ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জটিলতা কাটাতে সরকারের উদ্যোগ

শর্তসাপেক্ষে খুলেছে ভারতে পাটের বাজার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শর্তসাপেক্ষে খুলেছে ভারতে পাটের বাজার

কাওসার রহমান ॥ সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপের কারণে শর্তসাপেক্ষে ভারতে বাংলাদেশী পাট ও পাট পণ্যের বাজার আবার খুলেছে। তবে শর্তের কারণে নতুন করে পাট ও পাট পণ্য রফতানি করতে গেলে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হবে। এই দীর্ঘসূত্রতা হলো ভারতে নতুন করে বাংলাদেশ থেকে পাট পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিটি চুক্তির জন্য সেদেশের জুট কাউন্সিল থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেশন’ বা প্রত্যায়নপত্র গ্রহণ করতে হবে। যা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট ও পাট পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করবে। এই জটিলতা নিরসনে বৃহস্পতিবার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভারতে পাট ও পাট পণ্য রফতানির জটিলতা নিরসের বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পাট ও পাট পণ্য রফতানিতে দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের জন্য ভারতের জুট কাউন্সিলকে চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হবে। জানা যায়, ভারতের জুট কমিশন থেকে সর্বশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর জারি করা অপর এক প্রজ্ঞাপনে ১০ সেপ্টেম্বরের আগে চুক্তি করা পাট ও পাটপণ্য কোন প্রকাশ শর্ত ছাড়াই ভারতে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে ১০ সেপ্টেম্বরের পর চুক্তিকৃত পাট ও পাট পণ্য ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভারতের জুট কমিশন থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে। এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর দেশটির পাট কমিশন থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ থেকে প্রতি চালান পাট আমদানির আগে কমিশন থেকে এনওসি (অনুমতিপত্র) নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ভারতে আমদানি করা পাট দিয়ে বস্তা তৈরি করা যাবে না। ভারতের জুট কমিশনের প্রজ্ঞাপনের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। বেনাপোল স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে শতাধিক পাট বোঝাই ট্রাক। খুলনার দৌলতপুর মোকামে পাট কেনাবেচা বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার পাট মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ভারতে পাট রফতানির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পাট ও পাট পণ্য রফতানির শর্ত শিথিল করায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হবে। সেই সঙ্গে নতুন চুক্তিকৃত পাট ও পাট পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এনওসি নেয়ার বিধান শিথিল করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ভারতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। এছাড়া জুট প্যাকেজিং এ্যাক্ট বাস্তবায়ন আরো জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বৈঠকে। এ বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার জন্য আগামী রবিবার পুনরায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এখন আর ভারতে পাট ও পাট পণ্য রফতানিতে বাধা নেই। তবে নতুন চুক্তি করে পাট ও পাট পণ্য রফতানি করতে হলে সেদেশের জুট কাউন্সিল থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে। এতে ভারতে পাট ও পাট পণ্য রফতানিতে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে শুধু আমাদের পাট রফতানিকারকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ভারতের আমদানিকারকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ভারতীয় আমদানিকারকরা টিটির মাধ্যমে এদেশ থেকে পাট কেনার জন্য আগাম অর্থ দিয়েছে।’ সরকারের পক্ষ থেকে এ জটিলতা নিরসনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে এই দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।’ উল্লেখ্য, ভারত সরকারের পাট মন্ত্রণালয় না থাকায় টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের জুট কমিশন সে দেশের পাট নিয়ন্ত্রণ করে। এর প্রধান কার্যালয় কলকাতার সল্টলেকে। বাংলাদেশ থেকে কয়েক বছর আগে বিভিন্ন দেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ বেল পাট রফতানি হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে চীন, পাকিস্তান ও ইউরোপ পাট আমদানি না করায় তা নেমে এসেছে ৮ থেকে ৯ লাখ বেলে। এর ৮০-৯০ ভাগই ভারতে রফতানি হয়, যা দিয়ে ভারতের জুটমিলগুলো বস্তা তৈরি করে থাকে।
×