ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নবেম্বরে সৌদি-বাংলাদেশ জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশনে বাংলাদেশ এ প্রস্তাব দেবে ;###;এটি হলে বর্তমান চামড়া সঙ্কট দূর হবে

সৌদি আরবের কাছে কোরবানির পশুর চামড়া চাওয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সৌদি আরবের কাছে কোরবানির পশুর চামড়া চাওয়া হবে

এম শাহজাহান ॥ এবার সৌদি আরবের কাছে কোরবানির পশুর চামড়া চাওয়া হবে। চামড়া পাওয়া গেলে সঙ্কট পূরণের পাশাপাশি দেশের সম্ভাবনাময় এই শিল্প খাতটির আরও দ্রুত বিকাশ এবং সম্প্রসারণ হবে বলে মনে করছে সরকার। আগামী বছরের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর হবে। পাশাপাশি চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে বিদেশী বিনিয়োগ আসছে দেশে। কিন্তু কাঁচা চামড়ার উৎপাদন দেশে সেভাবে বাড়ছে না। চামড়া সংগ্রহ ও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের কাঁচামাল সঙ্কটে পড়তে পারে ট্যানারি শিল্প খাত। এই বিবেচনায় সৌদি আরবের কাছে কোরবানির পশুর চামড়া চাওয়া হবে। আগামী (১৮-১৯) নবেম্বর সৌদি আরব-বাংলাদেশ জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি সরকারের কাছে চামড়া চাবে বাংলাদেশ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, প্রতিবছর সৌদি আরবে শুধু হাজীরাই প্রায় অর্ধকোটি গবাদি পশু কোরবানি করে থাকেন। এছাড়া বিপুল সংখ্যক পশু কোরবানি করে থাকেন দেশটির স্থানীয় জনসাধারণ। উট, দুম্বা, ভেড়া, মহিষ, গরু ও ছাগল কোরবানি হয়ে থাকে দেশটিতে। যদিও এবার ভাইরাসজনিত রোগের কারণে উট কোরবানির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হজ করতে এসে হাজীরা অনেকে একাধিক কোরবানি করে থাকেন। ফলে সৌদি আরব হচ্ছে কাঁচা চামড়ার উর্বর ভূমি। কোরবানিকৃত এসব পশুর চামড়া ও গোশত সরকারীভাবে সংগ্রহ করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে তা বিশ্বের বিভিন্ন গরিব ও স্বল্পোন্নত মুসলিম দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়ে থাকে। সুদান, সোমালিয়া, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ অনেক দেশেই এসব চামড়া ও গোশত বিনামূল্যে সরবরাহ করে থাকে সৌদি সরকার। বাংলাদেশেও ইতোপূর্বে সৌদি আরবের হজের গোশত এসেছে। কিন্তু চামড়া আসার নজির নেই। যদিও দেশে গার্মেন্টেসের পর চামড়া শিল্প অবস্থান করছে। দেশের রফতানি বাণিজ্যে চামড়া শিল্প টেকসই অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের অনেক দেশের দামী ব্র্যান্ডের জুতো, স্যান্ডেল, ব্যাগ, বেল্ট ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। এই বাস্তবতায় এ শিল্পের জন্য এখন কাঁচা চামড়ার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকায় সৌদি সরকারের দানকৃত এসব কোরবানির চামড়া বাংলাদেশ পেতে পারে। এ জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে সৌদি আরবের কাছে চামড়া চাওয়া প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মোঃ শওকত আলী ওয়ারেছী জনকণ্ঠকে বলেন, শিল্পের জন্য কাঁচা চামড়া প্রয়োজন। চামড়া শিল্প যেভাবে প্রসার লাভ করছে সেইভাবে দেশে চামড়া উৎপাদন বাড়েনি। বরং বিভিন্ন দেশ থেকে গরু আমদানি হ্রাস পাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে চামড়ার সঙ্কট হতে পারে। এই সঙ্কট দূরীকরণে যেখানেই চামড়া পাওয়া যাবে সেদিকেই ছুটে যেতে হবে। তিনি বলেন, সৌদি আরবে প্রতিবছর এক লাখের বেশি বাংলাদেশী হজে যাচ্ছেন। এছাড়া ওই দেশে বসবাসরত বাংলাদেশীরাও হজ করছেন। ধর্মীয় কারণে প্রতিবছর সৌদিতে প্রায় ৩০-৩৫ লাখ হাজী কোরবানি করছেন। অনেকে একাধিক কোরবানি করে থাকেন। ফলে কাঁচা চামড়ার বড় উৎস সৌদি আরব। এই চামড়া সংগ্রহ করে সৌদি সরকার দান হিসেবে বিশ্বের গরিব মুসলিম দেশগুলোতে সরবরাহ করছে। ফলে মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এই চামড়া চাইতে পারে। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসকে এ বিষয়ে করনীয় নির্ধারণে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এখন এটা ফলোআপ করার সময় হয়েছে। সূত্র মতে, সৌদি আবর-বাংলাদেশ জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশনের বৈঠকে এবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চামড়া চাওয়া হবে। আগামী (১৮-১৯) নবেম্বর ঢাকায় এ বৈঠক হওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া জনশক্তি রফতানির বাধাদূরীকরণসহ পণ্য রফতানি বৃদ্ধির বিষয়টি জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশনের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া ট্যারিফ-নন ট্যারিফ এবং ভিসা সংক্রান্ত যেসব জটিলতা রয়েছে তা দূর করার উদ্যোগ নেয়া হবে কমিশনের বৈঠকে। এদিকে সৌদি আরব থেকে চামড়া আনার উদ্যোগকে ভাল ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন ট্যানারি মালিক এবং এ খাত সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, এটি হলে দেশে কাঁচা চামড়ার যে সঙ্কট রয়েছে তা দূর হবে। একই সঙ্গে সম্ভাবনাময় এ শিল্প খাতটি আরও দ্রুত সম্প্রসারণ হতে পারবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আলী হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এটি একটি ভাল উদ্যোগ। দেশের চামড়া শিল্পে যেভাবে বিনিয়োগ বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে আরও বেশি কাঁচা চামড়ার প্রয়োজন। বর্তমান ক্রাস্ট চামড়ার পাশাপাশি চামড়াজাত পণ্য রফতানি হচ্ছে। এ শিল্প খাতটির প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। তাই সৌদি আরব থেকে চামড়া আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সৌদি আরবে দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয়ে থাকে। সম্প্রতি দেশটিতে গরু কোরবানি বাড়ছে। তাই চামড়া আনা গেলে দেশের রফতানিতে এ শিল্প খাতটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। জানা গেছে, চামড়া শিল্প শতভাগ দেশীয় কাঁচামালনির্ভর রফতানিমুখী শিল্প খাত। এ শিল্পের সঙ্গে বর্তমান ২২০টিরও বেশি ট্যানারি, সাড়ে ৩ হাজার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং ১১০ বৃহৎ শিল্প জড়িত রয়েছে। এসব কারখানায় বছরে ২৫ কোটি বর্গফটেরও বেশি চামড়া উৎপাদিত হয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্প খাতে প্রায় ৭০ লাখ দক্ষ ও অদক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। শতকরা ৯০ ভাগ মূল্য সংযোজনের সুযোগ রয়েছে চামড়া শিল্পে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি খাত থেকে আয় হয়েছে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ দশমিক ১২ শতাংশ। গত অর্থবছরের এ খাতের রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ শতাংশ। পরিবেশবান্ধব চামড়া উৎপাদন শুরু হলে বছরে রফতানি হবে ৫ বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য। শুধু তাই নয়, পর্যায়ক্রমে এই রফতানি ১৬ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন চামড়া খাতের বিনিয়োগকারীরা।
×