ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তন

ঝুঁকি মোকাবেলায় পাশে থাকবে জার্মান ও ফ্রান্স

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঝুঁকি মোকাবেলায় পাশে থাকবে জার্মান ও ফ্রান্স

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে জার্মানি ও ফ্রান্স। চলতি বছর প্যারিসে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে একটি আইনী কাঠামো চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে দেশ দুটি। এছাড়া ঢাকায় জার্মান-ফ্রান্স যৌথ দূতাবাস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে। ঢাকা সফর শেষে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টেইনমায়ার ও ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফ্যাবিউস এসব তথ্য জানান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুই শক্তিধর দেশ জার্মানি ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঐতিহাসিক এক যৌথ সফরে সোমবার ঢাকায় আসেন। সোমবারই তারা ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ঢাকা ত্যাগের আগে সোমবার রাতে বারিধারায় যৌথ দূতাবাস ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তারা বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি রয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহায়তার বিষয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডে অর্থ সহায়তা বাড়ানোর জন্য কাজ চলছে। ২০২০ সালের মধ্যে এই ফান্ড আরও শক্তিশালী হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকায় যৌথ দূতাবাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে সে সম্পর্ক আরও জোরালো হবে। এছাড়া এই দূতাবাস থেকে বাংলাদেশের নাগরিকরা সহজেই সেবা পাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী সকালে বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান। শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে দুই মন্ত্রী সরাসরি চলে যান সাভারে। সেখানে বংশী নদীতে নৌভ্রমণের মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চলমান একটি প্রকল্পের কার্যক্রম দেখতে তাদের পটুয়াখালীতে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে যাননি। কিয়োটো প্রোটোকল তামাদি হয়ে যাওয়ায় বিশ্ব যখন আসন্ন প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে নতুন একটি চুক্তি দেখার অপেক্ষায়, তখনই ইউরোপীয় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর করলেন। যৌথ দূতাবাস উদ্বোধন ॥ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ফ্রাঙ্কো-জার্মান দূতাবাসের উদ্বোধন করা হয়েছে, যা বিশ্বেও প্রথম। বিকেলে বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় এ দূতাবাস উদ্বোধন করেন জার্মান ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্স ও জার্মানির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে ঢাকায় এই ফ্রাঙ্কো-জার্মান দূতাবাস স্থাপন করা হয়েছে বলে দেশ দুটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা ঢাকার বারিধারায় নির্মাণাধীন প্রথম ‘ফ্রাঙ্কো-জার্মান’ যৌথ দূতাবাস ভবনের ‘টপিং অফ’ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন। কোন ভবনের মূল কাঠামো নির্মাণের সময় শেষ স্টিল বিমটি জায়গামতো বসানো উপলক্ষে এই ‘টপিং অফ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নির্মাণকাজের কাঠামোগত অংশের কাজ সমাপ্তির প্রতীকী উদযাপন এটি। যৌথ ঘোষণা ॥ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জার্মান ও ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকা সফর শেষে দুই দেশের দূতাবাস থেকে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপ ইতিবাচক। এসব পদক্ষেপের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ আরও ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এ বছর প্যারিসে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে একটি আইনী কাঠামো চুক্তির বিষয়ে অঙ্গীকার করেন তাঁরা। ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে তাঁদের। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় দুই দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এছাড়াও দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলা ও কৃষি খাতে সহযোগিতা দেবে বলে জানানো হয়। বংশী নদী পরিদর্শন ॥ সোমবার সকালে বিমানবন্দর থেকে সাভারে গিয়ে বংশী নদী পরিদর্শন করেন ফ্রান্স ও জার্মানির দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাভারের ভাগলপুরে বংশী নদী পরিদর্শন ও সেখানে নৌকায় ভ্রমণ করেন তারা। নদীতে ভ্রাম্যমাণ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নৌকায় জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেন সফররত দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহামুদ আলী, ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক রুনা খান, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম, জার্মানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ফ্রান্সের আট কর্মকর্তা এবং জার্মানির ৩২ কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসেন। সফরসঙ্গী হিসেবে দুই দেশের ১৪ গণমাধ্যমকর্মীও ছিলেন। ইউরোপের এ দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার সময়ও বাংলার মানুষ জার্মানি ও ফ্রান্সের সমর্থন পেয়েছে। ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা জার্মানি। সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও জার্মানির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি ডলার, যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ রফতানি করে। আর ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা, টেকসই উন্নয়ন, মানবাধিকার ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানি ও ফ্রান্সের সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। সাভার থেকে ফিরে দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন দুই ইউরোপীয় অতিথি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তাদের বৈঠক হয়। একদিনের ঝটিকা সফর শেষে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে রাতে প্যারিসের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন স্টেইনমায়ার ও ফ্যাবিউস। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জার্মানি ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণভবনে বৈঠক করেন। বৈঠককালে ইউরোপের এই দুই প্রভাবশালী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে কোন ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর স্থান নেই। ধর্মীয় উগ্রবাদ মোকাবেলায় সরকার সব সময় সতর্ক রয়েছে। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশে সামরিক শক্তি ক্ষমতা দখল করে নেয়। তবে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম আদর্শ ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। বর্তমান সরকার সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মধ্যে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেছে। পোশাক শিল্প খাতের কর্ম পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোশাক শ্রমিকদের কল্যাণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি এ সময় পোশাক খাত উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন ভূমিকা তুলে ধরেন।
×