ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র জিলহজ মাসের আজ ষষ্ঠ তারিখ। সৌদি আরবে একদিন আগে চাঁদ দেখার কারণে ৭ম তারিখ। আধুনিককালে আজকের এই দিনটি মক্কা শরীফের হাজীদের কাছে অত্যন্ত ব্যস্ততম দিন হিসেবে পরিগণিত। এক সময় ৮ তারিখ সকালেই হাজী সাহেবগণ মিনার উদ্দেশ্যে রওনা দিতেন। বর্তমানে রওনা শুরু করেন ৭ তারিখ সন্ধ্যা থেকে। পবিত্র হজের অনুষ্ঠানমালা ও আরাফা দিবস মুসলিম উম্মাহর এক সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর শান-শওকতের বহির্প্রকাশ ঘটে। মসজিদে নামিরায় যে খোতবা উচ্চারিত হয় তাতে উম্মাহর ধমনিতে নতুন ইমানী শক্তির সঞ্চার হয়, বিক্ষিপ্ত উম্মাহ হয় সুসংহত। এছাড়াও বহু কল্যাণ, উপকারিতা এবং হিকমত হজের মধ্যে নিহিত। উল্লেখ্য, ৮ম হিজরীতে হুজুরে আকরাম (স.)-এর মক্কা বিজয়ের পর নবম হিজরীর সময়-কালটা ছিল মুসলমানদের জন্য খোলামেলাভাবে হজের অনুষ্ঠানসমূহ পালন করার সর্বপ্রথম অবারিত সুযোগ। এ বছর হযরত মুহাম্মদ (স) আপন সাহাবীদের সঠিক পদ্ধতিতে হজ করার শিক্ষাদান করে হযরত আবু বকরকে (রাদি) তিন শ’ সাহাবীর নেতৃত্ব দিয়ে মক্কায় হজ করতে প্রেরণ করেন। ১০ম হিজরীতে আঁ-হযরত (স) নবগঠিত মদিনা রাষ্ট্র নিয়ে বেশ ব্যস্ত জীবন কাটান। এ বছরই শেষের দিকে হজের সময় হলে হুজুর নিজে হজব্রত পালনের অভিপ্রায় ঘোষণা করেন। হযরতের এ ঘোষণায় তাঁর সঙ্গে হজে যাবার ব্যাকুলতায় পুরো মদিনা শহরের লোকজন উদ্বেল-উন্মাতাল হয়ে ওঠে। তিনি রওনা হয়েছেন মক্কার পানে আর তাঁর সঙ্গে এসে মিশেছে লাখো জিয়ারতকারীর অগণিত কাফেলা। সে এক অপরূপ দৃশ্য। এখানে ধনী-নির্ধন কোন ভেদাভেদ নেই, নেই মুহাজির-আনসারের মাঝে কোন পৃথকী চিহ্ন, সবাই তাওহীদবাদী মুসলমান, সাদাশুভ্র বসনে এক আল্লাহর ঘরের মেহমান, আর তাদের সঙ্গে আছেন আখেরী জমানার মহান পয়গাম্বর নূর নবী হযরত। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বরকতপূর্ণ এ কাফেলাটি ক্রমাগত এসে মক্কার অদূরে জুলহুলাইফা নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করলেন। পরের দিন আবার কাফেলার যাত্রা হলো শুরু। আঁ-হযরত (স) উটের পিঠে আরোহণ করেই উচ্চৈস্বরে হজের বিশেষ দোয়া তালবিয়া পড়তে আরম্ভ করলেন। দিগন্তবিস্তৃত মাঠ, সম্মুখে পাহাড়Ñপর্বত আর অনন্ত বালুকারাশির মাঝখানে মনে হলো যেন চতুর্দিক থেকেই সমস্বরে তালবিয়ার প্রতিধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক...হাজির হে মহামহিম প্রভু, হাজির তোমার দরবারে...। ইতিহাসে রয়েছে যে, মদিনা থেকে রওনা হলে একাধারে দশদিন পথ চলার পর আখেরী নবী (স) সফরসঙ্গীদের নিয়ে মক্কা মোয়াজ্জমায় উপস্থিত হন। চোখের সামনে পবিত্র কা’বা দেখতে পেয়ে নবী পাক (স) পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সঙ্গে দুহাত উঁচু করে বলতে লাগলেন: হে রাব্বুল আলামীন, এ তোমার পবিত্র গৃহ, তুমি আপন রহমত ও মহিমায় এ ঘর উজ্জ্বল কর। আর সুখ-শান্তি দান কর তাঁদের যাঁরা এই পবিত্র গৃহ জিয়ারতের উদ্দেশে হজ করার জন্য আগমন করে। তিনি কা’বার প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে সকলকে নিয়ে পবিত্র কা’বাঘর সাতবার তাওয়াফ করেন। এ সময় পবিত্র হজ দিবসের প্রাক্কালে কা’বার চত্বর আবার মুখরিত হয়ে উঠল সাহাবীদের সম্মিলিত লাব্বাইক ধ্বনিতে। দীর্ঘকাল যেখানে পুতুল পূঁজার বেসারতি চলে আসছিল আজ তা আল্লাহু আকবার (আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ) ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠছে বার বার, প্রতিক্ষণ। এভাবে এমনই দিনে আঁ হযরতের বিখ্যাত বিদায় হজের পবিত্র অনুষ্ঠানমালা চলতে থাকে; আজ যা আমরা একইভাবে আমল করে চলেছি।
×