ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মধ্যরাতে টিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইন

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মধ্যরাতে টিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরু হলো টিকেট যুদ্ধ। মঙ্গলবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ দেয়া হবে ২১ সেপ্টেম্বরের টিকেট। উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ বাসের টিকেট বিক্রি শেষ। রাজধানীর চারটি টার্মিনাল থেকে আজ থেকে বিক্রি শুরু হবে বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জানিয়েছেন, রেলের টিকেট কালোবাজারি রোধে নেয়া হয়েছে কার্যকর ব্যবস্থা। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঈদে সড়ক মহাসড়কের কোথাও রাস্তার কারণে যানজট হবে না। নিরাপদ যাতায়াতসহ সার্বিক ঈদ ব্যবস্থাপনার জন্য সারাদেশে ২৫টি মনিটরিং টিম গঠন করেছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে বিআরটিএ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য খোলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু ॥ রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ঈদের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার প্রথম দিনে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে টিকেট-প্রত্যাশীদের চিরাচরিত সেই ভিড়। সোনার হরিণ টিকেট সংগ্রহে অনেকে সোমবার মধ্যরাত থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোগান্তি এড়াতে প্রতিটি কাউন্টারের লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের নাম, মোবাইল নম্বরসহ নিজেরাই তালিকা করেছেন। ভিডিও গেম, গল্প, তাসখেলায় কাটিয়েছেন রাতজাগা মানুষ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন পড়ে গেলেও টিকেট বিক্রি শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে। প্রথম দিন দেয়া হয় ২০ সেপ্টেম্বরের টিকেট। একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পেরেছেন। রাতভর কষ্ট শেষে যারা টিকেট পেয়েছেন তাদের প্রত্যেকে হাসিমুখে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। প্রতিবছরের মতোই এবারও কিছু মানুষের টিকেট কালোবাজারির অভিযোগ ছিল। তবে কেউই অভিযোগের প্রমাণ দিতে পারেনি। দিনভর র‌্যাব ক্যাম্পেও এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ জমা হয়নি। রাজধানীর বিমানবন্দর রেল স্টেশন ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে একযোগে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও সিলেটে অগ্রিম টিকেট দেয়া হয়। টিকেট কালোবাজারি রোধে কমলাপুর রেল স্টেশনের পুরো এলাকা সিটিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ, আনসার মোতায়েন করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে ছিল গোটা এলাকা। ২০টি কাউন্টারে একযোগে টিকেট বিক্রি হয়। এরমধ্যে বেশকিছু কাউন্টারে দেয়া হয় চলতি টিকেটও। মহিলাদের জন্য ছিল পৃথক বুথের ব্যবস্থা। বেলা ১২টার মধ্যে বেশিরভাগ টিকেট কাউন্টার ফাঁকা হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টারা জানিয়েছেন, ২২-২৪ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিদর্শক মুজিবুর রহমান জানান, মেইল ট্রেন ও এলাকাভিত্তিক ট্রেনের জন্য আলাদা সারি করে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। সবাই সকাল ৬টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাতে যারা এসেছেন তাদের টোকেন দেয়া হয়েছে। সেই টোকেন নিয়ে অনেকে সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ধানম-ি থেকে দিনাজপুরের টিকেট কিনতে আসা মিথিলা জানান, সকাল ছয়টায় তারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ১১টার দিকে টিকেট পেয়েছেন। তিনি চারটি টিকেট সংগ্রহ করার কথা জানান। টিকেট পেলেও বিক্রিতে ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের যাত্রী মনিরা। তিনি বলেন, মহিলাদের জন্য বুথের সংখ্যা কম। অন্যদিকে ধীরগতিতে টিকেট দেয়ায় গরমে সবারই কমবেশি ভোগান্তি হয়েছে। ম্যধ রাতে দাঁড়িয়ে সকাল ১০টার মধ্যে টিকেট পেয়েছেন সিলেটের যাত্রী মাহিন। তিনি জানান, রাতভর ভোগান্তি হলেও টিকেট পেয়ে ভাল লাগছে। তাই হাসিমুখে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে টিকেট কাটতে এসেছিলেন, কাদির, মোহন, শরীফসহ অনেকে। তারা সবাই টিকেট পেয়েছেন। তবে কেউ কেউ এসি কামড়ার টিকেট না পেয়ে কিছুটা মনঃক্ষুণœ। আজ বুধবার বিক্রি হবে ২১ সেপ্টেম্বরের যাত্রার টিকেট। ১৭, ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে ২২, ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকেট পাওয়া যাবে। ঈদের পর রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকেও ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকেট পাওয়া যাবে। ২৩, ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর পাওয়া যাবে যথাক্রমে ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবরের টিকেট। ঈদের আগে ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর তিন দিন ও ঈদের পরে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সাত দিন পাঁচ জোড়া ‘ স্পেশাল’ ট্রেন চলবে। আর ঈদের দিন শোলাকিয়ায় যাওয়া-আসা করবে দুটি বিশেষ ট্রেন। স্পেশাল’ ট্রেনগুলোর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, চাঁদপুর স্পেশাল ১ ও ২ চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, পার্বতীপুর স্পেশাল ঢাকা-পার্বতীপুর এবং খুলনা স্পেশাল ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচল করবে। প্রতিবছরের মতো এবারও কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের ১৪ হাজারের বেশি টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে ২৫ ভাগ টিকেট অনলাইনে। পাঁচ ভাগ ভিআইপি কোটায় ও আরও পাঁচ ভাগ রেলওয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ। বাকি ৬৫ ভাগ টিকেট উন্মুক্ত। যা কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে। টিকেট কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা- মুজিবুল হক ॥ ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। স্বাভাবিক সময়ে সর্বোচ্চ এক লাখ ৯০ হাজার যাত্রী পরিবহন করলেও কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে আড়াই লাখ যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ‘প্রস্তুত’ বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী মুজিবুল হক। ঈদের আগাম টিকেট বিক্রির প্রথম দিন মঙ্গলবার কমলাপুর রেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রেলের সম্পদ সীমিত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই সীমিত সম্পদ দিয়েই সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার কাজ চলছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুরে এসে টিকেট বিক্রির পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন রেলমন্ত্রী। তিনি জানান, ঈদের তিন দিন আগে থেকে স্পেশাল ট্রেন চালু হবে, যা ঈদের পরেও সাত দিন চলবে। যাত্রীদের যাওয়া-আসা নির্বিঘœ করতে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলের পাশাপাশি বাতিল করা হয়েছে রেলসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছুটি। বর্তমানে চালু ৮৮৬টি কোচের সঙ্গে আরও ১৩৮টি কোচ মেরামত করে ঈদ সেবায় যোগ করা হবে। আর ১৯২টি চালু ইঞ্জিনের সঙ্গে যোগ দেবে নতুন ২৫টি ইঞ্জিন। মন্ত্রী বলেন, আগামী বছর ঈদ-উল-ফিতরের আগেই রেলে ২৭০টি নতুন কোচ যুক্ত হবে। এর মধ্যে ১২০টি আসবে ভারত থেকে। এডিবির অর্থায়নে ইন্দোনেশিয়া থেকে আসবে বাকি ১৫০টি কোচ। নতুন ৭০টি ইঞ্জিন কেনার জন্য টেন্ডার হয়েছে জানিয়ে মুজিবুল হক বলেন, নতুন ইঞ্জিন ও কোচ পেলে সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। মন্ত্রী বলেন, যাত্রী হয়রানি রোধে নেয়া হয়েছে কার্যকর পদক্ষেপ। অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি থেকে শুরু করে টার্মিনাল কেন্দ্রিক সকল অপরাধ ঠেকাতে প্রশাসন কাজ করবে। কোন অবস্থাতেই রেলের টিকেট কালোবাজারিদের হাতে যাবে না। রাস্তার কারণে কোথাও যানজট হবে না- সড়ক মন্ত্রী ॥ এবারের ঈদেও রাস্তার কারণে দেশের সড়ক-মহাসড়কের কোথাও যানজট হবে না বলে দাবি করেছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও আসন্ন ঈদ-উল- আযহা উপলক্ষে যাত্রীদের বাড়ি ফেরা নির্বিঘœ করতে রাজধানীর প্রধান ৪টি বাস টার্মিনালে থাকছে ভিজিলেন্স টিম। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী-মালামাল বহন, যাত্রী হয়রানি রোধে কাজ করবেন এ টিমের সদস্যরা। মঙ্গলবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব তথ্য জানান। কাদের বলেন, বিআরটিএ, ডিএমপি, সিটি করপোরেশন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এ টিমে থাকছেন। টার্মিনালগুলোতে ব্যানার ঘেরা একটি নির্দিষ্ট কক্ষ থেকে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তিনি জানান, ঈদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সারাদেশে ২৫টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। দুই বিভাগে এসব টিম কাজ করবে। ঢাকা প্রবেশ ও বহির্গমনের জন্য দুটি বিকল্প সড়ক চালুর কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর একটি- হাতিরঝিল-রামপুরা-শেখের জায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা-সুলতানা কামাল সেতু। অপরটি মিরপুর বাজার-ধৌউর-বিরুলিয়া-আশুলিয়া। ছোট ছোট যানবাহনের মালিকদের বিকল্প এ সড়ক দুটি ব্যবহারের অনুরোধ জানান মন্ত্রী। আজ ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিআরটিসি’র সকল ডিপো থেকে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরুর কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঈদে বিআরটিসি’র মোট ১ হাজার ৪৩টি গাড়ি সারাদেশে চলবে। অতিরিক্তি ৫০২টি গাড়ি ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে এবং আরও ৬১টি গাড়ি রিজার্ভ থাকবে। এছাড়া ২২-২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ দিন এলেনবাড়িতে বিআরটিএর’র সদর দফতরে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর-০২-৯১৩০৬৬২ ও মোবাইল-০১৯৬৬৬২২০১৯। মন্ত্রী জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে আগামী ২২ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর মোট ৯ দিন সিএনজি স্টেশনগুলো সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঈদের আগে ও পরের তিন দিন মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান, লরিসহ ট্রাক চলবে না। তবে চামড়া, জ্বালানি, অষুধসহ নিত্যপণ্য এর আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কের সকল টোল প্লাজা সার্বক্ষণিক খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। যানজট রোধে চন্দ্রায় ১৭ তারিখ বাইলাইন উদ্বোধন ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে দুর্ঘটনা রোধে নিউজার্মি ব্যারিয়ার উদ্বোধন করা হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার পরিবহন ও লক্কর ঝক্কর বাস ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×