ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিএসপি নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলের মনোভাব ইতিবাচক

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জিএসপি নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলের মনোভাব ইতিবাচক

এম শাহজাহান ॥ জিএসপি পুনর্বহালে সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস খাতের অগ্রগতিতে তারা সন্তুষ্ট। সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা অনুমোদন হওয়ার পর বাংলাদেশ এ্যাকশন প্লানের ১৬টি শর্ত পূরণ হয়েছে। এই বাস্তবতায় পোশাক খাতের সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের অগ্রগতির খোঁজখবর নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআর। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এই প্রতিবেদনের ইতিবাচক ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে জিএসপির ভাগ্য। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা অনুমোদনের একটি কপি দেয়া হয়েছে সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলকে। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের উৎসব ভাতা ও শিল্প কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সংরক্ষণের আইন করে শ্রম বিধিমালা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এই গেজেট প্রকাশের পর থেকে শ্রম আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শ্রম আইনের বিধিমালায় মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসব ভাতা পাবেন শ্রমিকরা। তারা শিল্প কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবেন। বিশেষ করে শ্রমিকদের কল্যাণে একটি তহবিল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই তহবিল সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের যৌথ তদারকিতে এটি পরিচালিত হবে। বিধিমালায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কাজের পরিবেশ, প্রতিষ্ঠানের ভবনের নিরাপত্তা বিধানসহ শ্রমিক ও মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এ্যাকশন প্লানের ১৬টি শর্তের মধ্যে ১৫টি শর্ত পূরণ হয়েছে আগেই। তবে সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালাটি অনুমোদন না হওয়ায় এ নিয়ে ইউএসটিআর থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিধিমালা না হওয়ায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন হতে পারছে না। জিএসপি পুনর্বহালে যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিকদের স্বার্থ-সংরক্ষণের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে শ্রম সচিব মিকাইল শিপার জনকণ্ঠকে বলেন, গার্মেন্টস খাতের উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিতে সরকার ও মালিক পক্ষ কতটুকু অগ্রগতি করতে পেরেছে তা জানতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করছেন। প্রথম বৈঠকটি সরকারের সঙ্গে করা হয়েছে। এই বৈঠকে আমরা গার্মেন্টসখাত নিয়ে এ পর্যন্ত নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও অগ্রগতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছি। সর্বশেষ সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা অনুমোদনের বিষয়টিও তাদের জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, এগুলো পর্যালোচনা করে প্রতিনিধি দলটি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তারা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই করে জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শ্রম সচিব বলেন, বাংলাদেশ এ্যাকশন প্লানের সবগুলো শর্ত পূরণ করা হয়েছে। কমপ্লায়েন্ট না হওয়ার পরও পাকিস্তান এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের জন্য জিএসপি সুবিধা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল হবে। জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি চলে দুপুর পর্যন্ত। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন ও শ্রম সচিব মিকাইল শিপার। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য বিষয়ক সহকারী মাইকেল জে ডিলেনি। এছাড়া প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) শ্রম বিষয়ক পরিচালক মাইকেল ও ডোনোভান, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম (ডিআরএল) শাখার অফিস পরিচালক ব্রুস লেভিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দফতর (ইউএসডিওএল) ও আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক ব্যুরার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কর্মকর্তা (আইএলএবি) জেনিফার গুডইয়ারও রয়েছেন। ওই বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র বিদায়ী সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম। এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্স ও জার্মানির রাষ্ট্রদূত বৈঠকে যোগদান করেন। এদিকে, প্রতিনিধি দলটির সৌজন্যে আজ রবিবার নৈশভোজের আয়োজন করেছে বিজিএমইএ। ওই সময় জিএসপি নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া প্রতিনিধি দলটি সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক, ট্রেড ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, দ্য এ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি, দ্য এ্যাকর্ড ফর ফায়ার এ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলদেশ ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সাক্ষাত করবে। এছাড়াও ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ সেক্টর ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তাদের। একই সঙ্গে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করবে প্রতিনিধি দলটি। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মোঃ শহিদুল্লাহ আজিম জনকণ্ঠকে বলেন, জিএসপি নিয়ে সফররত প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে আলোচনা হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি এবং শ্রম অধিকার রক্ষায় বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। আমাদের অগ্রগতি দেখে তারা সন্তুষ্ট প্রকাশ করবেন। আশা করছি বাংলাদেশের জন্য আবার জিএসপি পুনর্বহাল হবে। সূত্রমতে, এতদিন শ্রম আইন থাকলেও আইনটির বিধিমালা ছিল না। যার কারণে শ্রম আইনের বাস্তব প্রয়োগ ছিল না। তবে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স) স্থগিত করা হলে বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়টি সামনে চলে আসে। জিএসপি পুনর্বহালের জন্যই বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধিত), ২০১৩’ পাস হয়। জিএসপির শর্ত হিসেবে বাংলাদেশে শ্রম আইনের বাস্তব প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার।
×