ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র জিলহজ মাসের সপ্তম তারিখ। সৌদি আরবে জিলহজের অষ্টম দিবস। মুখরিত পবিত্র মিনা প্রান্তর। সমতলে পাহাড়ে যেদিকেই তাকাই না কেন, শুধু তাঁবু আর তাঁবু, সাদা শুভ্র বসনে পতাকা হাতে ঘোরাঘুরি করছে বিভিন্ন দেশের মজনু দল। আমরাও গতরাতে পৌঁছে কিছুক্ষণ মিনার দিগন্ত বিস্তৃত দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য, বিদ্যুতবাতির ঝলকানি, নিরাপত্তা গাড়ির বিরক্তিকর হুইসেল উপভোগ করি। এরপর যিকর আযকার তাহাজ্জুদ নামাজ। ফজরের জামাতের পর নতুন সূর্যের অলোয় মিনাকে যেন অন্য রকমই দেখাচ্ছে। ৮ তারিখ সকালে নফক বা সুড়ঙ্গ পথ, খুবরি বা ব্রিজের অসংখ্য শাখা-প্রশাখা যেদিকেই তাকাই সর্বত্র কৌতূহলী হাজীদের মিনা উপভোগের দৃশ্য। গতকাল আমরা এ কলামে প্রিয় নবীজীর পুণ্য স্মৃতিময় বিদায় হজ সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। বিদায় হজ ইসলামে নবীর জীবনে এবং তামাম দুনিয়ার মানবজাতির ইজ্জত সম্মান ও কল্যাণ ধারা সুপ্রতিষ্ঠায় একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ এ দিন তিনি মানবজাতির উদ্দেশ্যে একজন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তক ও কল্যাণকামী হিসেবে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন। আল্লাহর মহান পয়গম্বর (স) সোয়া লক্ষাধিক সাহাবীর এক বিশাল জনস্রোত নিয়ে ঐতিহাসিক আরাফাতের দিকে এগিয়ে যান। বিশাল জনসমুদ্রকে সামনে রেখে তিনি জাবালে রহমত নামে পাহাড়ে দাঁড়ান। সমস্ত নবী রাসূল ও মহামানবদের গর্বিত উত্তরাধিকার, তামাম সৃষ্টিকুলের পরম শ্রদ্ধার পাত্র হাবীবে খোদা হুজুরে পুর নূর (স) এখানে রাখলেন তার সেই অবিস্মরণীয় ও জগদ্বিখ্যাত ভাষণ। এতে তিনি আল্লাহর হক ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষের অধিকার চিহ্নিত করেছেন, অধিকার ঘোষণা করেছেন তামাম সৃষ্টির। নর-নারী, দাস-দাসী সবার জন্য তার দরদ যেন সেদিন উপচে পড়েছিল। তার উদার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কেউ সেদিন মাহরুম হয়নি। আমরা এখানে আজ সংক্ষিপ্ত সময়ে সে ভাষণের কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরছি জনকণ্ঠের পাঠকদের উদ্দেশে- হযরত মুহাম্মদ (স) বললেন : ১. হে আমার প্রিয় ভক্তবৃন্দ, আজ যে কথা তোমাদের বলব মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর। আমার আশঙ্কা হচ্ছে- তোমাদের সঙ্গে একত্রে হজ করার সুযোগ আর আমার ঘটবে না। ২. হে মুসলিম জাতি, আঁধার যুগের সমস্ত ধ্যান-ধারণা ভুলে যাও, নবআলোকে পথ চলতে শেখ। আজ হতে অতীতের সমস্ত মিথ্যা-সংস্কার, অনাচার ও পাপ-প্রথা বাতিল হয়ে গেল। ৩. মনে রেখ সব মুসলমান ভাই ভাই। কেউ কারও চেয়ে ছোট নও, কারও চেয়ে বড় নও। আল্লাহর চোখে সকলেই সমান। ৪. নারী জাতির কথা ভুলো না। নারীর ওপর পুরুষের যেরূপ অধিকার আছে, পুরুষের ওপর নারীরও সেরূপ অধিকার আছে। তাদের প্রতি অত্যাচার করো না। মনে রেখো- আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তোমাদের স্ত্রীগণকে গ্রহণ করেছ। ৫. সাবধান! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করো না। এই বাড়াবাড়ির ফলেই অতীতে বহু জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। ৬. প্রত্যেক মুসলমানের ধন-প্রাণ পবিত্র বলে জানবে। যেমন পবিত্র আজকের এই দিন- ঠিক তেমনি পবিত্র তোমাদের পরস্পরের জীবন ও ধন-সম্পদ। ৭. হে মুসলমানগণ, হুঁশিয়ার! নেতৃত্বের আদেশ কখনও লঙ্ঘন কর না। যদি কোন কর্তিত-নাশা কাফ্রী ক্রীতদাসকেও তোমাদের আমির করে দেয়া হয় এবং সে যদি আল্লাহর কিতাব মতে তোমাদের চালনা করে, তবে অবনত মস্তকে তার আদেশ মেনে চলবে। ৮. দাস-দাসীদের প্রতি সর্বদা সদ্ব্যবহার কর। তাদের ওপর কোনরূপ অত্যাচার কর না। তোমরা যা খাবে, তাদেরও তা খাওয়াবে; যা পরবে, তা-ই পরাবে। ভুলে যেও না- তারাও তোমাদের মতো মানুষ। ৯. সাবধান! পৌত্তলিকতার পাপ যেন তোমাদের স্পর্শ না করে। শিরক কর না, চুরি কর না, মিথ্যা কথা বল না, ব্যাভিচার কর না। সর্বপ্রকার মলিনতা হতে নিজেকে মুক্ত করে পবিত্রভাবে জীবনযাপন করবে। চিরদিন সত্যাশ্রয়ী হও। ১০. মনে রেখ- একদিন তোমাদিগকে আল্লাহর নিকটে ফিরে যেতে হবে। সেদিন তোমাদের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ১১. বংশের গৌরব কর না। যে ব্যক্তি নিজ বংশকে হেয় মনে করে অপর কোন বংশের নামে আত্মপরিচয় দেয়, আল্লাহর অভিশাপ তার ওপর নেমে আসে। ১২. হে আমার উম্মতগণ, আমি যা রেখে যাচ্ছি, তা যদি তোমরা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাক, তবে কিছুতেই তোমাদের পতন হবে না। সে গচ্ছিত সম্পদ কী? তা আল্লাহর কুরআন এবং তার রাসূলের আদেশ...।
×