ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার ময়লা আবর্জনা দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঢাকার ময়লা আবর্জনা দিন দিন  অসহনীয় হয়ে উঠছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সম্প্রতি একদল বিদেশী নাগরিকের রাস্তা পরিষ্কার করার ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে বেশ আলোচনা চলছে। ঢাকা শহরের ময়লা-আবর্জনা নতুন কোন বিষয় নয়। কিন্তু দিন দিন পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাটে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখার পেছনে যেমন নাগরিকদের দায় রয়েছে, তেমনি দায়িত্বহীনতা রয়েছে নগর কর্তৃপক্ষেরও। কিন্তু এর জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সকলেই। মিরপুর থেকে ফার্মগেটের দিকে চলে যাওয়া রোকেয়া সরণি ধরে এগিয়ে চলছিল একটি ভ্যানরিক্সা, পেছনে পচে-গলে ওঠা রান্নাঘরের আবর্জনা উপচে পড়ছে। এই ভ্যানটির চালক শাহ আলম বলছেন, এগুলো বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা রান্নাঘরের আবর্জনা, তালতলা এলাকায় রাখা সিটি কর্পোরেশনের ময়লার কন্টেইনারে রাখা হবে এসব ময়লা। বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করার উদ্যোগ চলছে পাড়ায় পাড়ায়। কিন্তু তা কতটা কাজ করছে? তালতলায় গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়কের একটি লেন দখল করে আছে সিটি কর্পোরেশনের কয়েকটি ময়লার কন্টেইনার। আবর্জনা যতটা কন্টেইনারের ভেতরে বাইরে তার চাইতে বেশি। এর ঠিক পাশেই একদল যাত্রীর জটলা, কোনমতে নাক-মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। আর বাসগুলোও এসে থামছে ঠিক এখানেই। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানালেন, প্রতিদিন এখানকার ময়লার অসহনীয় দুর্গন্ধের মধ্যেই তাদের কর্মস্থলে যাবার যানবাহন ধরতে হয়। ফুটপাথে কিংবা সড়ক বিভাজনে পথশিশুদের মলমূত্র ত্যাগের দৃশ্য দেখেননি এমন মানুষ ঢাকায় খুব কমই আছেন। কারওয়ানবাজারের একটি ফুটপাথে মূত্র ত্যাগের পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে, সেখানকার দেয়ালেও আরবী ভাষায় নিষেধাজ্ঞা লিখেছিল সরকার। ধারণা ছিল আরবী ভাষা দেখলে হয়ত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অধ্যুষিত এই দেশের নাগরিকরা মূত্রত্যাগ করবেন না। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা গেল আরবী নিষেধাজ্ঞাটি যথাস্থানেই আছে এবং তার সামনেই এত মানুষ মূত্রত্যাগ করেছে যে, তা গড়িয়ে রাস্তায় এসে জমা হচ্ছে। ফার্মগেট এলাকায় একটি ফুটপাথের মধ্যে দিয়েই বয়ে যাচ্ছে ড্রেনের দুর্গন্ধময় দূষিত পানি, পথচলতি মানুষ নাক চেপে কোনমতে জায়গাটি পাশ কাটাচ্ছেন। তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরের দেয়াল ঘেঁষা কয়েকটি দোকান, দোকানগুলোর ঠিক সামনেই মূল সড়কে আবর্জনা জড়ো করে রাখা। জানতে চাইলে এক দোকানী জানালেন, সিটি কর্পোরেশনের ময়লা সংগ্রহকারীরা এসে নিয়ে যাবেন এজন্য সড়কের পাশেই ময়লা জড়ো করে রেখেছেন তিনি। একটা ব্যাপার স্পষ্ট নাগরিকরা, নিজের ঘরবাড়ি, রান্নাঘর কিংবা দোকানের সামনেটা নিয়ে যতটা ভাবছেন, শহরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ততটা ভাবছেন না। নগর কর্তৃপক্ষও যে খুব একটা উদ্যোগী, তা তাদের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে না। এ অবস্থার প্রতিকার কি, জানতে চাইলে ঢাকার পরিবেশ আন্দোলনকারী সংগঠন গ্রিন সেভারসের সভাপতি আহসান রনি বলেন, ‘দুই কোটি বা দেড় কোটি মানুষের শহরকে কোন নিয়মে আবদ্ধ করে পরিষ্কার রাখা যাবে না। এজন্য নাগরিকদের স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগ নিতে হবে’।
×