ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাসপাতালে হুতির হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

হাসপাতালে হুতির হামলা

ফের সন্ত্রাসীদের হামলায় রক্তাক্ত হলো সৌদি আরব। এবার সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের মর্টার হামলায় দুই বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। দেশটির ইয়েমেন সীমান্তসংলগ্ন জিজানের সামতাহ জেনারেল হাসপাতালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতদিন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ জঙ্গী কিংবা বিদেশীদের হামলার শিকার হলেও গত এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে সৌদি আরব হামলার শিকার হয়ে আসছে। এর আগে দেশটিতে জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটলেও তা ছিল হাতেগোনা। চলতি বছরের মে মাসে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দফা শিয়া মসজিদে হামলা, এরপর মেয়েদের একটি স্কুলে মর্টার হামলা, এ রকম কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটে দেশটিতে। সম্প্রতি পবিত্র মসজিদ আল-হারামে ক্রেন দুর্ঘটনা এবং সর্বশেষ শুক্রবার হাসপাতালে মর্টার হামলায় দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সৌদিতে বসবাসরত শিয়া মুসলিমদের ওপর হামলা করা হবে বলে ইসলামিক স্টেট বা আইএস আগে থেকেই হুমকি দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের আইএস শাখা গত নবেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আইএসের পক্ষ থেকে অডিও বার্তায় বলা হয়। সেই থেকে দেশটিতে নানা সময়ে এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটছে। এমন সময়ে এসব হামলার ঘটনা ঘটছে যখন সৌদি আরবের নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলোর একটি জোট জঙ্গীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কাজ করছে। সৌদি আরবে এখন পবিত্র হজের প্রস্তুতি চলছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ এবার হজে অংশ নেবেন। হজে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলা হলেও এই হামলার ঘটনা নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। স্বাভাবিক কারণেই সেখানে শঙ্কিত, উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। হুতি বিদ্রোহীরা এ বছরের ২০ জানুয়ারি ইয়েমেনের ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব বাহিনী হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এর প্রতিশোধ হিসেবে শিয়া হুতি বিদ্রোহীরা প্রায়ই সৌদি আরবের সীমান্তে গোলাবর্ষণ করে আসছে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের থাবায় বিধ্বস্ত আজ মধ্যপ্রাচ্য। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সৃষ্ট অস্থিরতার কারণে ওই অঞ্চলে বার বার এই সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। রাষ্ট্রক্ষমতা, নেতৃত্বের লোভ, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং বিদেশী শক্তির লেজুড়বৃত্তির কারণে অঞ্চলটিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রসারিত হচ্ছে। অঞ্চলটিতে এখন নৃশংসতা ও সহিংসতা মানেই আইএস। তারা নানা স্থানে নানা নামে পরিচিত। কোথাও এরা আইএস, কোথাও হুতি, কোথাও বোকো হারাম, কোথাও বা তালেবান। তারা হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা, মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা, বিদেশী নাগরিক, ভিন্ন মতাবলম্বী বা অন্য ধর্মের লোকের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, নানা নামে এই জঙ্গীরা বিশ্বশান্তির জন্য চরমভাবে হুমকিস্বরূপ। মানবতার বিরুদ্ধে এরা মূর্তিমান আতঙ্ক। ইরাক-সিরিয়ার একটা বড় অংশ দখলের পর মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানসহ তাদের সমর্থক ও সহযোগীদের মাধ্যমে উপস্থিতির বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এখন সৌদি আরবের অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে, তা সে পথেরই আলামত বলা যায়। এই ধরনের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের সোচ্চার হওয়া দরকার। তা না হলে বিশ্ব দিনে দিনে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। তাই এ ধরনের জঙ্গী হামলা তথা নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।
×