ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্ধকোটি মানুষের স্বপ্ন অধরা

পূর্বাঞ্চলীয় বেড়িবাঁধ প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পূর্বাঞ্চলীয় বেড়িবাঁধ প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে

মীর আব্দুল আলীম রূপগঞ্জ ॥ এখন বর্ষা মৌসুম। চারদিকে পানি আর পানি। এ অবস্থায় ঢাকার পূর্বাঞ্চলের অর্ধকোটি জনগোষ্ঠী এখন পূতিগন্ধময় ময়লা পরিবেশে বসবাস করছে। ভারি বৃষ্টির কারণে বন্যাতঙ্কও মনে বাসা বেঁধেছে। গত ২৭ বছরেও রাজধানী ঢাকার পূর্বাঞ্চলীয় বেড়িবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের যত দুর্ভোগ। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহম্মদ এরশাদ পূর্বাঞ্চলের ১২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে বন্যার পানিবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য ওই প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। পূর্বাঞ্চলের সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ ডেমরা-টঙ্গী বেড়িবাঁধ ও পূর্ব বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের জন্য এখনো কোন দাতাসংস্থা পাওয়া যায়নি। প্রকল্পটি বর্তমানে ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে এর ব্যয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। পূর্বাঞ্চলের সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ ডেমরা-টঙ্গী বেড়িবাঁধ ও পূর্ব বাইপাস সড়ক নির্মাণের অগ্রগতি না হওয়াতেই ডেমরা , সবুজবাগ, খিলগাঁও, বাড্ডা খিলক্ষেত, টঙ্গী, বৃহত্তর উত্তরা ও রূপগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলের অর্ধকোটি জনগোষ্ঠী এ দুর্ভোগ-দুর্দশা। প্রতিবছর বর্ষা ও বন্যায় পূর্বাঞ্চলের অর্ধকোটি মানুষ পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করে। বিস্তীর্ণ এলাকায় নৌকা হয়ে উঠেছে একমাত্র বাহন। হাজার হাজার মানুষ হয়ে পড়ে বাস্তুহীন। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহম্মদ এরশাদ পূর্বাঞ্চলের ১২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে বন্যার পানিবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য ওই প্রকল্প হাতে নেয়। সে সময় সরকারের নিজস্ব তহবিল ছাড়াও বিশ্বব্যাংক এডিবি ও জাপান আর্থিক সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার করেছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার কোন অগ্রগতি হয়নি। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৪৭৫ কোটি ৮২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। জানা যায়, ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ শাসনামলে এ প্রকল্পের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি করে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালের ৫ নবেম্বর এ কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে ২০০৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সভাপতি করে গঠন করা হয় স্টিয়ারিং কমিটি। এ প্রকল্পে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরের ১০ কোটি, ২০০০-০১ অর্থবছরের ১০০ কোটি, ২০০১-০২ অর্থবছরের ৫০ কোটি এবং ২০০২-০৩ অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। প্রকল্পে ৭টি বাস্তবায়নকারী সংস্থা রয়েছে। রয়েছে ৭টি অংশও। জানা যায়, ২০০০ সালে এ প্রকল্পের কাজে সেনাবাহিনীর সহায়তাও নেয়া হয়েছিল। এ সময় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা বালু নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মাটি তুলে বাঁধ নির্মাণের কাজে হাত দেন। এরপর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য স্বল্পমেয়াদী কোন পরিকল্পনাও নেয়া হয়নি। এলাকার বাসিন্দারা তাদের এ বিপদ সাধারণ বাঁধ নির্মাণেরও দাবি করেছেন। এদিকে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান চিসুক আনোয়ার ঢাকা পূর্বাঞ্চল শহর ও বাঁধ প্রকল্প যাতে শুরু করা যায় তার জন্যও আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রকল্পটিতে সাহায্য করার ইচ্ছা ইনফ্রাস্ট্রাচারাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটি স্কোর এগিয়ে এসেছিল; কিন্তু তাদের মতো গত বিএনপি সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তাদের সঙ্গে কোন চুক্তি হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কমলাপুর, গুলশান, বনানী, ডেমরা, রূপগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার হাত থেকে মুক্তি পাবে। মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বাইপাস মাধ্যমে যমুনা সেতুর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারবে। বিভিন্ন সময় সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য প্রকল্প পরিদর্শন করেন। জাতীয় নির্বাচনের সময় সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ভোটার ও এলাকাবাসীকে ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। সরেজমিন দেখা যায় পূর্বাঞ্চলের মেরাদিয়া, ভূঁইয়াপাড়া, দাসের কান্দি, রড়াইলবাগ, সাঁতারকুল, বাইগদা, শেখের জায়গা, নামাপাড়া, রাজাখালী, নলছাঁটা, আজবস্বপুর, তাম্বুরাবাদ, পাইটি, ত্রিমোহনী, নন্দীপাড়া, আশকোনা, রূপগঞ্জের কায়েতপাড়াসহ আরও ৫০/৬০টি গ্রামে পুরো বর্ষা না আসতেই তলিয়ে যায় অথৈ পানির নিচে। বর্ষা ও বন্যার কয়েক মাস প্রায় অর্ধকোটি লোক মানবেতর জীবনযাপন করে। ড্রেনেজ স্যুয়ারেজ সব একাকার হয়ে যায়। বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন নৌকা হয়ে উঠেছে একমাত্র বাহন। ভোগান্তি ভোগ করে ডেমরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, বাড্ডা খিলক্ষেত, টঙ্গী, বৃহত্তর উত্তরা ও রূপগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলের অর্ধকোটি জনগোষ্ঠী। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর জানান, যেহেতু আমারও কিছু এলাকা এ বাঁধের ভেতরে পড়েছে তাই আমিও মনে প্রাণে চাই ডেমরা-টঙ্গী বেড়িবাঁধের কাজ অতিদ্রুত চালু হোক।
×