ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাস নম্বর পেয়েও ভর্তি হতে পারবে না ৩৭ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী

মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তীর্ণ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তীর্ণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরীক্ষার দুদিনের মধ্যেই রবিবার প্রকাশিত হয়েছে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ফল। এবার পরীক্ষার্থীদের মোট সংখ্যার ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে। এতে ভর্তির যোগ্য শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন। সরকারী ও বেসরকারী কলেজে বিদ্যমান আসন সংখ্যা অনুযায়ী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন ১১ হাজার ৪৯ জন। ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর পেয়েও মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না ৩৭ হাজার ৩৯৯ জন। প্রথম দফায় ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৪.৭৫ ও সর্বনিম্ন ৭৭ নম্বরপ্রাপ্ত ৩ হাজার ৬৯৪ জন ইতোমধ্যে সরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। আর সর্বোচ্চ ৭৬ ও সর্বনিম্ন ৪০ নম্বরপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থীরা মেধাক্রম অনুযায়ী পরবর্তীতে বিভিন্ন বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য লড়বেন। রবিবার দুপুরে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঢাকার মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলনকক্ষে এ ফল প্রকাশ করেন। দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করা হলেও সকাল থেকে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফল পাঠানো শুরু হয় বলে অধিদফতরের কর্মকর্তারা জনকণ্ঠকে জানান। ভর্তি ফর্ম পূরণের সময় পরীক্ষার্থীদের যে মোবাইল ফোন নম্বর নেয়া হয়েছে, সেখানেই পাঠানো হচ্ছে ফল। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর অধিদফতরের ওয়েবসাইটেও (িি.িফমযং.মড়া.নফ) ফল প্রকাশ করা হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সারা দেশে ৪৪টি কেন্দ্রে এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চলে। ৮২ হাজার ৯৬৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে রবিবার উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে ৪৮ হাজার ৪৪৮ জনকে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৯৪ দশমিক ৭৫। এবার মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে মোট ৮২ হাজার ৯৬৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন পাস করেছেন। সরকারী মেডিক্যাল কলেজে আসনসংখ্যা তিন হাজার ১৬২ টি, সরকারী ডেন্টালে ৫৩২ টি, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ৬ হাজার ও বেসরকারী ডেন্টালে ১ হাজার ৩৫৫ টি। গত বছরের (২০১৩-১৪) মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় ২২ হাজার ৭৫৯ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ১০ হাজার ২২৭ জন সরকারী- বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ এবং মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তি সুযোগ পায়। গত বছর সারাদেশে সরকারী- বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ এবং মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে মোট ১০ হাজার ২২৭টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন ৬৯ হাজার ৪৭৭ শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবি ॥ এদিকে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা বাতিল এবং নতুনভাবে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়ে রবিবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেছেন মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কিছু পরীক্ষার্থী। জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, তেজগাঁও সরকারী বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র হাসিবুল হোসেন, গোপালপুরের মেহেরুন্নেসা মহিলা কলেজের ছাত্রী লামিয়া জাহান, মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান কলেজের ছাত্র তানভীর হাসান, নাঈমুল হাসান প্রমুখ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, পরীক্ষার দিন সকালে ও আগের রাতে ফেসবুকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে তা মিলে গেছে। তাদের হাতে অনেক প্রমাণপত্র রয়েছে বলে দাবি করেন পরীক্ষার্থীরা। দাবি মানা না হলে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও তারা হুমকি দেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদফরের পরিচালক (শিক্ষা) এ বি এম আবদুল হান্নান বলেছেন, পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তোলা যুক্তিযুক্ত নয়। পরীক্ষা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয়েছে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য পরীক্ষার প্রয়োজনে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য সেক্টরের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সুনাম ক্ষুণœ করতে একটি চক্র এমন ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষা বাতিল চেয়ে রিট আবেদন মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন এক আইনজীবী। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ‘ফাঁস হয়েছে’ দাবি করে আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ রবিবার সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন জমা দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও পরিচালকসহ ১১ জনকে বিবাদী করা হয়েছে তার এই আবেদনে। ইউনুছ আলী বলেন, মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করার জন্য শনিবার তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও স্বাস্থ্য সচিবকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না আসায় তিনি রিট আবেদন করেছেন। আবেদনে এমবিবিএস ও বিডিএস পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার রুল চাওয়া হয়েছে। সোমবার হাইকোর্টে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে এই আইনজীবী জানান।
×