ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত লবণের দাম

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বাড়ছে চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত লবণের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানির ঈদে বাড়তি চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম থাকায় প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত লবণের দাম। পশুর চামড়া সংরক্ষণের অপরিহার্য উপাদান লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত সময় মতো না নেয়ায় এবারে দাম স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ বছর লবণের উৎপাদন কম হলেও গত কয়েক বছরের বাড়তি লবণের মজুদ থাকায় কোন সঙ্কট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দেশের চামড়া শিল্পের প্রায় অর্ধেক কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয় কোরবানির মৌসুমে। আর কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে বেড়ে যায় চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত লবণের চাহিদাও। এ সুযোগে লবণের দামও বাড়িয়ে দেয় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। বিসিকের তথ্য মতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের লবণ মৌসুমে বৈরী আবহাওয়া আর চাষযোগ্য জমি কমে যাওয়ার কারণে ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৮২ হাজার টন। তবে এর আগের দুই বছরে উৎপাদন ছিল চাহিদার চেয়েও বেশি। এ বছর প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টন ঘাটতির বিপরীতে সরকার ১ লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন কোরবানির আগে আমদানি করা লবণ বাজারে আসবে না। তবে আগের দুবছরের বাড়তি প্রায় ৩ লাখ টন লবণ মজুদ থাকায় কোরবানি ঈদের চাহিদা মোকাবেলায় কোন সঙ্কট সৃষ্টি হবে না বলে দাবি এই কর্মকর্তার। এ প্রসঙ্গে বিসিকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘অতিরিক্ত লবণ মজুদের বিরুদ্ধে আমাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে।’ চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাতে সারাবছর প্রায় ৬০ হাজার টন লবণ দরকার হয়। যার মধ্যে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টন ব্যবহার হয় কোরবানির মৌসুমে। বৃষ্টিতে ফুল চাষীদের ক্ষতি ১০ কোটি টাকা স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালিতে চাষীরা তাদের জমিতে ফসলের পরিবর্তে ফুলের আবাদ করে থাকেন। বছরের ১০ মাসজুড়ে তারা বিভিন্ন ধরনের ফুল উৎপাদন করেন। কৃষি বিভাগের হিসাবমতে ওই অঞ্চলে বছরে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয়ে থাকে। শুধুমাত্র গদখালিতে বছরে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করেন চাষীরা। ফুল বিক্রির টাকায় তাদের জীবনযাপন করতে হয়। কিন্তু গত দুই মাসের টানা ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে চাষীদের ফুলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে গদখালির চাষীদের প্রায় ১০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। এর আগের বছরে দেশে টানা হরতাল আর অবরোধে তাদের আয়ের উৎস প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ঝিকরগাছার গদখালির সৈয়দপাড়ার আতিয়ার গাজী জানান, এবার তিনি এক একর জমিতে গোলাপের আবাদ করেছিলেন। বৃষ্টিতে তার ক্ষেত পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। পটুয়াপাড়ার সাহেব আলী দেড় একর জমিতে আবাদ করেছিলেন গোলাপ আর গ্লাডিওলাস ফুল। তার বেশিরভাগ জমির ফুল পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে। যশোর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে যশোরে ৬৩৬ মিলিমিটার, আগস্টে ২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩১ আগস্ট ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গদখালি ফুল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, যশোর জেলায় সাড়ে চার হাজার কৃষক ফুল চাষ করেন। এরমধ্যে ঝিকরগাছা ও গদখালিতে রয়েছেন সাড়ে তিন হাজার ফুলচাষী। এসব ফুলের অর্ধেক পাঠানো হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। বাকি অর্ধেক যায় উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল এলাকায়। তবে গত দুই মাসের অবিরাম বর্ষণে তাদের অঞ্চলের সব ফুলচাষী কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষেতের মধ্যে পানি জমে ফুল পচে যাচ্ছে। এতে চাষীদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা। আবার ফুলের দরপতন হয়েছে। এখন বাজারে গোলাপ ফুল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা শ’। স্বাভাবিক সময়ে এই ফুল বিক্রি হতো ৩শ’ টাকা হারে। গাঁদা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি হাজার। আগে ছিল ৩ থেকে ৪শ’ টাকা। গ্লাডিউলাস ১০০ ফুল বিক্রি হচ্ছে ৫-৭শ’ টাকা। আগে ছিল দেড় হাজার টাকা। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি ও গদখালি ফুল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, গদখালির ফুলচাষীদের উৎপাদিত ফুল সংরক্ষণের জন্য সরকারের কৃষি বিভাগ ২০১২ সালে একটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে শর্ত ছিল কোল্ড স্টোরেজ তৈরির মোট টাকার শতকরা ২০ ভাগ কৃষকদের দিতে হবে। নিজেদের উপকারের কথা ভেবে সে শর্তেও রাজি হন চাষীরা। তবে গত তিন বছরে কৃষি বিভাগের লোকজন আর এলাকায় যাননি। এ বিষয়ে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক নাসির উদ্দিন জানান, যশোরে এক হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়ে থাকে। গত দুই মাস ধরে বৃষ্টির কারণে ফুলচাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
×