ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যাচ্ছেন

এমডিজি সাফল্যের ধারায় এসডিজি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এমডিজি সাফল্যের ধারায় এসডিজি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঙ্গীকার ঘোষণা করবেন। এছাড়া সেখানে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, এ বছরই জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি সময়ের বিবেচনায় চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হবে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ধারাবাহিকতায় এবছর একগুচ্ছ নতুন, যুগান্তকারী ও উচ্চাভিলাষী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ( এসডিজি) চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হবে। মধ্যপ্রাচ্যে আইএসসহ বিশ্বব্যাপী সহিংস জঙ্গী তৎপরতার উত্থান এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে লাখ লাখ বিদেশে আশ্রয়প্রত্যাশীদের সমস্যা সমাধানের বিষয়গুলো এবারের অধিবেশনে বিশেষ গুরুত্ব পাবে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় জাতিসংঘের অব্যাহত প্রাসঙ্গিকতা এবং নিরাপত্তা পরিষদসহ সংস্থাটির সামগ্রিক সংস্কারের বিষয়টি এবারের অধিবেশনের আলোচনায় নিঃসন্দেহে একটি নতুন মাত্রা পাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সাধারণ বিতর্কের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছেÑ ‘৭০তম জাতিসংঘ অধিবেশন : নতুন প্রতিশ্রুতির জন্য কার্যক্রম’। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর এবারের সাধারণ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে আগামী ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবারের অধিবেশনের মূল আয়োজন জাতিসংঘ ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। একে কেন্দ্র করে উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনের পুরোটা সময়জুড়েই অসংখ্য নীতি নির্ধারণী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে ৬০ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সেখানে তিনি ১ অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০০০ সালে সহস্রাব্দ ঘোষণাপত্র বা সহস্রাব্দ ঘোষণা অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থেকেই প্রধানমন্ত্রী ৮টি লক্ষ্যমাত্রা সংবলিত সহস্রাব্দ ঘোষণাপত্রে সে সময় স্বাক্ষর করেন। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তিনি এ লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালায় অঙ্গীভূত করার সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্য দিয়ে সরকারের সঙ্গে নাগরিক সমাজ, এনজিও, গণমাধ্যম ও উন্নয়ন সহযোগীদের যে বলিষ্ঠ অংশীদারিত্বের সূচনা হয়, তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ এমডিজি বাস্তবায়নে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে একটি বিরল নজির স্থাপন করেছে। গত সাড়ে ছয় বছরে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এ উন্নয়নের চাকা আরও বেগবান হয়েছে। আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, বুধবার পরিকল্পনা কমিশনের উদ্যোগে বাংলাদেশের যে এমডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের দিকগুলো ও একই সঙ্গে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। আপনাদের অবগতির জন্য এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সাফল্যের কথা আমি তুলে ধরতে চাই। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূলে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির কারণে নব্বই দশকের শুরুতে যে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ, বর্তমানে তা ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন শীর্ষক প্লেনারি অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলো তুলে ধরবেন। এমডিজি অর্জনের সাফল্যের ধারায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করবেন তিনি। রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সরকার ইতোমধ্যে যে কার্যক্রম শুরু করেছে, সে বিষয়েও তিনি আলোকপাত করবেন এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরবেন। একই সামিটের অংশ হিসেবে ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতি শীর্ষক একটি সংলাপে যৌথ সভাপতিত্ব করবেন। এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের অন্যতম সরকার প্রধান হিসেবে তাকে এ বৈঠকে যৌথ-সভাপতিত্ব করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। ২৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্যোগে শান্তিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রীকে যৌথ সভাপতিত্ব করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি ছাড়াও জাতিসংঘ মহাসচিব এ অনুষ্ঠানে যৌথ-সভাপতিত্ব করবেন বলে কথা রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অবস্থানের প্রেক্ষিতে এসব কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেশকিছু অঙ্গীকার করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের আমন্ত্রণে নারীর সমতা ও ক্ষমতায়ন শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এ বৈঠকে তিনি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন, নারী শিক্ষার প্রসার, নারী ও কন্যাশিশুদের অধিকার সুরক্ষা এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে বক্তব্য দেবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্যোগে আয়োজিত আইএসের জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য ‘এমডিজি থেকে এসডিজি : বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ বৈঠকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের বাইরে প্রধানমন্ত্রী ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নেতৃত্ব ফোরামে বিষয়ে বক্তব্য দেবেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা বিষয়ে মতবিনিময় করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশ থেকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল যোগ দেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দুটি পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন ॥ এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ইউএনইপি তাকে এ বিশেষ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কিত শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী দিনে একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। এর পাশাপাশি, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নির্মাণে যুগান্তকারী উদ্যোগের জন্য অন্য একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে আইটিইউ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হবে। এবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন।
×