ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় আয়কর দিবস পালন;###;আজ থেকে সপ্তাহব্যাপী সারাদেশে আয়কর মেলা

ষোলো কোটি মানুষের দেশে কর দেয় এক শতাংশ ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ষোলো কোটি মানুষের দেশে কর দেয় এক শতাংশ ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘সুখী স্বদেশ গড়তে ভাই, আয়করের বিকল্প নাই’-সেøাগান সামনে রেখে সারাদেশে পালিত হয়েছে জাতীয় আয়কর দিবস-২০১৫। আজ বুধবার থেকে সাতটি বিভাগীয় শহর, সকল জেলা এবং প্রথমবারের মতো ৮৬টি উপজেলায় (১৬-২২) সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে সেগুন বাগিচার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাঠে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দিবস ও র‌্যালির উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর খোলা জিপে করে র‌্যালিতে অংশ নেন তিনি। এছাড়া রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে মঙ্গলবার জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে সর্বোচ্চ ও দীর্ঘমেয়াদী করদাতাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করে অর্থমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে করদাতার সংখ্যা ৪০ লাখে উন্নীত করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১ শতাংশ লোকও কর দেয় না। মাত্র ১১ লাখ মানুষ কর দেয়। জাতি হিসেবে এটা লজ্জাকর। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে এই করদাতার সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশে অর্থাৎ ৪০ লাখে উন্নীত করা হবে। এটা বড় উল্লম্ফন, উচ্চাভিলাসী। তবে এটা কিভাবে করা হবে তা আমার চিন্তায় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশ। অনেক অনুন্নত দেশের কর-জিডিপি অনুপাত আরও বেশি। এটা লজ্জার বিষয়। এটা থেকে উত্তরণ পেতে হবে। মুহিত বলেন, কর দেয় ব্যবসায়ীরা এবং সেই কর আদায় করে কর কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন। কর না দিলে রাষ্ট্র চলবে না। দেশের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হবে না। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে সঠিকভাবে কর আদায় করা হয় না, চাপাচাপি করা হয়। এ অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। ভবিষ্যতে কর কর্মকর্তারা যাতে চাপাচাপি না করে তার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, পার্শ্ববর্তী অনেক গরিব দেশেও আমাদের চেয়ে বেশি মানুষ কর দেন। এমনকি নেপালের কর অবস্থা আমাদের মতো নয়, তাদের অনেক বেশি মানুষ কর দেন। তিনি বলেন, ৩০ বছর আগে রাজস্ব আদায় ছিল জাতীয় আয়ের ৮ শতাংশ। সেটা টেনে আজকে ১১ শতাংশ হয়েছে। আগামীতে টার্গেট ১৪ শতাংশ। আর এটা কী করে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায় সেটাই এখন আমার চিন্তা। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ। স্বাগত বক্তব্য দেন কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। কর দিবসের র‌্যালিতে তারকারা ॥ আয়কর দিবসের র‌্যালিটি এনবিআরের সামনে থেকে মৎস্য ভবন, সুপ্রীমকোর্ট, জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে আবার এনবিআর প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি কর দিবসের র‌্যালিতে অংশ নেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানসহ বোর্ড সদস্য ও বিভিন্ন কর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া র‌্যালিতে জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়, নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিকসহ আরও অনেকে অংশ নেন। র‌্যালিতে আয়কর দিবসের সেøাগান সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার বোর্ড নিয়ে বিভিন্ন কর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। এছাড়া র‌্যালিকে দৃষ্টিনন্দন করতে অংশগ্রহণকারীরা আয়কর সেøাগান সংবলিত টি-শার্ট, ক্যাপ ও ছাতা ব্যবহার করেন। এছাড়া র‌্যালিতে আয়কর সচেতনতা বাড়াতে বাউল গান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, ঘোড়ার গাড়ি, আনসার-ভিডিপি’র বাদক দল অংশ নেন। ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরেও জাতীয় আয়কর দিবসের বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও আয়করে সচেতনতা তৈরিতে মোবাইল এসএমএস দেয়া হয়েছে। আয়কর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও র‌্যালিতে অংশ নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, মুস্তাফিজুর রহমান, আতাহার আলী প্রমুখ। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আইয়ুব বাচ্চু, ফেরদৌস আরা, নিশিতা বড়ুয়া, কুমার বিশ্বজিৎ, রফিকুল ইসলাম, আবিদা সুলতান ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক, কথা সাহিত্যিক ও নাট্যকার ইমদাদুল হক মিলন, কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক, চঞ্চল চৌধুরী, শহিদুজ্জামান সেলিম, ফারুক আহমেদ, শাহানুর দেবী শানু, বাঁধন প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া জাতীয় আয়কর দিবসে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ কর দেয়ায় ৩৬০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে। দুপুরে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় পর্যায়ে ২০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান, ঢাকা সিটি ও ঢাকা বিভাগের ৩ ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠানকে আয়কর সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
×