ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি-জামায়াতের এক শ’ দিনের তা-বের ওপর ফটো এ্যালবাম গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এইচটি ইমাম

ওদের রাজনৈতিক নির্বাসনে না পাঠানো পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ওদের রাজনৈতিক নির্বাসনে না পাঠানো পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজনীতির নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের একশ’ দিনের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস-বর্বরতা, নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞের সচিত্র দালিলিক প্রমাণ জাতির সামনে তুলে ধরেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটি বলেছে, অগ্নিসন্ত্রাস ও বর্বরোচিত সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করে নির্বাসনে না পাঠানো পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংগ্রাম চলবে। রবিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের উদ্যোগে ‘বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস বর্বরতার ১০০ দিন’ শিরোনামে সচিত্র ও দালিলিক প্রমাণসহ প্রস্তুতকৃত ফটো এ্যালবাম গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, এখন সন্ত্রাসের ওপরে ফটো এ্যালবাম বের করছি। এটিই আমাদের শেষ নয়। আরও চলতে থাকবে। শত্রুকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে ‘নিশ্চিহ্ন’ শব্দটি ব্যবহার করবো না। যতদিন পর্যন্ত এই নির্মম শত্রুকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে রাজনৈতিক নির্বাসনে দেয়া না যায়, ততদিন আমাদের এ সংগ্রাম চলবে। তিনি বলেন, একাত্তরে যারা হত্যা ও সহিংসতা করেছিল তারাই পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সহিংসতা করেছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসর সেই বিএনপি-জামায়াত চক্র আন্দোলনের নামে ২০১৩ ও ২০১৫ সালে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যাসহ যে নৈরাজ্য ও বর্বরতা করেছে, তা অতীতে কখনই জাতি ও এদেশের মানুষ দেখেনি। কখন চিন্তাও করেনি। এই সহিংসতাকারীদের বিচার হবেই। এরা (অগ্নিসন্ত্রাসী) জনগণের সামনে কোনদিন টিকবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি, এগিয়ে যাব। কারণ জনগণই আমাদের সকল শক্তির উৎস। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের জনগণের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সবসময়ই সোচ্চার ছিল। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। ওদের (বিএনপি-জামায়াত জোট) পরাজিত করেছি। অর্থাৎ জনগণই যে বড় শক্তি ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করে যে জেতা যায়Ñ তারই প্রমাণ হয়েছে। এবারও জনগণকে সঙ্গে নিয়েই তাদের পরাজিত করবো। তারা জনগণের সঙ্গে কখনও পেরে উঠবে না। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এর সময় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সচিত্র এ্যালবামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস ছাড়াও একশ’ দিনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানীর চিত্রও তুলে ধরা হয়। এছাড়া এ্যালবামে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নাশকতা-নৈরাজ্য ও ধ্বংসযজ্ঞের কয়েকশ’ ছবি সংকলিত হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে ১০০ দিনে ১৫৩ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, আহত হয়েছে ২ হাজার মানুষ। এ সময় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়েছে আড়াই হাজার যানবাহনে, পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে ৫ শতাধিক। ৫শ’র বেশি বোমা হামলা ছাড়াও সরকারী ও অন্যান্য স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৫০টি। ইতিহাসের প্রয়োজনে বিএনপি-জামায়াতের এ নারকীয়তা ও বর্বরতার দালিলিক প্রমাণ সংরক্ষণেই এ প্রকাশনা বের করা হয়েছে। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে এইচ টি ইমাম বলেন, ২০১৩ সালে তারা যে তা-ব চালিয়েছিল, তা আমরা কখনও দেখিনি, কখনও চিন্তাও করতে পারিনি। সে সময় ‘রক্তাক্ত বাংলাদেশ’ এ্যালবাম বের করেছিলাম। প্রথমে বাংলায় ছিল। পরবর্তীতে ইংরেজিতেও বের করেছিলাম। এটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় সবাই দেখেছে। দেখে তারা হতবাক হয়ে বলেছেন, মানুষ এই রকম নির্মম-নৃশংস হতে পারে! নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এইচ টি ইমাম বলেন, আজ (রবিবার) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাপলাতে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি অনুষ্ঠান হয়েছে। অনুষ্ঠানটি হলো বার্ষিক কর্মসূচী সম্পাদনের চুক্তি সম্পাদিত। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিবগণ অঙ্গীকারনামায় সই করেছেন। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ে যে বার্ষিক কর্মসূচী দেয়া হয়েছে; তা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করবেন বলে অঙ্গীকারনামায় সই করেছেন তারা। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। স্বাগত বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাজনীতির নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার যে মহোৎসব বাংলাদেশে হয়েছে তা বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশে রাজনীতির নামে এমন বীভৎসতা, সমসাময়িক সময়ে হয়নি। তিনি বলেন, কাকতালীয়ভাবে শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে মানুষ হত্যার মহোৎসব চলছে। কথাটি তিনি সত্যই বলেছেন। আর এই মহোৎসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি এবং তার সহযোগী হচ্ছে জামায়াত। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে শুধু মানুষ পুড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি। তাদের হাত থেকে প্রকৃতিও রেহাই পায়নি। তাদের তা-বের ফটো এ্যালবামটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার করা হবে। কূটনীতিকদের কাছে প্রেরণ করা হবে। এছাড়াও ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবাই দেখতে পারবে বিএনপি-জামায়াতের একশ’ দিনের নারকীয় সহিংসতা ও নিষ্ঠুর বর্বরতার চিত্র। ২৪৭ পৃষ্ঠাব্যাপী ‘বর্বরতার ১০০ দিন’ শীর্ষক এ এ্যালবামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ১০০ দিনের অগ্নিসন্ত্রাস, বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টের প্রস্তাব, সংবাদপত্রের পাতায় বিএনপি-জামায়াতের বর্বরতার চিত্র, বিএনপি-জামায়াতের প্রতারণার রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিবরণও তুলে ধরা হয়। এ্যালবামের প্রথম ছবিটি ছিল বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের নিক্ষিপ্ত পেট্রোলবোমায় পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া হেলপার সোহাগ হাওলাদারের বীভৎসতার চিত্রটি। এছাড়া আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের মানুষকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পুড়িয়ে হত্যা, পৈশাচিক কায়দায় কুপিয়ে-পিটিয়ে মানুষ হত্যা, রেল-বাস-ট্রাকসহ যানবাহনে আগুন, ট্রেনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলে শত শত যাত্রীকে হত্যার চেষ্টা, নির্বিচারে গাছ নিধন, বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন, শত শত কোরআন শরিফ পুড়ানো, মন্দির-গীর্জাসহ সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়, বাড়ি-ঘরে হামলা, নির্যাতন ও লুটপাটের সেই ভয়াল চিত্রগুলোও ফটো এ্যালবামে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া ফটো এ্যালবামে বিএনপির মিথ্যাচারের চিত্র এবং ৭ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জাল করে মিথ্যা বিবৃতি ও ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ’র সঙ্গে খালেদা জিয়ার মিথ্যা টেলিফোনালাপের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
×