ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মহাকালের ‘নীলাখ্যান’ নাটক মঞ্চায়ন কাল

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মহাকালের ‘নীলাখ্যান’ নাটক মঞ্চায়ন কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন প্রযোজনা ‘নীলাখ্যান’ নাটকের তৃতীয় মঞ্চায়ন হতে যাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। দল সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকটির তৃতীয় মঞ্চায়ন হবে। ‘নীলাখ্যান’ নাটকটি মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ৩৬তম প্রযোজনা। নাটকটি নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। দ্রোহ ও প্রেমের কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ গল্প আশ্রয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনন জামান রচিত নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. ইউসুফ হাসান অর্ক। মানব প্রেমের অমর উপাখ্যান ‘নীলাখ্যান’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন পলি বিশ্বাস, মনামী ইসলাম কনক, লিঠু ম-ল, জেরিন তাসনীম এশা, কোনাল আলী চৈতী সাথী, তনু ঘোষ, মামুনুর রশীদ, আমিনুল আশরাফ, আসাদুজ্জামান রাফিন, মোহাম্মদ আহাদ, শিবলী সরকার, শাহরিয়ার হোসেন পলিন, ইয়াছির আরাফাত, তৌহিদুর রহমান শিশির, ইকবাল চৌধুরী, জাহিদুল কামাল চৌধুরী দিপু, মোঃ শাহনেওয়াজ এবং মীর জাহিদ হাসান। নাটকের নেপথ্য শিল্পীরা হলেন মঞ্চ পরিকল্পনায় ইউসুফ হাসান অর্ক, আলোক পরিকল্পনায় ঠান্ডু রায়হান, সুর ও সঙ্গীতে ইউসুফ হাসান অর্ক, আবহসঙ্গীত ইউসুফ হাসান অর্ক, পোশাক পরিকল্পনায় ড. সোমা মুমতাজ, কোরিওগ্রাফি জেরিন তাসনিম এশা, প্রপস পরিকল্পনা ও নির্মাণ হাসনাত রিপন, রূপসজ্জায় শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, মঞ্চ ব্যবস্থাপক জাহিদ কামাল চৌধুরী এবং প্রযোজনা অধিকর্তা মীর জাহিদ হাসান। নাটকের কাহিনীতে দেখা যাবে বেদিয়ার সর্দার জহরের বিষ জয় সাধনায় মনসা কর্তৃক কাম নিষিদ্ধ বলে- তার ভাষে আভাসে প্রত্যাখ্যাত ভালবাসার মানুষ বিন্তী রানী আত্মহত্যা করে আড়ালি বিলে রাশি রাশি শাদা শাপলার বনে। বেদিয়া বহরে বেড়ে ওঠা সাপে কাটা মান্দাস ভাসা বালিকা চন্দনের চুলের আড়ে বিন্তীর সুরভী পায় জহর। নারী নিষিদ্ধ বলে এ বালিকা বেড়ে উঠছিল বালকের বেশে। যাকে সন্তান করেছিল জ্ঞান- ঋতুমতি হয়ে ওঠার পর তার প্রতি প্রবল রতি অনুভব করে জহর। বেদিয়া দলে তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বিচিত্রমুখী সঙ্কট। চন্দনের যুবা সাজে তাকে প্রেম নিবেদন করে মৌটুসী আর চন্দন ঠোঁটে মালতী ফুলের লাল ডলে ঝুমরোর সামনে দাঁড়ায়। বেদিয়াদের উৎসবে চন্দনের নারীত্ব উন্মোচন হলে দলের অতিপ্রাকৃত বৃদ্ধ ঘন্টাবুড়ো বেদিয়া দল ও জহরকে তিনটি অনিবার্য ভবিতব্যের ঘোষণা দেয় ভবিতব্যের তিন রূপ কহি- যে ভাতের পাতিল নেবার জন্য জলে ডুবেছে বিন্তী তা অন্যরে দিতে চেয়ে পতিত হবি তুই। অথবা তোর আচরে বিন্তীর অনুগামী হবে চন্দনে। আর যদি না হয় তা- তবে আছে তৃতীয়জন- তার হবে মৃত্যু। মৃত্যু অনিবার্য- তবে তা কার হবে- তোর কার্যকরণ হবে স্থির। সামগ্রিক দৃশ্যকাব্যে ক্ষণে ক্ষণে তিনটি ভবিতব্য ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল হয়ে উঠে। যাকে পিতা মানে তাকে পতি মেনে নিতে পারে না চন্দন। ঝুমরোর জন্য জহরের ঝাঁপিতে আছে দাঁত না ভাঙা পোষা সাপ। শাওনের অখ- চাঁদের সাঁঝ বেলায় আকাশজুড়ে যেন মনসার নীল মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে। জহরের অন্তরে তখন বাজে চন্দন চেয়েছিল গাঢ় নীল রঙের ফতুয়া। সে ক্ষণে একশ’ তম সাপের দংশন নেবে জহর মন্ময় নীলের দোলাচলে সে চিত্রল ফণায় টোকা দিয়ে সাপটিকে ক্রোধমত্ত করে তোলে। নাটকটি প্রসঙ্গে নাট্যকার আনন জামান বলেন, শব্দে সুরে ভাবের বিত্ত বৈভব বিনির্মাণে বাংলা সাহিত্যে কী সঙ্গীতের ঐশ্বর্য কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সুরে আসরে তার গান আর কাব্যগুলো এক আকাশ শূন্যতার বেদনা মন্থিত নির্যাস। সাঁঝকালি আন্ধার রাতে শিমূল মোস্তফার কাব্যকণ্ঠে কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে লেখা তার বেদনা বিধুর চিঠির শব্দপাঠ মনে হয়েছিল তার কবিভাব আর কাব্যপম শব্দপুচ্ছ যদি শাদা কুয়াশা হতো- তা যদি স্পর্শ করা যেত- তবে তা নখে মাখিয়ে ভাব এবং আবেগের প্রকাশ শিখতাম। হে দ্রোহের পুরোহিত- অভাজনের দোষ নেবেন না- আপনার ‘সাপুড়ে’ গল্প পাঠের পর বেদিয়া জহর-ই আমার কাছে যা কিছু বেদনা বলবার- বলেছিল- আপনার চরিত্রের ভাবকথা আমি অনুলিপি করেছি মাত্র। সাপুড়ে গল্পের বেদিয়াদের ঝাঁপির ভেতর যা ছিল গোপন- সেই ঝাঁপি খুলে গোপন উন্মোচনের চেষ্টায় এ নবতর নাট্য আয়োজন। ঘুম অথবা জাগরণের ভেতর ভুবন থেকে মনসা বলেছিল অখ- চাঁদের সাঁঝক্ষণে যদি একশ সাপের দংশন শরীরে নেয় আর কাম রাখে আপন শরীরে বন্ধক তবে বিষ বশ করতে পারবে জহর। একটি সাপের বিষ বুকে সয়ে- জহর হত হয় কাম আর প্রেমের দংশনে। ‘নীলাখ্যান’ নাট্য জহরের পরাণ আর চৈতন্যের গোপন পাত্রের রতি আর আরতির নাট্য। নাটকের নির্দেশক ইউসুফ হাসান অর্ক বলেন, কথা কাহিনীটির প্রেক্ষাপট বেদে বহর হলেও কবি নজরুল এর অন্তস্রোতে এমন একটি সার্বজনীন বীজ ভাসিয়ে দিয়েছেন যা স্পষ্টতই গোটা মানবকুলের সর্বকালকে ছুঁয়ে যায়। অনতিক্রম্যদুর্মর আকাক্সক্ষা আর বিরাট প্রকৃতির তুলনায় মানুষের অসহায়ত্ব তাই কবিকে এমন প্রেমাখ্যান লিখতে কলম ধরায়। কবি আর নাট্যকার তাদের মন্ময়তায়-তন্ময়তায় যে জগৎ রচনা করেন তার থেকেও ভিন্ন কোন ভাষা অনুসন্ধান করতে হলে বাংলা নাট্যের সঙ্গীতের ঐতিহ্যের দ্বারস্থ হতেই হয়। কেননা সেখানেই অনেক কথা না বলেও বলা হয়ে যায়। ‘নীলাখ্যান’ প্রযোজনাতেও সেই প্রয়াস রয়েছে। শব্দ-সুরের শক্তিতে প্রেম আর মানুষের অসহায়ত্বের মনকথা বলবার জন্যই অভিনেতা-চরিত্রেরা অনেকটা গীতলভাবে তাদেরকে প্রকাশ করে।
×