ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রথম প্রয়াণবার্ষিকীতে পণ্ডিত রামকানাই দাশ স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

প্রথম প্রয়াণবার্ষিকীতে পণ্ডিত রামকানাই দাশ স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঙ্গীতের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা এক শিল্পী পণ্ডিত রামকানাই দাশ। আজন্ম জীবনজিজ্ঞাসা এ নিরন্তর পরিচর্যায় পরিভ্রমণ করেছেন সুরের ভুবনে। সেই সঙ্গে সূক্ষ্ম সঙ্গীতবোধের গুণে পৌঁছেছেন অনন্য উচ্চতায়। একইসঙ্গে গেয়েছেন লোকসঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। তিনি একাধারে ছিলেন খেয়াল গায়ক, লোকগানের শিল্পী, গুণী তবলাবাদক, উচ্চাঙ্গ ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিক্ষক, সঙ্গীত রচয়িতা, সুরকার, সংগ্রাহক ও সংগঠক। দেশে শুদ্ধ সঙ্গীতের বিকাশ ও প্রচারে নিরলস কাজ করেছেন আমৃত্যু। অনন্য অবদান রেখেছেন লুপ্তপ্রায় লোকসঙ্গীত সংগ্রহে এবং সেগুলোকে শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিতে। মহান এই সঙ্গীতসাধকের প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী ছিল ৫ সেপ্টেম্বর। এ উপলক্ষে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সঙ্গীতগুণীকে স্মরণ করা হলো শনিবার। শরতের বিকেলে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে রামকানাই দাশ স্মৃতি পরিষদ। রামকানাই দাশকে নিবেদিত বিশিষ্টজনদের আলোচনা, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং তার রচিত ও সুরারোপিত গানের সুরে জানানো হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আলোচনায় অংশ নেন সঙ্গীতশিল্পী অনুপ ভট্টাচার্য। ‘লোকসংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গবেষক সুমনকুমার দাশ। বক্তব্য রাখেন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি কামাল লোহানী, সদস্য সচিব পিনুসেন দাশ ও আহ্বায়ক কাজী রওনাক হোসেন। আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সভাপতিত্ব করেন নিউইয়র্ক সঙ্গীত পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাবেরী দাশ। স্মরণে এ আয়োজনে গানের সুরে, অতিথিদের কথায় শিল্পীর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সবাই। বক্তারা বলেন, সঙ্গীতের প্রতি ভালবাসা, গুরুর প্রতি ভক্তি ছাড়া সঙ্গীত হয় না- এমনটাই বলেছিলেন প-িত রামকানাই দাশ। লুপ্তপ্রায় লোকসঙ্গীতকে পুনরুজ্জীবন দানে তার যে অবদান ছিল সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হবে প-িত রামকানাই দাশকে প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো। আলোচনা শেষে সুরের আশ্রয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় শিল্পীকে। এ আয়োজনে রামকানাই দাশকে নিয়ে একটি বিশেষ স্মরণিকাও প্রকাশিত হয়। এছাড়া স্মরণানুষ্ঠানের অংশ হিসেবে শুক্র ও শনিবার রামকানাই দাশের রচিত ও সুরারোপিত সঙ্গীতের ওপর দুই দিনের একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রাণের খেলায় ভাওয়াইয়া ও লালনের গান ॥ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত নিয়মিত সঙ্গীত আসর প্রাণের খেলা। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার সুরের মূর্ছনা বয়ে গেল ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে। শরতের সন্ধ্যায় মাটির গন্ধমাখা গানে শ্রোতাদের সিক্ত করলেন নবীন-প্রবীণ দুই শিল্পী। সুরের আশ্রয়ের নার-নারীর প্রেম ও বিচ্ছেদের যাতনা উঠে এলো ভাওয়াইয়া গানে। আর মানবতার দর্শনে পরমাত্মাকে পাওয়ার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত হলো মরমীসাধক লালন সাঁইয়ের গানে। এদিনের আসরে ভাওয়াইয়া গান শোনান অনুজ শিল্পী সফিউল আলম রাজা। অনবদ্য কণ্ঠের মায়াজালে লালনগীতি পরিবেশন করেন অগ্রজ বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন। সফিউল আলম রাজার গাওয়া ভাওয়াইয়া গানের সুরে সঙ্গীতানুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রথমেই তিনি পরিবেশন করেন কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের সুরারোপিত গান। কণ্ঠের ওঠা-নামায় শ্রোতাদের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে গেয়ে শোনান- ও মোর কালারে/ওপারে ছকিলাম বাড়ি...। দ্বিতীয় গানে নুরুল ইসলাম জাহিদের কথা ও সুরের আশ্রয় নেয় শিল্পী। গেয়ে শোনান- মনটায় মোর পিঠা খাবার চায়...। জাহিদের কথা ও সুরে পরিবেশিত তৃতীয় গানের শিরোনাম ছিল- ওরে ভাবের ছলে মজাইলেন মন। মোঃ কছিম উদ্দীনের কথা ভেসে আসে চতুর্থ গানে- তুই ক্যানে ডাকিলু নিশা রাইতেরে মুরুগা...। শুরুর মতোই আব্বাস উদ্দীনের গান দিয়ে শেষ হয় রাজার পরিবেশনা। প্রিয়তমকে পাওয়ার আকুলতায় দরদী কণ্ঠে গীত হয়- ওকি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে/যেদিন গাড়িয়াল উজান যায় নারীর মন মোর ছুইরা রয় রে ...। ভাওয়াইয়া গানের সুর থামতেই সাধক লালন সাঁইয়ের বাণী ও সুর নিয়ে মঞ্চে আসেন ফরিদা পারভীন। আপন কণ্ঠশৈলীর মাধুর্যে শ্রোতাকে সিক্ত করে বরেণ্য এই লালন সঙ্গীত শিল্পী। প্রথমেই পরিবেশন করেন পাড়ে লয়ে যাও আমায়...। সুরের মায়াজাল বুনে এরপর শিল্পী গেয়ে শোনান আরো নয়টি গান। গানগুলোর শিরোনাম ছিল- বাড়ির কাছে আরশী নগর, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, সত্য বল সুপথে চল, বড় সঙ্কটে পড়িয়া দয়াল, মন সহজে কি সই হবা, জাত গেল জাত গেল বলে, তিন পাগলে হ’ল মেলা, মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার ও সময় গেলে সাধন হবে না। শংকরী মৃধার ভরতনাট্যম পরিবেশনা : শংকরী মৃধা ভারতের একজন শীর্ষস্থানীয় শাস্ত্রীয় ধারার নৃত্যশিল্পী। ভরতনাট্যমে তার হাতেখড়ি হয় ত্রিবেনী কলাক্ষেত্রে। সেখানে তিনি জয়ালক্ষ্মী এশওয়ারের কাছে তালিম নেন। এছাড়াও কলকাতার রাজদীপ ব্যানার্জী এবং ব্যাঙ্গালুরুর কীর্তি রামগোপালের কাছেও তিনি তালিম নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (আইজিসিসি) ভরতনাট্যমের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানের আইজিসিসি মিলনায়তনে ভরতনাট্যম পরিবেশন করলেন এই শিল্পী। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টার আয়োজনে ভরতনাট্যমের বেশ কয়েকটি আঙ্গিক উপস্থাপন করেন শংকরী মৃধা। শুরুতেই শিল্পী পরিবেশন করেন ‘নাটিসা কৌটুভাম’। এরপর তিনি একে একে পরিবেশন করেন ‘আধ্যাঞ্জলি’, ‘কৃর্ত্তানাম’, ‘ভারনাম’ ও ‘তিল্লানা’। মনোমুগ্ধকর এই নৃত্যসন্ধ্যায় অংশ নেন তার দুই সহকারী শিল্পী স্বর্ণালী কু-ু লিসা চ্যাটার্জী। কামরুজ্জামান কামুর লোক সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তি ॥ নব্বই দশকের কবি কামরুজ্জামান কামু। তিনি একাধারে কবি, গীতিকার ও ভিন্নধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা। এই কবি পেলেন সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘লোক’ প্রবর্তিত ‘লোক সাহিত্য পুরস্কার-২০১৪’। শনিবার বিকেলে কামুকে এই পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননা স্মারক ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়। পুরস্কার তুলে দেন বরেণ্য কবি নির্মলেন্দু গুণ। জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি কামাল চৌধুরী ও কবি আসাদ মান্নান। অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের এই পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীমের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘লোক’-এর সম্পাদক অনিকেত শামীম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক টোকন ঠাকুর, আহমাদ মোস্তফা কামাল, ইমতিয়াজ মাহমুদ ও বিধান সাহা। ‘এক্সিভিশন্স ইন মিউজিয়ামস্্’ ॥ আন্তর্জাতিক জাদুঘর পরিষদের (আইকম) বাংলাদেশ জাতীয় কমিটির উদ্যোগে শনিবার জাতীয় জাদুঘরে ‘এক্সিভিশন্স ইন মিউজিয়ামস্্’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের সভাপতি এম. আজিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাদুঘরের সচিব মোঃ রমজান আলী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাদুঘরের জাতিতত্ত্ব ও অলঙ্করণ শিল্পকলা বিভাগের সহকারী কিপার আসমা ফেরদৌসী। সভাপতিত্ব করেন আইকম বাংলাদেশ জাতীয় কমিটির চেয়ারপার্সন জাহাঙ্গীর হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম আজিজুর রহমান বলেন, জাদুঘর হলো সভ্যতার ইতিহাস ধরে রাখার স্থান। আমরা জাদুঘরে আমাদের গৌরবের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি। আধুনিক পদ্ধতিতে প্রদর্শনী উপস্থাপন ও বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে আমরা দর্শকদের নিকট নতুন নতুন নিদর্শনের তথ্য পৌঁছাতে পারি। এতে জাদুঘরের দর্শক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ‘এক্সিবিশন্স ইন মিউজিয়ামস্্’ বিষয়ক প্রবন্ধে আসমা ফেরদৌসী বলেন, প্রদর্শনীর মাধ্যমে জাদুঘর পেশাজীবীরা দর্শকদের নিকট আকর্ষণীয় নিদর্শন ও অনুষ্ঠানমালা উপস্থাপন করে। তিনি একটি আধুনিক প্রদর্শনী উপস্থাপনের বিভিন্ন কারিগরি দিক তুলে ধরেন। নাট্যকেন্দ্রের দুই নাটকের মঞ্চায়ন ॥ শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাট্যকেন্দ্র পরিবেশন করে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ‘গাধার হাট’ শিরোনামের দুটি নাটক। স্বল্পদর্ঘ্যরে নাটক দুটি পরপর মঞ্চস্থ হয়। নাটক দুটির রূপান্তর ও নির্দেশনায় ছিলেন তারিক আনাম খান। দুই মিসরীয় নাট্যকার আলফ্রেড ফারাগ ও তৌফিক আল হাকিম ‘দ্য ট্র্যাপ’ ও ‘দ্য ডাংকি মার্কেট’ নাটকের রূপান্তর করা হয়েছে। ‘দ্য ট্র্যাপ’-এর বাংলা রূপ ‘বন্দুকযুদ্ধ’ এবং ‘দ্য ডাংকি মার্কেট’-এর বাংলা রূপ ‘গাধার হাট’।
×