ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী আশ্রয়কেন্দ্র কেন

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জঙ্গী আশ্রয়কেন্দ্র কেন

জঙ্গীবাদের প্রসার ও বিস্তার যেভাবে ঘটেছে, গোপন পথে গোপনভাবে সংগঠিত ও প্রশিক্ষিত হচ্ছে, তরুণদের মোহাবিষ্ট করে তুলছে, তাতে বিশ্বজুড়েই এক ধরনের আতঙ্ক বিশ্ববাসীর মনোজগতে বিরাজ করছে। বিশ শতকের শেষে আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে যে সশস্ত্র জঙ্গীগ্রুপ প্রসার লাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং পাকিস্তানের সার্বিক সহযোগিতা ও সহায়তায়, তারই রেশ ধরে সৌদি বংশজাতদের অর্থ ও নেতৃত্বে আল কায়েদার উত্থান। এর পেছনেও মার্কিন মদদ ছিল সর্বার্থে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্ট আল কায়েদারাই মার্কিন টুইনটাওয়ার ধ্বংস করে বিশ্বের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। এদের সঙ্গে ধর্মের বিধিবিধানের কোন সম্পর্ক না থাকলেও ধর্মকে সামনে রেখে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী তৎপরতার বিস্তার ঘটায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। এরা আফ্রিকা ও এশিয়ায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। কিন্তু ধ্বংস আর মানুষ হত্যার পথ তাদের একই। যুক্তরাষ্ট্র, ইরাক, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে যারা তার মিত্র নয়, সেই দেশগুলো এবং ইসরাইলবিরোধী সেসব দেশের শাসকদের উৎখাতে সশস্ত্র হামলা চালায় ও দেশ দুটোকে তছনছ করে অনুগত সরকার বসিয়েও নিরঙ্কুশ ক্ষমতার পথ তৈরি করতে পারেনি। এসব রাষ্ট্রের মার্কিনবিরোধী ও সাবেক শাসকপন্থী সেনারা মিলে সশস্ত্র পন্থা বেছে নেয়। এদের সঙ্গে আরও অন্য দেশের উগ্রপন্থীদের সমন¦য়ে গড়ে ওঠে ইসলামিক স্টেট তথা আইএস নামক জঙ্গী সংগঠনটি। সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক ও তুরস্কের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে তারা বর্বর যুগের শাসন চালু করেছে। তাদের নৃশংসতায় শঙ্কিত ও ভীত হয়ে লাখ লাখ মানুষ শরণার্থী হিসেবে পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপে। এসব নিয়ে বিশ্বজুড়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত উঠে আসছে। ইউরোপ ভাবছে, শরণার্থীর আড়ালে আইএস জঙ্গীরা অভিবাসী হলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হবে। তাই শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে তারা অনাগ্রহী। বিস্ময়ের যে, যে ব্রিটেন জঙ্গীবাদবিরোধী কথাবার্তা বলে, সন্ত্রাস ও জঙ্গীপনা নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে, সেই ব্রিটেনই জঙ্গী ও মৌলবাদীদের ঘাঁটি। খোদ ব্রিটেন থেকে অনেক তরুণ-তরুণী আইএস নামক জঙ্গী সংগঠনে যোগ দিতে সিরিয়ায় যাচ্ছে, যা অভাবনীয়। ব্রিটেনে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদীরা অনেক দিন ধরেই আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীরা ব্রিটেনে ঠাঁই নেয়। গোলাম আযম লন্ডনে বসে বাংলাদেশবিরোধী যে তৎপরতা চালাত তা আজও বিদ্যমান শুধু নয়, ফুলে-ফেঁপে বিশালাকার ধারণ করেছে। লন্ডনে এখনও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদ- পাওয়া দুই অপরাধী নির্বিঘেœ বাংলাদেশবিরোধী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ জিহাদীরা বর্তমানে বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানে ভূমিকা রাখছে। তরুণদের তারা আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলছে। কিছু লোক স্থানীয়দের আন্তর্জাতিক জিহাদে উৎসাহ যোগাচ্ছে। জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোতে বাংলাদেশীদের সংখ্যা বাড়ছে। উগ্রবাদে অর্থায়নকারী গোষ্ঠী ও জঙ্গী সংগ্রহকারীরা ব্রিটেনে বাঙালী কমিউনিটি তরুণদের আইএসে যোগ দিতে প্ররোচনা দিচ্ছে। এভাবে জঙ্গীগোষ্ঠীতে বাংলাদেশীদের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের ব্লগার হত্যায় ঢাকা থেকে যে ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে সে বাংলাদেশের জঙ্গীদের অর্থের যোগানদাতা এবং দুই ব্লগার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। গত মাসে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ড্রোন হামলায় নিহত দুই আইএস সদস্য বাংলাদেশী বলে জানা গেছে। ব্রিটিশ সরকারের উচিত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পূর্ব লন্ডনে জামায়াতীদের যে ঘাঁটি রয়েছে তা বিপজ্জনক, এটাকে নিবৃত করা হচ্ছে না। তারা জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের টাকা সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের উত্থান ও এতে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিদের জঙ্গী তৎপরতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গার্ডিয়ান পত্রিকায় যে সাক্ষাতকার দেন, তাতে জঙ্গীবাদ দমনে ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেছেন। আমরাও আশা করি, মাঠপর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেবে। বিশ্ব থেকে জঙ্গীবাদ নির্মূলের কোন বিকল্প নেই। কারণ, তারা বিশ্বকে ধ্বংস করতে চায়।
×