ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফিফা বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবল, হারলেও অস্ট্রেলিয়া-জর্দানের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত নৈপুণ্য উপহার দিয়েছেন মামুনুলরা;###;শামিমুল ইসলাম শোভন

‘দুই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তিই বেশি’

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

‘দুই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তিই বেশি’

ক’দিন আগে অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় ফুটবল দলের জয়োৎসব নাড়িয়ে দিয়েছিল সমালোচকদেরও। দর্শকের আগ্রহ আর ক্ষুদে ফুটবলারদের পারফর্মেন্স, দুইয়ে মিলিয়ে নব্বইয়ের সোনালি অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু জাতীয় দলের খেলা এই আনন্দকে কিছুটা হলেও ম্লান করেছে। এতে ফের শুরু হয়েছে সমালোচনা। অন্যদিকে, অধিনায়ক অভিমান করে দর্শকদের খোলা চিঠি পাঠাচ্ছেন। বলছেন, ফুটবল খেলাটাই যেন তাদের পাপ। তার সঙ্গে রয়েছে কোচের বিদায় একই সঙ্গে নতুন কোচের আগমন নিয়েও চলছে হিসাব-নিকাশ। অধিনায়কের চিঠির প্রসঙ্গ বাদ দিলে বাংলাদেশ ফুটবলের এ ধরনের চিত্র খুব একটা নতুন নয়। দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী খেলা, ফেডারেশনের উপর কোচ আর দর্শকের অভিমান; এর মধ্যে দিয়েও ভাল মন্দের মধ্যেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের ফুটবল। সর্বশেষ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৫-০ গোলে হার এবং ঘরের মাটিতে জর্দানের বিপক্ষে ৪-০ তে হার। আপাতদৃষ্টিতে মনেই হতে পারে বাংলাদেশ খুব বাজেভাবে হেরেছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ২২ মিনিটে চার গোল হজম করলেও, বাকি সময়ে গোলও হয়েছে মাত্র একটি। তাই এই ম্যাচেও প্রাপ্তি ছিল. আছে অর্জন। আর জর্দানের ম্যাচে তিন-চারটি সুযোগ তৈরি করাটা ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। একই কথা বলছেন সাবেক ফুটবলাররাও। তবে বাংলাদেশ ফুটবলের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন তারা। সাবেক ফুটবলার, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের মতে, এই মুহূর্তে জাতীয় দল যেভাবে পারফর্ম করছে তাতে কখনই বাংলাদেশের ফুটবল কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব না। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে সাবেক কোচ ডি ক্রুইফের অধীনে বাংলাদেশ ফুটবল দল বেশকিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে দিয়ে আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দল কিংবা বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলার চেয়ে মানসিকতা বা লড়াই করার যে মানসিকতা সেটা খেলোয়াড়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে। তবে আমাদের খেলোয়াড়দের প্রতিশ্রুতি, অফিসিয়ালদের আচরণ এবং পেশাদারিত্বের অভাবের দ্রুত এগোতে পারছি না। কোচ প্রসঙ্গে তার অভিমত, ‘এসব থেকে বের হয়ে আসতে সবার আগে কোচের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে হবে। অন্তত তিন থেকে পাঁচ বছর সময় দিতে হবে কোচকে। কারণ, রাতারাতি কোন ভাল ফলাফল আসবে না।’আশা করাও ঠিক নয়। এদিকে আমিনুল মাত্র চুক্তি শেষ হওয়া কোচের প্রশংসা করলেও, আরেক সাবেক তারকা ফুটবলার বিপ্লব ভট্টাচার্য একমত নন। তিনি ডি ক্রুইফের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, ‘একজন কোচ কিভাবে ম্যাচের একদিন আগে বলেন, তিনি ছেলেদের অনুশীলন করাবেন না, তাও আবার বিদেশের মাটিতে!’ তিনি যোগ করেন, ‘কোচ যদি পেশাদার হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাকে পেশাদারি আচরণ করতে হবে। ডি ক্রুইফ প্রায়ই নিজের দেশে ছুটিতে চলে যেতেন নিয়ম ভঙ্গ করে। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। প্রশ্ন উঠতে পারে, লিগের খেলা চলে। তারপরও, সপ্তাহে কি অন্তত একদিন হলেও জাতীয় দল নিয়ে তিনি বসতে পারতেন না? বয়সভিত্তিক দলগুলো তো ছিল।’ নতুন কোচ ফ্যাবিও লোপেজের ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ঘুরে ফিরে আবারো অস্ট্রেলিয়া ও জর্দান ম্যাচ প্রসঙ্গ। সাবেক দুই গোলরক্ষকও মনে করছেন ইতিবাচক ফুটবল খেলছেন মামুনুলরা। আমিনুলের মতে, অস্ট্রেলিয়া ও জর্দানের সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবলের আকাশ-পাতাল পার্থক্য- এই বাস্তবতাটা মেনে নিতেই হবে। তিনি বলেন, ‘দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের প্রাপ্তিই বেশি। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, জর্দানের বিপক্ষে আমরা বেশকিছু সুযোগ পেয়েছি। যদিও তা কাজে লাগাতে পারিনি। তবে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সুযোগ তৈরিটাও কৃতিত্বের। মোদ্দাকথা কথা এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচগুলোতে তা কাজে লাগাতে পারব আমাদের ফুটবলাররা।’ ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ গোল খেয়েছি, জর্দানের বিপক্ষে চার গোল খেয়েছি সেটা বড় করে না দেখে বরং ফুটবলার ও অফিসিয়ালদের মধ্যে কিভাবে পেশাদারিত্ব আনা যায়, সে বিষয়ে বেশি জোর দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি’, যোগ করেন তিনি। এদিকে বিপ্লব ভট্টাচার্যে মনে করছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনেক খারাপ খেলেছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড় কথা, এই দলের বিপক্ষে মামুনুলদের পায়ে বল ছিলই না। ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমরা অনেক খারাপ করেছি। অনেকদিন আমরা এত বাজে খেলিনি। কিন্তু জর্দানের ম্যাচটিতে আমরা বেশকিছু সুযোগ পেয়েছিলাম। গোল করতে পারিনি, তবে আমরা ভাল ফুটবল খেলেছি।’ সবকিছুর পরেও সবাই বাংলাদেশ ফুটবলের উন্নতি চান। দলকে আরও এগিয়ে নিতে চান। এক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সঙ্গে ফেডারেশন ও কোচেরও দায় রয়েছে বলে মনে করছেন সাবেকরা। বিপ্লব বললেন, ‘এমন খেলোয়াড় জাতীয় দলের ম্যাচে মাঠে নামানো উচিত নয়, যিনি লিগের ম্যাচে ডাগআউটে বসে থাকেন। যতদিন পারফর্মেন্সের চেয়ে সংশ্লিষ্টদের পছন্দের ফুটবলারকে মাঠে নামানো বন্ধ না হবে ততদিন ভাল কিছু করা সম্ভব নয়।’ একই সঙ্গে তিনি বেশি বেশি ম্যাচ খেলার বিষয়ে মতামত দেন। বিপ্লব পরামর্শ, ভারত পাকিস্তান ছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের মতো দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে। প্রয়োজনে এসব দলগুলো নিয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে। এদিকে, অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে বাজেভাবে হারের পর দর্শকদের উদ্দেশ্যে নিজের অভিমানের কথা বলেন অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। তার মতে, ফুটবল খেলাটাই তাদের পাপ। এমনকি তাদের সেলফি তোলা নিয়েও টিপ্পনি কাটা হয়েছে। এসব বিষয়েও নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে আমিনুল হক মনে করছেন, একজন পেশাদার ফুটবলারের কাছ থেকে কখনই এমনটা আশা করা যায় না। ‘এভাবে বলে নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন মামুনুল। এটা না করে যদি তিনি সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীর কাছে তাদের ভুল ও সমালোচনা নিয়ে ক্ষমা চাইতেন এবং ভবিষ্যতে তিনি এবং তার দল এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন, সেটা বেশি প্রভাবিত হতো।’ ফুটবল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলবেই। এর মধ্যে দিয়েই এগোতে হবে বলে মনে করছেন দু’জনে। তবে দর্শকরাই সবচেয়ে বড় বিচারক এবং সমর্থক। তাদের চাহিদা থাকবে, খেলোয়াড়দেরও বুঝতে হবে সেগুলো। কারণ, বাংলাদেশে এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার নাম ফুটবল। এদেশের মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে ফুটবল।
×