স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারবিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে প্রশাসন দিয়ে বেআইনীভাবে মোকাবেলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও অভিযোগ করেন লন্ডনে দেয়া রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলা অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক। অবিলম্বে এসব প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।
রিপন বলেন, রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে তারেকের নামে যেভাবে মামলা দেয়া হয়েছে সভ্য সমাজ তা কখনও কামনা করে না। এমন আচরণ না করে রাজনৈতিক বক্তব্যকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা উচিত। মামলা-হামলা আর চার্জশীট দিয়ে মোকাবেলা করা উচিত নয়। তিনি বলেন, তারেক রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন এসব নিজের বানানো তথ্য নয়। বিভিন্ন লেখকদের বই থেকে তিনি তথ্য উল্লেখ করেছেন। তাই মামলা হলে লেখকদের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার নয় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আইনের বেআইনী প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে।
রিপন বলেন, তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়ে যে মামলা হয় এবং তার প্রেক্ষিতে ‘সেডিশন’ চার্জ গঠন হয়েছে। এর বিপরীতে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে রাজনৈতিক যুক্তি, প্রতিবাদ, সমালোচনা ও বিতর্কই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু এটা না হয়ে বিষয়টি আইন আদালতের অঙ্গনে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, তারেকের সব বক্তব্যই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বক্তব্যের মাধ্যমে তার প্রতিবাদ বা পাল্টা যুক্তি উত্থাপন করাই ছিল যুক্তিযুক্ত। কিন্তু তারা সে পথে না গিয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এটা অন্যায়, অগণতান্ত্রিক ও সভ্যতা বিবর্জিত।
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, আমরা পত্রিকান্তরে জানতে পেরেছি আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বক্তব্যের কিছু অংশকে কেন্দ্র করে সরকারের ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ ‘সেডিশনে’র একটি চার্জ গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আনা অভিযোগের মামলায় ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের ‘সেডিশন’ চার্জ গঠন করায় আমরা বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন।
রিপন বলেন, রাজনৈতিক নেতারা রাজনীতি প্রসঙ্গে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এ ধরনের বক্তব্যে প্রতিপক্ষের প্রতি সমালোচনাও থাকে। এই উপমহাদেশে এটা নতুন কিছু নয়। তিনি বলেন, রাজনীতি, ইতিহাস এবং ইতিহাসের যারা অংশ তাদের ভূমিকা নিয়ে কখনওই বিতর্ক ছিল না, এটা বোধহয় কেউই দাবি করবেন না। ১৯৯১ সালের নোবেলজয়ী বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে ১৯৫৬ সালে ‘হাইট্রিজন’ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ১৯২২ সালে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীকে ‘সেডিশন’ মামলায় ব্রিটিশরা গ্রেফতার করেছিল। অতি সম্প্রতি ভারতের এক সাবেক প্রধান বিচারপতি মারকান্দে কাটজু বলেছেন ‘মহাত্মা গান্ধী ছিলেন ব্রিটিশ স্পাই।’ বিলেতের ডেইলি মেলে এ বছরের ১১ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী কোন মামলা হয়েছে কি?
রিপন বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও ১৯৬৮ সালে ‘ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথিত অভিযোগে’ দেশদ্রোহী মামলা হয়েছিল- যা পাকিস্তান সরকার পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তারেক রহমান শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি তা নিজে থেকে কিছু বলেননি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর পরিস্থিতির ওপর প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধ, পুস্তক ও রেফারেন্স দিয়ে তিনি বক্তব্য রেখেছিলেন। এর প্রেক্ষিতে যদি মামলা হয় ও ‘সেডিশন’ চার্জ গঠন হয় তাহলে এসব নিবন্ধ ও পুস্তকের লেখকদের বিরুদ্ধেই মামলা হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। সরকারকে উদ্দেশ করে রিপন বলেন, দমন-নিপীড়নের পথে নয়, মামলা-হামলার মাধ্যমে নয়, জাতীয় ঐক্যের কথা গভীরভাবে ভাববেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোমেন আলাল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদির হোসেন জসিম, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
ঈদের দিন জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বিএনপি ॥ ঈদের দিন দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়ার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বিএনপি। বিকেল চারটায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনার্থে ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিলেরও আয়োজন করবে। বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: