ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই শীর্ষ নেত্রীসহ দু’দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতাই এখন বিদেশে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

দুই শীর্ষ নেত্রীসহ দু’দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতাই এখন বিদেশে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এবার ঈদকেন্দ্রিক রাজনীতি বিদেশমুখী। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুই শীর্ষ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দল দুটির বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাই এখন বিদেশে। এবার প্রধানমন্ত্রী ঈদ করবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর খালেদা জিয়া ঈদ করবেন লন্ডনে। আর এ দুটি দেশেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা অনুযায়ী নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন প্রবাসী বাঙালীসহ দেশ দুটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে। আর রাজনৈতিক দলের যেসব নেতা দেশে রয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই ছুটে গেছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। ঈদের পরই নিজ নিজ দলকে শক্তিশালী করতে দেশব্যাপী ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মকা- শুরুর ঘোষণা আগেই দিয়েছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টিও দলকে শক্তিশালী করতে ঈদের পর তৃণমূলে ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালাবে বলে জানা গেছে। সহসাই রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা না থাকলেও ঝিমিয়ে পড়া তৃণমূলের রাজনীতি ঈদের পর চাঙ্গা হয়ে উঠবেÑ এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। এবারই প্রথম দেশের দুই শীর্ষ নেত্রী ঈদের সময় বিদেশে অবস্থান করছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ওয়ালড্রফ এস্টোরিয়া হোটেলে ঈদের দিন প্রবাসী বাঙালীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও জাতিসংঘ অধিবেশনসহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠকে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-সাফল্যে তুলে ধরবেন তিনি। প্রবাসী বাঙালীদের সংবর্ধনায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা, সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি সম্পর্কেও সচেতন করবেন প্রবাসীদের। অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালও তাঁর সঙ্গে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবদুস সালাম, এহছানুল হক মিলন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডনে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত তাঁর পুত্র তারেক রহমানের বাসভবনে দফায় দফায় বিএনপিসহ নানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন খালেদা জিয়া। ২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর যুক্তরাজ্যে খালেদা জিয়ার এটি দ্বিতীয় সফর। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দেশে ফেরার পথে বড় ছেলে তারেক রহমানকে দেখতে তিনি লন্ডনে গিয়েছিলেন। রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই কোণঠাসা খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে শলাপরামর্শ শেষে দেশে ফিরে কেমন কর্মসূচী নিয়ে খালেদা জিয়া রাজনীতির মাঠে নামবেন, তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে থাকা বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাও লন্ডনে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন, আলোচনার মাধ্যমে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ছক আঁকছেন। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ জানানোর চেষ্টাও করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁরা যুক্তরাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোন নেতার সঙ্গে বৈঠকের সিডিউল পাননি বলেই বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও এবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে লন্ডনে রয়েছেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি ইউরোপ প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি তিনিও যুক্তরাজ্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সরকারী কাজে লন্ডনে রয়েছেন। এছাড়া স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, আইপিএ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ সরকারের এক ডজনেরও বেশি নেতা-মন্ত্রী এবং সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাসহ বিএনপিরও বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যেসব প্রভাবশালী নেতা দেশে রয়েছেন তাদের অধিকাংশই ছুটে গেছেন নিজ এলাকায় ঈদ করতে। তবে যারা এলাকায় ঈদ করতে পারছেন না তারা আগে বা পরে সময় করে দেখা করে আসবেন নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবার ঢাকাতেই ঈদ করবেন। ঈদের পর তিনি এলাকায় যাবেন।
×