ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে ঘরে ফেরা

বাস ও ট্রেনে ২৩/২৪ তারিখের টিকেটের চাহিদা বেশি

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বাস ও ট্রেনে ২৩/২৪ তারিখের টিকেটের চাহিদা বেশি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ট্রেনের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহে কমলাপুর রেল স্টেশনে তৃতীয় দিনেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে টিকেট হাতে পেয়েছেন অনেকেই। তারপর এক ঝলক হাসি। যেন সব কষ্টই দূরে ঠেলে দিতে সময় লাগেনি। কারণ ঘরে ফেরা নিশ্চিত। তবে যারা একটু বিলম্বে টিকেট সংগ্রহে এসেছিলেন তাদের অনেকে ফিরেছেন খালি হাতে। এদিকে টিকেট কালোবাজারী ঠেকাতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবারও ২৭ টিকেট ও নগদ অর্থসহ ছয় জনকে আটক করা হয়েছে। বিআরটিসি বাসের টিকেট থাকলেও যাত্রী নেই। দ্বিতীয় দিনেও আশানুরূপ টিকেট বিক্রি হয়নি সরকারী এই পরিবহন সংস্থাটির। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেবার মান ভাল না হওয়ায় যাত্রী টানতে ব্যর্থ হচ্ছে বিআরটিসি। বিআরটিসি বাসের টিকেট আছে যাত্রী নেই ॥ সেবার মান উন্নত না হওয়ায় এবারও বিআরটিসি ঈদ সার্ভিসের জন্য অগ্রিম টিকেট সংগ্রহে যাত্রী নেই। বলতে গেলে কাউন্টারগুলোতে খাঁ-খাঁ অবস্থা বিরাজ করছে। গত দুই দিনে ২০ ভাগ অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়নি। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি করে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির কর্তকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের হাতে এখনও পর্যাপ্ত টিকেট রয়েছে। ভাড়াও অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে কম। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্য ভাড়া আরও কম হওয়ার কথা জানান তারা। কর্মকর্তারা বলছেন, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বাস ভাড়া দেয়া হবে। একই এলাকার যাত্রী বেশি থাকলে সেক্ষেত্রে সকলের সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট তারিখে বাস কোম্পানির গেট থেকে যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাবে। রাজধানীর মতিঝিল বিআরটিসি বাস ডিপো থেকে দেয়া হচ্ছে নেত্রকোনা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, বেনাপোলসহ বিভিন্ন গন্তব্যের টিকেট। টিকেট বিক্রেতারা জানিয়েছেন, যাত্রীর চাপ একেবারে নেই বললেই চলে। এই ডিপোর ম্যানেজার নায়েব আলী জানান, ২৪ তারিখ পর্যন্ত টিকেট দেয়া হবে। যারা টার্মিনাল থেকে টিকেট সংগ্রহ করবেন তাদের জন্য ভাড়াও কম। তিনি জানান, রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া জেলার বাস ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটায় ডিপো থেকে ছেড়ে যাবে। টিকেট এখনও পর্যাপ্ত রয়েছে। যাত্রীরা ইচ্ছা করলে যাত্রার দিনও টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। তিনি জানান, অন্যান্য গন্তব্যের টিকেট বিক্রি কম হলেও বাস খালি যাবে না। কারণ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ তাদের মূল যাত্রী। গার্মেন্টসে ছুটির হলেই যাত্রী বাড়বে বিআরটিসির। কল্যাণপুর বিআরটিসি বাস ডিপো থেকে দেয়া হচ্ছে রাজশাহী, রংপুর, নওগার টিকেট। এসব রুটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমেটার ১ টাকা ৪৫ পয়সার সঙ্গে টোলচার্জ ও অন্য খরচ। এই হিসেবে রাজশাহীর ভাড়া ৪২০ টাকা, রংপুর ৫০০ টাকা এবং নওগাঁ ৪২০ টাকা। বুধবার থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এ কাউন্টারে রাজশাহীর দ্বিতল বাসের টিকেট বিক্রি হয়েছে ৭৫টির মধ্যে ৩৩, নওগার ৪৯ এবং রংপুরের ৫২টি। সবই ২৩ সিপ্টেম্বরের টিকেট। টিকেট বিক্রি প্রসঙ্গে কাউন্টার মাস্টার আমিনুল ইসলাম জানান, আমাদের সবই দ্বিতল বাস সার্ভিস। যাত্রী সকল শ্রেণীর লোক। এদের মধ্যে বেশিরভাগই পাওয়া যায় গার্মেন্টস কর্মী। তাই গার্মেন্টসের বেতন বোনাস এবং ছুটি শুরু হলেই টিকেট বিক্রি বাড়বে। কমলাপুরে টিকেট কালোবাজারী আতঙ্ক ॥ তৃতীয় দিনেও দিনভর কমলাপুরে টিকেট কালোবাজারী আতঙ্ক বিরাজ করছিল। সিটিটিভির ফুটেজ ও সন্দেহজনক চলাফেরায় দুই দিনে একাধিক টিম কালোবাজারী সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। ফলে টিকেট প্রত্যাশীদের মুখে মুখে ছিল এই আলোচনা। অনেকেই টিকেট পাবেন কিনা এমন কথাও বলছিলেন বার বার। স্টেশন এলাকা থেকে টিকেট কালোবাজারী চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৩ এর একটি দল। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টিকেট ও দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পরিচালিত অভিযানে তাদের আটক করা হয়। র‌্যাব ৩-এর অপরারেশন অফিসার এএসপি ইয়াসিন আরাফাত এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির শুরুর দিন থেকেই আমাদের অভিযান অব্যাহত ছিল। টিকেট বিক্রির পুরো সময়টা আমরা অভিযান পরিচালনা করব। অভিযানের অংশ হিসেবে টিকেট কালোবাজারী চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৭টি অবিক্রীত টিকেট এবং টিকেট বিক্রির দুই লাখ তিন হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দোষ স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শনিবার শেষ হবে অগ্রিম টিকেট বিক্রি। রেল নিরাপত্তা ॥ বার বার ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে রেলপথে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে পবা। এতে বলা হয়, রেলের মোট দুর্ঘটনার শতকরা ৬৩ ভাগ লাইনচ্যুতি এবং ১৭ ভাগ লেভেল ক্রসিংজনিত। এসব দুর্ঘটনা বাস্তবে দুর্ঘটনা নয়। রেল কর্তৃপক্ষের দুর্বল ব্যবস্থাপনা, গাফিলতি, অবহেলা ও উদাসীনতা, রেললাইন সর্বক্ষণিক মনিটর ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অসতর্কতার অভাবে এসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পবা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, রেলপথের প্রায় সবই অরক্ষিত। প্রতিনিয়ত ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেন দুর্ঘটনার ধরন প্রধানত লাইনচ্যুতি, লেভেল ক্রসিং, ইঞ্জিন বিকল, সিগন্যাল অমান্য করা। ঘন ঘন ট্রেন লাইনচ্যুতির ফলে একদিকে হতাহতের ঘটনা ঘটছে, অপরদিকে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এর প্রধান কারণ, রেলপথ পাহারা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ওয়েম্যান নেই এবং যারা আছেন তারাও নিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। এছাড়া জনবলের অভাব, রেললাইন নিয়মিত মেরামত না করা, ইঞ্জিন ও বগি যথাযথভাবে মেরামত না করা, মেরামত কারখানায় দক্ষ জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব এবং রেল কর্মকর্তাদের গাফিলতি ট্রেন লাইনচ্যুতির কারণ। এতে বলা হয়, একটি ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল যেখানে বিশ বছর এবং বগির আয়ুষ্কাল ত্রিশ বছর সেখানে ৫০ বছরের পুরনো ইঞ্জিনও চলছে। ৬৫ শতাংশ ইঞ্জিন এবং ৪৫ বগির আয়ুষ্কাল অতিক্রান্ত। রেলের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে মোট ২ হাজার ৫৪১টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪১৩টির অনুমোদন আছে, ১ হাজার ১২৮টির অনুমোদন নেই এবং মাত্র ৩০০টিতে প্রহরী রয়েছে। লেভেলক্রসিংয়ে তিন বছরে ৮৭৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থেকেছে। ট্রেনের সময়সূচী ভেঙ্গে পড়ার অন্যতম কারণ এই দুর্ঘটনাও। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধের আলোকে বক্তব্য তুলে ধরেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক এবং পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান। সংবাদ সম্মেলনে পবার পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশও করা হয়। এগুলো হলো আসন্ন কোরবানি ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে রেললাইন সর্বক্ষণিক মনিটর করা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, যাত্রার আগে লোকোমটিভ ও যাত্রী কোচ ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, সিগনাল কার্যকর রাখা ও তা মেনে ট্রেন পরিচালনা করা, নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে ট্রেন না চালানো, সাবধানতার সঙ্গে ট্রেন চালানো যেন হঠাৎ ব্রেক কষতে না হয়, লেভেলক্রসিংয়ে সাময়িকভাবে স্থানীয়দের দৈনিকভিত্তিক প্রহরী নিয়োগ দেয়া; রেললাইন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা, রেলওয়ের লোকবল বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।
×