ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের মামলার কার্যক্রম চলবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের মামলার কার্যক্রম চলবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এবার ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারিতে ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের মামলার কার্যক্রম চলবে পুঁজিবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। এর আগে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) মোট নয়জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচার কার্যক্রম চার মাস স্থগিত করেছে উচ্চ আদালত। গত ৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি খালেকুজ্জামানের বেঞ্চ মামলাটির চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে এ আদেশ দেন। আর অভিযুক্তদের ওই আদেশের সার্টিফাইড কপি আগামী ১৯ অক্টোবর দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ভবনে অবস্থিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) হুমায়ুন কবীর বৃহস্পতিবার দুপুরে এ আদেশ দেন। জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) মোট নয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পরবর্তী বিচার কার্যক্রম ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলাটির চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন জানায় আসামিপক্ষ। ওই আবেদন বিবেচনা করে উচ্চ আদালত মামলাটি চার সপ্তাহ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই আদেশনামার একটি কপি ট্রাইব্যুনালে পেশ করে আসামিপক্ষ। তাই আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ওই আদেশের মূল সার্টিফাইড কপি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই মামলাটিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোঃ মজিবুর রহমান মামলা পরিচালনা করেন। একই সঙ্গে বিএসইসির পক্ষে প্যানেল আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মাসুদ রানা খান ও বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান। আসামিপক্ষের আইনজীবী মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার চার্জ গঠনের আদেশের প্রেক্ষিতে আমরা উচ্চ আদালতে আপীল করি। ওই আপীলটি মঞ্জুর করেছে উচ্চ আদালত। অর্থাৎ মামলাটি এখন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে না চলে উচ্চ আদালতে পরিচালিত হবে। যদি উচ্চ আদালতে তা ডিসচার্জ হয় তাহলে তা পুনরায় বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত হবে। আর গত ৯ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি খালেকুজ্জামানের বেঞ্চ মামলাটির চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে চার মাস স্থগিতাদেশ দেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের লক্ষ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনের জন্য তৈরি করা প্রসপেক্টাসে (কোম্পানির সারসংক্ষেপ) অসত্য তথ্য প্রকাশ করায় ২০০১ সালের ১৭ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস কোম্পানি আইন-১৯৯৩-এর অধীনে নিবন্ধিত জয়েন্ট ভেঞ্চারে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে পাঁচ কোটি টাকার পুঁজি সংগ্রহের জন্য প্রতিটি ১০০ টাকা করে মোট পাঁচ লাখ সাধারণ শেয়ার ছাড়ার জন্য প্রসপেক্টাস প্রকাশ করে। ওই প্রসপেক্টাসের তথ্যের ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আইপিওর অনুমোদন দেয়। তবে ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস ও ইস্যু ম্যানেজার ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ এ্যান্ড কনসালট্যান্ট লিমিটেড যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে মেশিনারিজের শেষ কনসাইনমেন্ট না আসার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও প্রসপেক্টাসে গোপন করে। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হন। এজন্য কোম্পানিটি ১৯৯৬-৯৭ থেকে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ দিতে পারেনি বলে দাবি করেছে বিএসইসি। পরবর্তী সময়ে বিএসইসি এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে ২০০০ সালের জুনে সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯-এর ২১ ধারা অনুযায়ী দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯-এর ১৭ ধারা লঙ্ঘন করেছেন এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় ২০০১ সালের ১৭ জানুয়ারি বিএসইসির উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান (আইন) মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন- ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুন্নেছা, হংকংভিত্তিক এসারানক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক এএ ভাসওয়ানি ও ফ্রাঙ্ককাই চেন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত স্টেকহোল্ডার (০৫৭) ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ এ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেডের পরিচালক খান মোহাম্মদ একরামুল্যা, শাহজাহান কবির, সৈয়দ শফিকুল হক, হাবিবুল ইসলাম হক ও মোস্তফা বিল্লাহ খান। তবে শুধুমাত্র একজন আসামি কামরুন্নেসা জামিনে আছেন। বাকিরা সবাই পলাতক রয়েছেন।
×