ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আয়কর মেলার সময় ও পরিধি ভবিষ্যতে বাড়ানো হবে ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আয়কর মেলার সময় ও পরিধি ভবিষ্যতে বাড়ানো হবে ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভবিষ্যতে আয়কর মেলার সময় ও পরিধি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সোমবার বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়োজিত আয়কর মেলা পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকেদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন আয়করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে মেলা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কোন ঝুঁকি ছাড়াই তারা কর দিতে পারছেন। এদিকে সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় মেলা প্রাঙ্গণে গণমাধ্যম সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবীর, ডেইলি অবজারভার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ বদরুল হাসান, দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন ও দৈনিক বণিক বার্তার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হোমায়রা শারমিন প্রমুখ। এ সময় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা আয়কর অফিসগুলোকে করদাতাবান্ধব করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কর মেলায় সব সেবা একই ছাদের নিচে পাওয়া যায়। সব কিছু ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মতো। মেলা শেষে কর অফিসগুলোতে এই পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান তারা। তারা বলেন, আয়কর মেলা মানুষের মাঝে উৎসবের আমেজ এনেছে। এখানে উৎসাহ নিয়ে কর দিতে এসেছে সবাই। তবে, অন্য সময় কর কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে মানুষ কর বিভাগে যেতে চান না বলেও অভিযোগ করেন তারা। দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন বলেন, কর অফিসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করাই কঠিন। অভিযোগ রয়েছে, কর অফিস থেকে কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিতে এক হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। করদাতাদের সঙ্গে রোগীর মতো আচরণ করলে সফল হওয়া যাবে না। শুল্ক কর্মকর্তাদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যারা হাজার হাজার কোটি টাকা রেমিটেন্স পাঠায়, দুটি সাবানের কারণে বিমানবন্দরে তাদের কম্বল কেটে রাখা হয়। লাগেজ কাটা হয়। অথচ তারা রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন। এসব প্রবাসীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার আহ্বান জানান তিনি। অবশ্য এর জবাবে এনবিআর কর্মকর্তারা কর সেবায় সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদাহরণ টেনে তাদের বর্তমান অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই এনবিআরকে সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন রাজস্ব প্রশাসন বদলে গেছে। জনবান্ধব রাজস্ব প্রশাসন হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। কর অঞ্চল-১-এর কমিশনার জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, তারা সব সময় করদাতাদের সম্মান করেন। তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানব সম্পদ) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আয়কর মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো- জনগণকে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করা। রাজস্ব আহরণ নয়। কারদাতাদের সুস্থ কর সংস্কৃতি উপহার দেয়ার লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিবছর মেলায় কর সেবা গ্রহণের সংখ্যা বাড়ছে। একটা সময় কর না দেয়া বা কম দেয়া সংস্কৃতি হিসেবে ছিল উল্লেখ করে ডেইলি অবজারভারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ বদরুল হাসান বলেন, আজ মেলায় এসে দেখি কর দেয়া এখন উৎসব। নাগরিকদের এমন উৎসাহ ধরে রাখতে এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সৈয়দ বদরুল হাসান বলেন, দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন আর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতেই কর দেয়া জরুরী। এ সময় পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে ১৬ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যে ১০ লাখ রিটার্ন দাখিল করে। বাকি ৬ লাখ টিআইনধারীকে কেন চিহ্নিত করা হচ্ছে না এনবিআরের কাছে জানতে চান সৈয়দ বদরুল। এছাড়া তিনি বলেন, এক হিসেবে দেখা যায়, কোটি টাকার বেশি সম্পদশালী লোকের সংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ। এদেরও চিহ্নিত করতে এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, সৈয়দ বদরুলের দেয়া পরিসংখ্যান সঠিক। তিনি বলেন, ভিয়েতনামের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ কর দেয়। তাদের জনসংখ্যা ৯৬ মিলিয়ন। কর দেয় ৩০ মিলিয়ন। তিনি বলেন, আমাদের অনেকদূর যেতে হবে। এখন আমাদের ট্যাক্স জিডিপি ১০ শতাংশের বেশি আছে। সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিকীতে তা ১৭ শতাংশের ওপরে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা আজ শেষ হচ্ছে। গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে করদাতাদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অনেককে মেলায় আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে প্রযোজ্য কর পরিশোধ ও ই-টিআইএন নিতে দেখা গেছে।
×