ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি);###;অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ আজ

কথা রাখেনি দাতারা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কথা রাখেনি দাতারা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ শেষ হচ্ছে সহাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) মেয়াদ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য থাকলেও দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থছাড় না করায় এর বেশকিছু লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিবছর ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক সহায়তা প্রয়োজন। তবে বিভিন্ন দাতা দেশ ও উন্নয়ন সংস্থার ছাড় করা বৈদেশিক সহায়তা মাত্র দেড়শ’ কোটি ডলারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এজন্য এমডিজির ৪১টি নির্দেশকের মধ্যে ২১টি অর্জন করা সম্ভব হলেও ২০টি থাকছে অপূর্ণ। তবে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এর স্বীকৃতিও মিলেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার প্রকাশ হচ্ছে এমডিজির অগ্রগতি প্রতিবেদন। রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বিশেষ অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অগ্রগতির বিষয়টি উপস্থাপন করবেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। এ বিষয়ে ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কসহ বেশ কয়েকটি ছোট দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেও বড় দেশগুলো পাশ কাটিয়ে গেছে। এজন্য এমডিজির পর এসডিজির যে এজেন্ডা থাকবে সেখানে আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারলে বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেছি। যাতে করে সরাসরি অর্থ সহায়তা দিতে না পারলেও বড় দেশগুলো অন্যভাবে সহায়তা দিতে পারে। তিনি জানান, সহশ্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ শিশুমৃত্যু হার হ্রাসকরণে অর্জিত লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ পদক লাভ করেছে। মহিলা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের স্বীকৃতি স্বরূপ ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক সাউথ-সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। ইউএন ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বিষয়ক সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহের ১নং লক্ষ্য অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ ডিপ্লোমা এ্যাওয়ার্ড শীর্ষক পুরস্কারে ভূষিত করেছে এবং জাতিসংঘের সর্বশেষ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ পুনরায় সাউথ-সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হয়। সূত্র জানায়, অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেও আটটি লক্ষ্যের মধ্যে সাতটিতেই এসেছে সফলতা। এগুলো হচ্ছে দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্যের গভীরতা কমানো, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন, জেন্ডার সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, শিশু মৃত্যু কমানো, মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি/এইড এবং অন্যান্য রোগব্যাধি দমন এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ। তবে খারাপ অবস্থায় রয়েছে সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদনে আটটি বৃহৎ লক্ষ্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নির্মূলে প্রশংসনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। গত কয়েক বছর যাবত দেশ নিয়মিতভাবেই ৬ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। যা দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির কারণে ১৯৯১-৯২ সালের ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। গত দশকের চেয়ে বর্তমান দশকে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল দ্রুততর। সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০০০-২০১০ মেয়াদে গড়ে প্রতিবছর দারিদ্র্য কমেছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে, যদিও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একই সময়ে প্রয়োজন ছিল গড়ে প্রতিবছর ১ দশমিক ২০ শতাংশ হারে দারিদ্র্য হ্রাস। ২০১৫ সালের মাথাগুনতি দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে। বাংলাদেশ ২০১০ সালেই দারিদ্র্য ও চরম চারিদ্র্যের গভীরতা কমানো শীর্ষক অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্যের গভীরতার (ক্ষিপ্রতা) ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ শতাংশ, এই হার নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে। যে হারে দারিদ্র্য কমছে এতে প্রাক্কলিত হিসেবে ২০১২ সালেই বাংলাদেশ ভিত্তি বছরের তুলনায় দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ক্ষুধা নিরসনেও বাংলাদেশ ভাল অগ্রগতি সাধন করেছে। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রয়েছে অবাক করা সাফল্য। শিক্ষায় ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার (প্রাথমিক শিক্ষায় নিট ভর্তি হার ৯৭.৭ শতাংশ, বালকদের ক্ষেত্রে এই হার ৯৬.৬ ও বালিকাদের ক্ষেত্রে ৯৮.৮ শতাংশ), ঝড়ে পড়ার হার কমানো, শিক্ষা চক্র সমাপ্তির ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন এবং প্রাথমিক শিক্ষায় গুনগত মান বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি কারণে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ১৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার শিক্ষার হার ১৯৯০ সালে ছিল ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ, সেটি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই জেন্ডার সমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়ন শীর্ষক লক্ষ্যটি অর্জন করেছে। অর্থাৎ প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ডিপিই এর তথ্য ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলে ও মেয়ের অনুপাত ১.০৩ যা ১৯৯০ সালে ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ৮। মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এ হার ১৯৯০ সালের শূন্য দশমিক ৫২ থেকে বেড়ে ২০১৪ সালে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশে। একই সূত্র মতে, এ সময়ের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এ হার শূন্য দশমিক ৩৭ থেকে বেড়ে হয়েছে শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ (অর্থাৎ ১০০ ছাত্রের বিপরীতে ৬৭ জন ছাত্রী)।
×