্ঞেস করেন, তাহলে তো বলব, অবশ্যই নয়। তারা খুব ভাল করেই জানে, কোন্ সিমের মালিক কে? তবে আইনের দিক থেকে কি এটা অন্যায়? হয়ত নয়। কারণ কোথাও বলা হয়নি, কোন একজন ব্যক্তি নিজের নামে ১৪ হাজার সিমকার্ড নিতে পারবে না। একাধিক সিম নেয়ার অধিকার তার আছে। তবে, সেই সিমকার্ড অন্যকে নিয়মিত ব্যবহার করতে দেয়ার বিধি-নিষেধ টেলিকম এ্যাক্টে রয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা হলো, আমি জানব কিভাবে, কে সঠিক কাগজ দিল, আর কে ভুয়া কাগজ দিল। আমার কাছে তো কোন ডাটাবেজে এক্সেস নেই যে পরীক্ষা করে দেখব। তাছাড়া ২০০৮ সালের আগে তো জাতীয় পরিচয়পত্রই ছিল না। তখনকার সিমগুলোর কী হবে? এমন যুক্তি-তর্কে গেলে দিন শেষ হয়ে যাবে। সমস্যার আর সমাধান হবে না। যেহেতু এবারে এটাকে কঠিন হস্তে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, সবারই উচিত হবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করা। যে এই কাজে সহযোগিতা করবে না কিংবা বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে, তাকে রাষ্ট্রবিরোধী বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। তিন. সমস্যা তো ছোট নয়। ১৩ কোটি সিমকার্ড বিক্রি করা হয়েছে। তবে, সেগুলো অবশ্যই ১৩ কোটি মানুষের কাছে নয়। আমি যতটুকু বাংলাদেশের টেলিকম সেক্টরকে দেখেছি, তাতে আমার ধারণা প্রায় ৯০ ভাগই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সিমকার্ড নিয়েছে। হয়ত মাত্র ১০ ভাগের মতো মানুষ সঠিক কাগজপত্র দিয়ে সিমকার্ড নিয়েছে। এই হিসাবে হয়ত ১ কোটি সিমকার্ড কিংবা তারও কম সঠিক হতে পারে। বাদবাকি সবই ভুয়া, যেগুলোকে একটা সঠিক রেজিস্ট্রেশনের ভেতর আনতে হবে। এই বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনার জন্য মাননীয় প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম একটি পদ্ধতির কথা বলেছেন, যার অনেকটাই আমি ২০০৮ সালে একটি দৈনিকে লিখেছিলাম। এখানে পদ্ধতিটা নিয়ে আবার একটু লেখা যেতে পারে, যেন সাধারণ মানুষও বিষয়টি নিয়ে সচেতন এবং মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। ধাপ-১: সেলফ রেজিস্ট্রেশন ১৩ কোটি সিমকার্ড যদি ৫ কোটি মানুষও ব্যবহার করে থাকে (একজনের একাধিক সিম), তবুও এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে টেনে বিভিন্ন সেন্টারে নিয়ে যাওয়াটা কষ্টকর হবে, ভোগান্তি হবে। তাই প্রথমেই একটা সেলফ রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সবাই তার নিজের মোবাইল থেকে নিজের নাম, পিতার নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর একটি নির্দিষ্ট নম্বরে এসএমএস করে দেবে। কেউ নিজে এসএমএস করতে না পারলে, তিনি তার সন্তান কিংবা আশপাশের মানুষের সহায়তা নেবেন এবং এর জন্য জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে একটু প্রচারণা চালালেই মানুষ জেনে যাবে। এর জন্য ১ মাস সময় বেঁধে দেয়া যেতে পারে। যারা এই সময়ের ভেতরে এসএমএস পাঠাতে ব্যর্থ হবে, তাদের সিমকার্ডগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। কারণ এগুলো কেউ ক্লেইম করেনি। পাশাপাশি একটি ফিরতি মেসেজে তাকে জানিয়ে দেয়া যে, তার তথ্য সঠিকভাবে সংগৃহীত হয়েছে। যদি কেউ দেশের বাইরে থাকেন, পরবর্তীতে তিনি মোবাইল কোম্পানির কাস্টমার সেবা কেন্দ্র থেকে তার সিমকার্ড রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তবে এই প্রক্রিয়ায় অন্তত সকল সিমকার্ডের মালিকানার (যারা অন্তত ক্লেইম করেছেন) তথ্য পাওয়া যাবে। ধাপ-২: ক্লিন-আপ করা একটি বড় অঙ্কের সিমকার্ড সেলফ রেজিস্ট্রেশন প্রসেসে বাদ পড়ে যাবে। সেগুলো নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। এখন যেগুলো ক্লেইম করেছে, সেখানে মূলত দুটি ভাগ থাকবে। এক ভাগে থাকবে যাদের সকল কাগজপত্রই আগে দেয়া আছে। তাদের আপাতত কোন ঝামেলায় না ফেললেই হলো। আর যারা ক্লেইম করেছেন, কিন্তু পুরো কাগজপত্র নেই কিংবা সঠিক কাগজপত্র নেই, তাদের একটা সময় বেঁধে দিয়ে (হয়ত আরও ১ মাস) সেই কাগজপত্র অনলাইনে আপলোড করতে বলা যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল ইউনিয়ন পর্যন্ত ইন্টারনেট রয়েছে (ইউনিয়ন সেবা কেন্দ্র)। সেখানে গিয়ে তারা কাজটি করতে পারবেন। অনেকে মোবাইল কোম্পানিগুলোর সেবা কেন্দ্রে গিয়েও এটা করতে পারবেন। আবার অনেকেই বাসায় বসেই আপলোড করে দিতে পারবেন। যখনই কেউ তার ডাটা আপলোড করে দেবে, তাকে একটা এসএমএস পাঠানো যেতে পারে, সেখানে একটা স্ট্যাটাস বলে দেয়া যেতে পারে। একটি স্মার্ট সফটওয়্যার তৈরি করা ফেলা যাবে, যা কিনা গ্রাহকের এই সকল তথ্যের মধ্যে ম্যাচিং করে বলে দেবে, কার কার তথ্য সঠিক, কোন তথ্য পাওয়া যায়নি কিংবা কোথায় ঝামেলা রয়েছে। শুধু সেই সকল গ্রাহককে পুনরায় মেসেজ পাঠিয়ে তাদের তথ্যগুলো সঠিক করে নেয়া যেতে পারে। আর যারা সঠিক কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হবেন, তাদের সিমকার্ডগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ধাপ-৩: নতুন গ্রাহকদের রেজিস্ট্রেশন নতুন গ্রাহকদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য তো একটি নতুন সিস্টেমের প্রস্তাবনা করাই হয়েছে, যার মাধ্যমে ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর সিমকার্ড এ্যাক্টিভেট করা হবে। পৃথিবীর প্রায় দেশেই এটা প্রচলিত আছে। এটা এমন কোন হাইটেক বিষয় নয় যে, তৈরি করতে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। এদেশেই এটা করে ফেলা সম্ভব হবে। চার. তবে পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে কিছু নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয় যোগ করতে হবে, যা সংবাদপত্রে লিখে জটিলতা তৈরি করতে চাইনি। যেমন, একজনের সিমকার্ড যদি আরেকজন ক্লেইম করে বসে, কোন কনফ্লিক্ট তৈরি হয় কিংবা পুরনো সিমকার্ডের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট আবশ্যক কিনা, এই জাতীয় বিষয়গুলো প্রযুক্তিগতভাবেই সমাধান করা সম্ভব। এই ডিটেইল ইচ্ছে করেই এখানে সংযুক্ত করলাম না। তবে এর সঙ্গে নিচের কিছু বিষয় বিবেচনার জন্য সুপারিশ করছি। ক). এই পুরো প্রক্রিয়ার ডাটাবেস থাকতে হবে বিটিআরসির কাছে। টেলিকম অপারেটররা এটা এক্সেস করতে পারবে। কিন্তু সকল গ্রাহকের তথ্য বিটিআরসির কেন্দ্রীয় তথ্য ভা-ারে রাখতে হবে, যেন যে কেউ (কিংবা কোন এজেন্সি) খুব সহজেই তথ্য দ্রুত এক্সেস করতে পারে। নইলে এই কষ্টের ফল পাওয়া যাবে না। খ). একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারে সকল তথ্য রাখার আরেকটি সুবিধা হলো, যখন সিঙ্গেল নাম্বার পোর্টাবিলিটির কাজ শুরু হবে, তখন সেটা খুব সহজ হয়ে যাবে। মূলত, এর ফলে পুরো প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেল। গ). সিমকার্ড সঙ্গে সঙ্গেই এ্যাক্টিভ করতে হবে। নতুন সিস্টেমে সকল কাগজপত্র সঠিক বিবেচিত হলে, তাকে ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষায় রাখার কোন অর্থ হতে পারে না। বিশেষ করে যারা বাংলাদেশে বেড়াতে আসবেন, তারা ভোগান্তিতে পড়বেন। যারা বেড়াতে আসবেন, তাদের জন্য স্বল্প মেয়াদের সিমকার্ড দেয়া যেতে পারে এবং এই নম্বরগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। তবে, কেন্দ্রীয় সার্ভারে অবশ্যই তথ্য থাকবে যে, কাকে কবে এই নম্বরগুলো দেয়া হয়েছিল। ঘ). সিমকার্ডের ট্যাক্স নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের একটা বিরোধ লেগেই আছে। তারা প্রায়ই গ্রাহককে ‘ফিরে আসার’ জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। কেউ ফিরে আসে, কেউ আসে না। কিন্তু অনেক মোবাইল অপারেটর নতুন সিম বিক্রি করে দিয়ে সরকারকে দেখায় যে, এগুলো হলো ফিরে আসা গ্রাহক। এই চুরি ঠেকানোর জন্য প্রতিটা সিমের একটি আয়ু নির্ধারণ করে দিতে হবে। সেই সময়ের ভেতর সিম ব্যবহার না হলে, সেটা নষ্ট হয়ে যাবে এবং গ্রাহককে নতুন করে পুনরায় সিম নিতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের ঘরে সিমট্যাক্স জমা দিতে হবে। এই সময় সীমা হতে পারে ৬ মাস। একটি সিম ৬ মাস ব্যবহার না করলে, তাকে সক্রিয় গ্রাহক হিসেবে ধরার কোন যুক্তি নেই। সে যদি আবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তাকে নতুন করে আবার সিম নিতে হবে। ঙ). এই পুরো বিষয়টির নিরাপত্তা একটি বিশাল ব্যাপার। বাংলাদেশ সরকারের অনেক ওয়েবসাইট এবং সেবা রয়েছে যেগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু এই তথ্য-ভা-ারের নিরাপত্তা বিঘিœত হলে বেশ ঝামেলা হবে। তাই এর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা জরুরী একটি কাজ বলে বিবেচনা করা উচিত। পরিশেষে, নতুন মন্ত্রী তারানা হালিমকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তিনি অনেক কঠিন কাজের মধ্যে একটিতে হাত দিয়েছেন। তিনি আগামী বিজয় দিবসে (১৬ ডিসেম্বর ২০১৫) নতুন রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমি মনে করি, ওই দিন থেকে বাংলাদেশ একটি নতুন জগতে প্রবেশ করবে। দেশের ভেতর এবং বাইরের অনেক কিছুই নিয়মের ভেতর চলে আসবে। এক মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন ঠিক করে ফেলতে পারলে দেশ যে কতটা সুশৃঙ্খল হয়ে যাবে, সেটা আগামী বছর থেকেই এই দেশ দেখতে পাবে। যাদের কঠিন সঙ্কল্পের বিনিময়ে এটা সফল হতে যাচ্ছে, তাদের সবার জন্য শুভ কামনা। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং সম্পাদক, প্রিয়.কম ুং@ঢ়ৎরুড়.পড়স
×